somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবৈধ কাজে বসের কথা শুনবেন; বিরোধীতা করবেন; না কী কৌশল অবলম্বন করবেন!

০৪ ঠা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিভিল প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবৈধ নির্দেশ মানার কোন সুযোগ নেই। কোন কাজে দুর্নীতি হলে তার দায়ভার নিজেকেই নিতে হয়। কোন ভাবেই উপরের নির্দেশে করেছি বলে পার পাওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে বলা হয়, বস ভালো মানে পোস্টিং ভালো। সব সময় ভালো বস মিলবে তার গ্যারান্টিও নেই। ভাগ্য খারাপ হলে খারাপ বস মিলতে পারে। এক্ষেত্রে তিন ধরণের অবস্থা হতে পারে। এক. আপনার ঊর্ধ্বতন যা বলবেন তা বুঝে না বুঝে মেনে নেবেন। পরবর্তিতে কোন কারণে ধরা পড়লে এর পরিণতি ভোগ করবেন। দুই. বসের ঊর্ধ্বতন সিনিয়রকে ঘটনা জানাবেন। তার সহায়তা প্রার্থনা করবেন। এক্ষেত্রে বসের আক্রোশে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভাগ্য ভালো হলে পার পেয়ে যাবেন। তিন. কৌশল অবলম্বন করবেন। কারো বিরাগভাজন হবেননা৷ দুর্নীতিও সংঘটিত হবেনা৷ আজকে তিনটি অবস্থার তিনটি ঘটনা শেয়ার করছি।
 
ঘটনা এক:
আমার এক ব্যাচমেট। সঙ্গত কারণেই তার নাম বলছিনা। বুয়েট থেকে লেখাপড়া করেছেন।। জাপান থেকে পিএইচডি করেছেন। ছোটবেলা থেকেই তাবলিগ জামাতের সাথে যুক্ত। শশ্রুমন্ডিত। নুরানী চেহারা। কোন দুই নম্বরির আশপাশেও নেই। ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে। সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার আগে আমার জন্মদিনে সবাই একত্রিত হয়েছিলাম। আমার এই ব্যাচমেটের প্রথম পোস্টিং হয় কক্সবাজারে। আমি মজা করে বলেছি, তুমি তো চাকরি করতে যাচ্ছোনা। হানিমুনে যাচ্ছো। ভাগ্য খুব ভালো হলেই কক্সবাজারে তার পোস্টিং হয়। আমরা যখন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগ দেই, তখন অফিসারের সংখ্যা কম ছিল। এ কারণে শুরুতেই সবাইকে বড় বড় দায়িত্ব দেয়া হয়। আমার ব্যাচমেটকে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার দায়িত্ব দেয়া হয়। কিছুদিন পরে তিনি জাপানে পিএইচডি করতে চলে যান।

একদিন জানতে পারেন তাকে দুর্নীতির মামলায় আসামী করা হয়েছে। তার দায়িত্ব পালনকালে ওই জেলায় একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। এতে দুর্নীতি ধরা পড়ে। অভিযোগ ওঠে, খাসজমিতে লবণ চাষি ও পরবর্তীতে মৎস্য চাষের সাথে জড়িতদের ক্ষতিগ্রস্থ দেখিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেখিয়ে অধিগ্রহণের টাকা প্রদান করা হয়। অথচ খাসজমিতে লবণ থাকলে তা সংশ্লিষ্টদের তুলে নিতে বললেই হতো। তারপর সেই স্থানে পানি আসবে আরো ছয়মাস পর। সেখানে মৎস্য চাষ হবে- তারপর তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে- দুর্নীতির উদ্দেশ্যই এমন ছক সাজানো হয়েছে। পরে এ নিয়ে দুদকে মামলা হয়। তদন্তে ওই ফাইলে যারা সাক্ষর করেছেন, তাদের সবাইকে আসামী করা হয়। আমার ব্যাচমেট ওই স্বাক্ষর দেয়ার পর ওই দিনই রিলিজ হয়ে যান। তবে ফাইলে স্বাক্ষর থাকায় তিনিও আসামী হয়ে যান। একজন নবীন কর্মকর্তা যিনি কাজ শিখছেন, ফাইলে সাক্ষর থাকায় তার শেষরক্ষা হয়নি। আমার আরেক ব্যাচমেট বলেছেন, তার স্যারদের চাপে ওই ফাইলে সাক্ষর করা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা। ওই মামলার সবাইকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের ভয়ে আমার ব্যাচমেট দেশেও ফিরেননি। পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে দেখেন চার্জশিট হয়ে গেছে। মাননীয় হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে। তার ভাগ্য এখন বিজ্ঞ আদালতের বিবেচনার উপরেই ঝুলছে। কপাল কাকে বলে!

