২০০৯ সাল। টুকটাক লেখা শুরু করেছি মাত্র। লিরিক। ২০০৬ সালে আমার প্রথম কোনো লেখা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। তখন থেকে, তারও আগে থেকে আসলে- আমি গান-লিরিক এসব জানতামনা বললেই চলে। বিশ্বাস করতেও অনেকের কষ্ট হবে- আমি মন দিয়ে শোনাই শুরু করেছি এসএসসির পর। এর আগে গান বিষয়টা খুবই বিরুক্তিকর লাগতো। হতে পারে বিটিভির সন্ধ্যাবেলার গানের অনুষ্ঠানগুলোর কারণে আমার ভেতরে এমন একটা অস্বাভাবিক বিষয় তৈরি হয়ে গিয়েছিলো!!
এসএসসির পর থেকে গান শোনা শুরু করি। বিষয়টি এমন নয় যে, গান শোনা শুরু করার জন্য আমি এসএসসি পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছিলাম! অর্ণবের কোনো একটা গান হঠাৎ শুনে অর্ণবের প্রেমে পড়ে যাই। আসলেই প্রেমে পড়ে যাই। তারপর বাপ্পা শুনতে শুরু করি। সাহানার গান শুনে রবীন্দ্র সংগীতের প্রতিও টান চলে আসে আমার। আস্তে আস্তে গানে ডুবতে থাকি... ডুবতেই থাকি...
গান লেখার নেশায় ধরলো রে...
ঠিক কী কারণে জানিনা- তবে খুব সম্ভবত গাইতে পারিনা বলেই লেখতে পারার একটা ইচ্ছা কাজ করতো আমার ভেতরে। ততোদিনে আমি বন্ধুমহলে মোটামুটি টাইপের ভালো একজন গল্পকার হয়ে গেছি। কলেজের দুই একটা প্রোগ্রামে আমার লেখা নাটকও মঞ্চস্থ হওয়া শেষ। এসবের কারণে "আমি তো লেখতে পারি" এমন একটা বিশ্বাস আমার ভেতরে বেশ দৃঢ়ই ছিলো।
দৃঢ় বিশ্বাসটা আকড়ে ধরেই লেখতে শুরু করলাম।
খুব বয়সী ছেলে তখন....
আসলে খুব বয়সী তখন। নিতান্তই বাচ্চা ছেলে। কলেজের একটা ছেলেকে "নিতান্তই বাচ্চা" মনে হয় লেখক-কবি ছাড়া কেউ বলতে পারেনা! গীতিকার জাহিদ আকবরের সাথে পরিচয় ২০০৬ কিংবা '৭ এর মাঝামাঝি সময়ে। উনার দুই একটা গান তখন মাত্র প্রকাশিত হয়েছে। খুব সম্ভবত আইয়ুব বাচ্চুর "জীবন" এলবামে, এবং আরো দুই একটা জায়গায়। আমি একদিন জাহিদ আকবর ভাইকে আমার লেখা কয়েকটা লিরিক দিলাম। উনি একটার একটু অংশ পড়ে হাসলেন। কেনো হাসলেন? তখন বুঝতে পারিনি। এখন যখন সেই সময়ের লিরিকগুলো পড়ি- আমি নিজে হেসেই তো খুন!
বাচ্চা ছেলে ছিলাম আসলেই!
ব্লগ এলো ব্লগো এলোরে...
২০০৮ এর জুন। কোন পত্রিকায় যেনো ব্লগব্লগ বলে একটা ফিচার পড়লাম। সেখানে বাংলা ব্লগ বলে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো- সচলায়তন, বৈঠকখানা আর সামহোয়্যারইন... কে। একদিন সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে সব ঘুরলাম। সচলায়তনকে খুব জটিল মনে হলো। বৈঠকখানাকে তার চেয়ে বেশি। সহজ লাগলো সামহোয়্যারইন... কে। কিভাবে কিভাবে যেনো কবিতার মতো কি যেনো একটা লেখেও ফেললাম!
