ইংরেজি বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর। বাংলাদেশীদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের মাস। কারণ ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস একটি ঐতিহাসিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের কাছ থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশীরা। এতো সহজে এই মুক্তি আসেনি ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা এসেছে। অনেক মা-বোন আত্যাচারিত ও নির্যাতিত হয়েছে পাক বাহিনীর হাতে। নাম পাক হলেও কাজগুলো ছিলো সব নাপাক।
আমি অত্যন্ত গর্বের সাথে বলছি আমিও এই স্বাধীনতার মাসেই জন্য গ্রহণ করেছিলাম। ৪ ডিসেম্বর আমার জন্মতারিখ। আমার কপাল অন্যদিক দিয়ে মন্দ হলেও আমি আমার জন্মের মাস নিয়ে সত্যিই গর্বিত। কারণ আমিও মাতৃগর্ভে দীর্ঘ ১০ মাস ১০ দিন এক অদেখা যুদ্ধ করে পৃথিবীর বুকে স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশীদের জন্য সত্যিই গর্বের মাস। আমরা অনেকেই অনেক সময় রাগের মাথায় দেশকে গালিগালাজ করে থাকি কিন্তু যে যাই বলি না কেন দিন শেষে আমাদের পরিচয় কী? বাংলাদেশী, জ্বী হ্যাঁ আমরা যাই বলি না কেনো যতই ঘৃণার চোখে দেশকে দেখি না কেনো দেশ আমাদের কখনো ঘৃণা করে না মায়ের মতো করে আগলে রাখে আমাদের তার আঁচল তলে। আমরা যেমন আমাদের মাকে ভালোবাসি ঠিক তেমন করে দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশে কোন অনৈতিক কাজ হলে এটা দেশের দোষ না এটা এদেশের ভিতর অবস্থানরত মুনাফিক কাফিরদের কাজ।
দেশকে ভালোবাসার কথা প্রত্যেকটা ধর্মেই কমবেশি আছে। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমান মক্কা বাসি কাফেরগণের জ্বালা যন্ত্রনায়ই মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করেন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ত্যাগ করার সময় মক্কার শেষসীমানায় এসে পবিত্র মক্কা নগরীর দিকে অত্যন্ত মায়ার নজরে তাকিয়ে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, " হে আমার জন্মভূমি আমার দেশের লোকরা যদি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করতো তাহলে আমি কখনোই তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। " এই দ্বারা আমি উচিত কিছু শেখা। দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। দেশপ্রেমহীন লোকের ইমান কখনোই সম্পূর্ণ নয়। তাই দেশে প্রতি শ্রদ্ধা ও মায়া থাকা আমাদের সকলেরই একটি দায়িত্ব। দেশের শত্রুকে দৃষ্টান্ত শাস্তি দিতে হবে যাতে পরবর্তীতে কেউ দেশের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজগুলো করার আগে হাজার বার ভাবে সেই কাজে পরিনাম সম্পর্কে।
এই স্বাধীনতা দিবসে আপনি একটা ওয়াদা নিজের কাছে করুন যে, দেশকে কখনো গালি দেবো না। কথাটা শুনে হয়তো মনে হচ্ছে এবার এমন কী কঠিন কাজ? আচ্ছা ধরলাম এটা সহজ কাজই কিন্তু পারলে করে দেখান কারণ ধরুন বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের ম্যাচ হচ্ছে জিম্বাবুয়ের সাথে কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম ম্যাচটা হেরে গেলো তখন অনেক লোক আছে যারা বলে, হা*র বাংলাদেশরে জিম্বাবুয়ের সাথে হারে অথবা বাংলাদেশ না ভাঙ্গাদেশ ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখুন এখানে ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম যেখানে প্লেয়ার ছিলো ধরুন সাকিব, মুশফিক, মাসরাফি ও টিমের বাকিরা এখানে ক্রিকেট খেললো তারা কিন্তু গালি খেলো বাংলাদেশ!!! এ কেমন বিচার। তাহলে এখন কী সাকিব, মুশফিক, মাসরাফি তাদের গালি দেবো? না কখনোই না কারণ খেলার মধ্যে হার জিত আছেই তাই বলে হারলেই কাউকে গালি দিতে হবে এটা কোন কথা হতে পারে না। এখানে দোষটা আসলে আমাদেরই কারণ আমরা ছোটবেলা থেকেই হার জিনিসটাকে অতি লজ্জার ভাবি এবং খুবই বাজে চোখে দেখি যার ফলে এই দশা। মনে রাখতে হবে,,, " মানুষের মুখের কথাই তার পরিবার, বংশ, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে নির্দেশ করে। "
আসুন সবাইকে নিজ নিজ স্থান থেকে সত্যিকার অর্থে দেশকে ভালোবাসি দেখবেন একদিন ঠিকই আমাদের দেশ বদলাবে। শুধু মুখে বললেই হবে না যে আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি তা কাজেও ফুটিয়ে তুলতে হবে।
একটা মজার ব্যাপার হলো আমি যখন ছোট ছিলাম মানে এখনো ছোট কিন্তু যখন বয়স ৮-১০ বছর আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞাস করতো আমার জন্ম তারিখ কত? তখন আমি বলতাম ১৬ ডিসেম্বর কারণ ১৬ ডিসেম্বর বললেই বলতো, আহ! তুই কত লাকি বিজয় দিবসে তোর জন্ম। এটা শুনতে বেশ ভালোই লাগতো। আর মনে মনে ভাবতাম বিজয় দিবসে আমার জন্মদিন উপলক্ষে মনে হয় সব জাগয়ায় খিচুড়ি খাওয়ায় কিন্তু এখন দেখি পুরাই অন্যরকম
ও হ্যাঁ বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের মাঝে অনেকেই প্যাচ লাগিয়ে ফেলে। সেটা হলো তার ভাবে স্বাধীনতা দিবস মনে হয় ১৬ ডিসেম্বর আর বিজয় দিবস মনে হয় ২৬ শে মার্চ। কারণ ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয় তাই হয়তো ভাবে ১৬ ডিসেম্বরই স্বাধীনতা দিবস কিন্তু তা ভুল। অনেকে লজ্জার কারণে বিষয়টা জানতেও চায় না আর জানার জন্য মাথা ঘামায় না। মনে রাখুন,
• ১৬ ই ডিসেম্বর হলো বিজয় দিবস, এবং
• ২৬ শে মার্চ হলো মহান স্বাধীনতা দিবস
জানার কোন বয়স নেই না জানলে লজ্জা পাবেন শিখলে গর্ব করতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