ঘটনা দুই:
আমার আরেক ব্যাচমেট। তিনিও এখন পিএইচডি করছেন। তার নামটাও উহ্য থাক। একটি উপজেলায় তাকে এসি ল্যান্ড হিসেবে পোস্টিং দেয়া হয়। তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই উপজেলার ইউএনও। একদিন তিনি আমার ব্যাচমেটকে বলেন, উপজেলায় অনেক খরচ করতে হয়। এ খরচ তিনি একা চালাতে পারবেন না। এজন্য প্রত্যেক নামজারি থেকে তাকে টাকা দিতে হবে। এমন কথা শুনে আমার ব্যাচমেটের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। যিনি এসিআর দেবেন, তিনি যদি এমন কথা বলেন, তাহলে চাকরি করবেন কীভাবে! সততার অনেক শক্তি। আমার ব্যাচমেটের সেই শক্তিটা ছিল। পরে তিনি যেটা করেছেন, তা আমাকে দিয়ে সম্ভব হতোনা। তিনি বিভাগীয় কমিশনার স্যারকে সরাসরি ফোন দিয়ে ঘটনা জানান। কমিশনার স্যারও একজন সৎ অফিসার খুঁজছিলেন। ওই বিভাগের মহানগরে একটি পদ তখন ফাঁকা হয়। কমিশনার স্যার আমার ব্যাচমেটকে সেখানেই পোস্টিং দেন। ব্যাচমেট তার সেই বিশ্বাসটা রেখেছিলেন। শুধু সততা নয় কর্মনিষ্ঠারও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে এসেছেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রথমোক্ত ব্যাচমেটের মতো আত্মসমর্পণ করেননি। সৎসাহস দেখিয়েছেন৷ দুর্নীতিতে সহায়তাও করেননি৷ বিপদেও পড়েননি।
 
ঘটনা তিন:
আমার বস ভাগ্য ভালো৷ সব জায়গাতেই ভালো স্যার পেয়েছি৷ কোথাও পোস্টিং হলে প্রথমেই কাজেের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেই, আমি দুই নম্বরিতে নেই৷ এ কারণে কোন স্যার আমাকে ওই পথে কখনোই নিতে চেষ্টা করেন নি৷ তবে বিপদে যে একেবারে পড়িনি সেটা কিন্তু নয়৷ একবার আমাকে এমন একটি জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিতে বলা হলো- যেটা পুকুর শ্রেণির৷ বিধি অনুযায়ী এ জমি অধিগ্রহণ করা যায়না৷ শ্রেণি পরিবর্তন করতে হয়৷ বলা হলো শ্রেণি পরিবর্তনের প্রস্তাব দাও৷ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সেখানে সরকারি ভবন করবেন৷ কী ভবন করবেন সেটা বললাম না৷ তবে এলাকাবাসীর জন্য পুকুরটা খুবই দরকার ছিল৷ স্যারও চাপের মুখে৷ তিনিও আমাকে চাপ দিচ্ছিলেন৷ অবশেষে আমি কৌশলের সাহায্য নিলাম৷ এটি জুনিয়র সহকর্মীদের কাজে লাগতে পারে৷ সেজন্যই শেয়ার করছি৷ কমিশনার স্যারকে বিষয়টি বলার মতো ছিলনা৷ কারণ যে স্যার এটা করতে বলছিলেন, তার সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভালো৷ এটি নষ্ট করা ঠিক হবেনা৷ তাছাড়া এটা এমন একটা সময় যে এসিআর নিতে হবে৷ কথা না শুনে কোন উপায় নেই৷

উপয় না পেয়ে একটা ভুয়া নাম দিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে নিজেই নিজের বিরুদ্ধে স্যারের কাছে একটা অভিযোগ দেই৷ অভিযোগে লেখা হয়, এলাকার একটি মাত্র পুকুর অমুকে অধিগ্রহণের পায়তারা করছেন৷ এটি করা হলে গণআন্দোলন হবে৷ পুকুর ভরাট করা যায়না তার স্বপক্ষে যত প্রকার বিধি বিধান আছে তা যুক্ত করে দেই৷ কপি দেই কমিশনার স্যারকে৷ অভিযোগে প্রেসক্লাবের কপিও রাখা হয় ৷ যদিও বাস্তবে প্রেসক্লাবকে কপি দেয়া হয় নাই৷

অভিযোগ পাওয়ার পর পুকুর ভরাটের প্রক্রিয়া থেমে যায়৷ একদিন স্যার বললেন, অন্য কোথাও থেকে জমির প্রস্তাব দাও৷ আমি হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম৷ একটু দূরের জমিতে ওই ভবনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম৷

এই কৌশলটা আরেকবার কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছিলাম৷ কারণ কেউ ধারণাও করবেনা- কোন অফিসার নিজের নামে নিজে অভিযোগ দিতে পারেন৷ অনেককে এ বুদ্ধি দিয়েছি৷ তারাও সফল হয়েছেন৷ আমার প্রথমোক্ত ব্যাচমেট আমার সাথে যোগাযোগ করলে তাকে এ পরামর্শই দিতাম৷ আমি নিশ্চিত যে এতে আমার ব্যাচমেট বেঁচে যেতেন৷ দুর্নীতিটাও সংঘটিত হতোনা৷ কারণ দুর্নীতি আড়ালে সংঘটিত হয়৷ যদি এটা প্রকাশ হয়ে যায়- সেক্ষেত্রে কারো বুকের এত পাটা নেই যে তা করে যাবে৷

দুর্নীতি করতে না চাইলে, দুর্নীতি না করলে নিজের ভেতরে একটা শক্তি জন্মে৷ এটা সততার শক্তি৷ এর সামনে কোন কিছুই দাড়াতে পারেনা৷ তবে কৌশলের বিকল্প নেই৷ কারো প্রয়োজন হলে আমার কৌশলটা প্রয়োগ করে দেখতে পারেন৷ ফল পাবেন৷
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:০৪
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×