somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাজার ব্যবস্থা সংস্কার করতে চাইলে!

১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাপানের পণ্য উৎপাদন থেকে বাজারজাতের ব্যবস্থা দেখে এসেছি। সেখানে বাজার ব্যবস্থা পুরাপুরি উৎপাদকের হাতে। কৃষিপণ্যের বাজরজাত ও মূল্য সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ কৃষকেরাই করে থাকেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগীর কোন স্থান নেই। লাভের সবটুকু পায় কৃষক ও উৎপাদনকারী। কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তার হাতে উৎপাদিত পণ্য পৌঁছায়; তা নিয়েই আজকে আলোচনা করবো।

সংক্ষেপে বললে, ওই দেশে কৃষকদের সংগঠন রয়েছে। উৎপাদনকারীদের সংগঠন বা সমিতি রয়েছে। এতে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। এছাড়া বেতনভোগী জনবল থাকেন। সমিতির নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রাম থেকে উৎপাদিত ফসল শহরে ওই জেলার নির্ধারিত আড়তে চলে যায়। সেখানকার কর্মীরা ওইসব পণ্য দূরবর্তী শহরে প্রেরণ করে। সেখানকার আড়ত থেকে দোকান বা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। প্রত্যেক কৃষক ও উৎপাদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে। বিক্রয়লব্ধ টাকা সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে দেয়া হয়।

এবার বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি। শুধু কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতের প্রক্রিয়াটা উল্লেখ করছি। সেখানে গ্রাম পর্যায়ে কৃষকদের সমিতি রয়েছে। জেলা পর্যায়ে সংগঠন রয়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সংগঠন রয়েছে। কৃষক সংগঠন সেখানে শক্তিশালী সংগঠন। এ সংগঠনের মাধ্যমেই কৃষক থেকে সরাসরি ভোক্তার হাতে কৃষিপণ্য তুলে দেয়া হয়। মাঝে শুধু একটি ধাপ থাকে। সেটি হয় সুপার শপ বা সব্জির দোকান। এ সংগঠনের নিয়োগকৃত লোকবল রয়েছে। সেখানে লেবার থেকে শুরু করে হিসারক্ষকসহ লোকবল রয়েছে। রয়েছে পণ্য পরিবহণের ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন। বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন জেলার জন্য নির্ধিারিত আড়তও রয়েছে। এসব শহরের কাঁচামালের চাহিদা তারা কেন্দ্রীয় সমিতির কাছে প্রেরণ করে থাকে। কেন্দ্র উৎপাদনকারী জেলা থেকে ওই পণ্য চাহিদামতো সারাদেশে পণ্য প্রেরণ করে। এদের মালামাল ওই সব স্থানের আড়তে পৌঁছানো হয়। সেখান থেকে কৃষক সংগঠন দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করে। সংগঠনের ব্যয় হিসেবে একটি পার্সেন্টেজ কেটে রেখে বাকী টাকা ওই কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে দেয়া হয়।

এতে তাদের অনেক সুবিধা পেতে দেখেছি। যেমন, কোন শহরের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা যায়। সুষম সরবরাহ সম্ভব হয়। কৃষিপণ্য নষ্ট হয়না। মধ্যস্বত্বভোগী বলতে কিছু নেই। কৃষক প্রকৃত মূল্য পেয়ে থাকে। চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়না। বিভিন্ন টোলমুক্ত পরিষেবাসহ সরকার থেকে বিভিন্ন সুবিধা পায়। সারাদেশে পণ্যের দাম সমান।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। দেখা গেলো দেশের একেক জায়গায় সরবরাহের তারতম্যের কারণে দাম কম বেশি। অনেক পণ্য নষ্ট হয়। মধ্যস্বত্বভোগীরা বেপরোয়া। পুরা বাজার তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। কৃষক পণ্যের প্রকৃত দাম পায়না। ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। কৃষিপণ্য টোলমুক্ত নয়।

এসব অসুবিধা দূর করতে হলে জাপানের বাজার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে। জাপানের অনেস্ট সিস্টেমের কারণে এটি সহজ। এদেশে চুরি ও দুর্নীতি বড় বাঁধা। তবে এই সরবরাহ ব্যবস্থা এদেশে প্রয়োগ করতে চাইলে সবার আগে সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে। কৃষক ও উৎপাদকদের সংগঠিত করতে হবে। প্রত্যেক কৃষকের কোড নম্বর থাকবে। প্রতিটি পণ্যের কোড নম্বর থাকবে। কৃষকদের সংগঠন তৈরি করতে হবে। উৎপাদনকারীদের সংগঠন তৈরি করতে হবে। প্রতিটি শহরে নির্দিষ্ট স্থানে আড়ত স্থাপন করতে হবে। কৃষক বা উৎপাদনকারী সংগঠন এসব আড়ত নিয়ন্ত্রণ করবে। সংগঠনের মাধমে লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। মান নির্ধারণ ও পরীক্ষার জন্য তাদের নিজস্ব লোকবল থাকবে। প্রথমে গ্রাম থেকে কোড নম্বর অনুযায়ী জেলা শহরে মালামাল একত্রিত করা হবে। এরপর কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী চাহিদার ভিত্তিতে তা ঢাকায় বা বিভিন্ন জেলায় প্রেরণ করা হবে। এসব পণ্যবাহী যানবাহনকে টোলমুক্ত করতে হবে। আড়ত থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে চালানসহ পণ্য সরবরাহ করা হবে। খুচরা ব্যবসায়ীরা সরকার বা কৃষক সংগঠনের নির্ধারিত দামে কিনে তা বাজারে বিক্রি করবে। তাদের কাছ থেকে কিনবেন সাধারণ ভোক্তা। এভাবে কৃষকের হাত থেকে মাত্র একটি হাত বদলের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে কৃষিপণ্য সরবরাহ করা সম্ভব। তবে কৃষক সমবার সমিতির আর্থিক সামর্থ হলে নিজেরাই পাড়া মহাল্লায় আউটলেট করতে পারবে। তখন সরাসরি কৃষকের কাছ থেকেই ভোক্তারা পণ্য কিনতে পারবেন।

আপনি যদি মনে করেন এটি অনেক কঠিন কাজ। আসলে তা নয়। এদেশে বড় দুই একটি কুরিয়ার সার্ভিস এর চেয়ে বেশি কর্মযজ্ঞ পালন করে থাকে। দেশে সরকারি ব্যবস্থায় মিল্কভিটা এই সিস্টেমের প্রায় কাছাকাছি কাজটিই করে থাকে। নওগাঁ জেলায় ১৯১৭ সালে গাঁজা চাষী সমবায় সমিতি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। এই সমাতি এত লাভবান ছিল যে এখনো এই সমিতির একশ কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে। এজন্য বলা যায় কৃষক উৎপাদনকারী সংগঠন করে এদেশেও বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ সফল হবে। প্রতিটি পণ্যকে এভাবে সমিতির আওতায় আনা দরকার। এতে কৃষক লাভবান হবে। ভোক্তা লাভবান হবে। বাজার নিয়ে শোরগোল কমে যাবে।

বাজার ব্যবস্থা সংস্কার করতে চাইলে এ বিষয়ে ভেবে দেখা যেতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×