একসময় ব্লগে মজে গেলাম। লিরিকও লেখা শুরু করলাম। নিতান্তই লিরিক! শুধু লেখছি। আর নিজে নিজে লিরিক বলে ধরে নিচ্ছি আর কি!
লিরিক গেলো গান হয়ে...
২০০৯ এর শেষ দিক। ফেসবুকে দেওয়ান সাইফুর রহমান নামের একজন মেসেজ পাঠিয়েছেন, তিনি আমাকে খুজছিলেন। আমাকে! আমি অবাক! মেসেজ পড়ে দেখি তিনি আমার একটি লিরিক পছন্দ করেছেন। যা আমি ব্লগে প্রকাশ করে আসছিলাম। তিনি আরো জানালেন- তিনি সেই লিরিকটি নিয়ে কাজ করতে চান, আমার সম্মতি আছে কিনা। আমি একবাক্যে, পারলে আধা বাক্যেই রাজি!
২০০৯ এর ডিসেম্বরের ২৩ তারিখে আমার একটা লিরিক গান হয়ে উড়াল দিলো। সামহোয়্যারইন.. ব্লগেই। সাইফুর রহমান ভাইয়ের ব্লগ নিকটা বেশ অদ্ভুতুরে- অচন্দ্রচেতন! দেখুন সেই গান উড়ানো লেখাটা! আমি ছোট ছিলাম। লেখাটাতে তার প্রমান আছে- লালসালু ভাই একটা কমেন্টে লেখেছে- বাচ্চা ছেলে; হরলিক্স জিনিয়াস!
দৌড় আর দৌড়...
লিরিকের নেশায় ধরলো। একেবারে "ছাই দিয়ে" ধরা যাকে বলে! লিরিক লেখতে লাগলাম ইচ্ছেমতো। একশ দুইশ করে আমার এখন পাচশ লিরিক জমে গেছে!! লিরিক নিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। তখনই বুঝলাম- আমি আসলেই ছোট... কেউ পড়েও দেখেনা...
মন খারাপ হতে লাগলো। হতেই লাগলো। খারাপ মন নিয়েও লিরিক লেখা থামালামনা। এর মধ্যে জুলফিকার রাসেল ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। তিনি আমার লিরিকগুলো দেখতে লাগলেন- ১০ এর মধ্যে মার্কিংও করলেন। ৮ করে পেতে লাগলাম। ২ ও পেলাম কোনোটায়... জুলফি দাদা বললেন- তুই পারবি। লেখতে থাক... লেখতে থাকলামই...
এখন আমার ১০ টা লিরিক নিয়ে দেশের বিখ্যাত একজন শিল্পী-সূরকার একটি মিক্সড এলবামের কাজ করছেন। শেষ হলে একটা বিখ্যাত পোষ্ট দেবো..
বর্ষা অনুভূতিতে আমার লিরিক...
আমার লিরিক এলবামের গান হয়ে হলো সদ্য। এইচপির স্পন্সরে একটি মনসুন এলবাম- বর্ষা অনুভূতিতে। এলবামটি করেছেন এই ব্লগেরই অচন্দ্রচেতন নিকের সাইফুর রহমান ভাইয়ের ব্যান্ড "ওয়েভ" এবং নস্টালজিক নিকের রানা ভাইয়ের ব্যান্ড "নস্টালজিক"। এলবামটি এইচপি'র ইমেজিং এন্ড পৃন্টিং প্রোডাক্টের সাথে মনসুন প্রমোশনাল উপহার হিসেবে থাকছে।
বর্ষা অনুভূতির ফেসবুক পেইজ।
আর এটা আমার লেখা গানটার লিংক
এই হইলো ঘটনা...
এই হলো আমার লিরিসিস্ট হয়ে উঠার পথে হাটিহাটি পা পা...
সবার জন্য বর্ষা অনুভূতি শোনার আমন্ত্রণ রইলো...