somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজস্তত্ত্ব!

১৮ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাজস্তত্ত্ব! শব্দটা নতুন লাগছে? মানুষের চিন্তাভাবনাকে যেহেতু মনস্তত্ত্ব বলা হয়, তাই রাষ্ট্রের চিন্তাভাবনাকে রাজস্তত্ত্ব বলে সম্বোধন করলাম। এই লেখায় আলোচনা করা হবে রাষ্ট্রের রাজস্তত্ত্ব নিয়ে।

প্রতিটা রাষ্ট্রের কমন রাজস্তত্ত্ব হচ্ছে নিরাপত্তাহীনতা। প্রতিটা রাষ্ট্রই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। চীন আমেরিকার নিকট নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, আমেরিকা রাশিয়ার নিকট, রাশিয়া আমেরিকার নিকট, আমেরিকা চীনের নিকট, চীন ভারতের নিকট, ভারত পাকিস্তানের নিকট। এভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র একে অপরের নিকট নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে।

সত্যি বলতে নিরাপত্তাহীনতা নামক শব্দটা অজুহাত মাত্র। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটা রাষ্ট্রই নিজেকে পৃথিবীর সকল সম্পদের একমাত্র বৈধ দাবীদার মনে করে, এবং তা অর্জনে পৃথিবীর উপর একক আধিপত্য কায়েম করতে চায়।

কিন্তু চাইলেইতো আর তা সম্ভব না। আছে পদে পদে বাধা, রয়েছে একের পর এক প্রতিদ্বন্দ্বী। যারা প্রত্যেকেই অভিন্ন লক্ষ্য পূরণে ছুটে চলছে। তাই একক আধিপত্য বিস্তারের প্রথম শর্ত হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বীর পতন ঘটানো। মূলত পৃথিবীর সকল সম্পদ দখলের লক্ষ্যে, একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিকে ধ্বংস করতে 'নিরাপত্তা' নামক খোঁড়া যুক্তি উপস্থাপন করে শুরু হয় আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ, একক শব্দে যাকে বলা হয় যুদ্ধ। যে যুদ্ধে মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়, আহত হয়, প্রাণ হারায়!

চীন সিকিমের দখল নিলে ভারত নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে, এমন যুক্তি দেখিয়ে ভারত নিজেই সিকিম দখল করেছে। এই যে ভারত সিকিম দখল করলো তাতে কি চীন নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ে না? আবার চীনকে ঘায়েলের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক জোট 'কোয়াড' এর অন্যতম সদস্য ভারত। ভারত যেহেতু নিজের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের অজুহাতে সিকিমের স্বাধীনতা লুন্ঠন করেছে, এখন চীন যদি নিজের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য ভারতের স্বাধীনতা লুন্ঠন করে, তবে ভারত কি তা সমর্থন করবে?

একমাত্র দেশ হিসেবে পারমাণবিক বোমা ব্যাবহার করে মানুষ হত্যার রেকর্ড সৃষ্টি করা আমেরিকা মনে করে তার পারমাণবিক বোমা পৃথিবীর জন্য আশীর্বাদ! এবং ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করলে সেটা হবে বিশ্বের জন্য হুমকি। প্রকৃতপক্ষে ইরানের পারমাণবিক বোমা যে আমেরিকার আধিপত্য বিস্তারের পথে হুমকি, সেকথা বলতে আমেরিকার হয়তো সরম লাগে!

পৃথিবীর উপর একক আধিপত্য বিস্তারে ভারতের প্রথম বাধা চীন এবং পাকিস্তান। ধরুন এ বাধা দূর হলো, তবে সামনে আসবে আমেরিকা বা রাশিয়া। ভারত যদি প্রত্যেককে খতম করতে পারে তখন সে ইচ্ছে মতো পৃথিবীকে শোষণ করবে, এবং এটাই তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। একইভাবে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, কিংবা যারা ভবিষ্যতে পরাশক্তি হবে প্রত্যেকের চূড়ান্ত লক্ষ্য এটাই। আবার পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্ন প্রত্যেক রাষ্ট্রই দেখে। যতদিন পর্যন্ত শক্তি অর্জন না করতে পারে, ততোদিন হয়তো দাবার গুটি, না হয় দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মন্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়।

আজকে যদি চীন নিজেকে আমেরিকার নিকট সঁপে দেয় দেয়, আফ্রিকানদের মতো না খেয়ে তাদের সম্পদ আমেরিকার হাতে তুলে দেয়, তবেই আমেরিকা-চীন দ্বন্দ্ব মিটে যায়। তাইওয়ানের গনতন্ত্র? আমেরিকা নিজেই তাইওয়ানকে বলবে, 'আরে মিয়া ফালপারো ক্যান তুমিতো চীনেরই অংশ, যাও বিবাদ ভুলে মিলেমিশে থাকো'।

আমেরিকা যদি রাশিয়ার কথা মতো চলে, তবেই আমেরিকা-রাশিয়া দ্বন্দ্বের সুরাহা হয়। ভারত যদি বলে আজ হতে ভারত চীনের উপনিবেশ, চীন তার স্বার্থে ইচ্ছে মতো বিনা শর্তে ভারতকে ব্যবহার করতে পারবে, তবে আর চীন-ভারত দ্বন্দ্ব বলে কিছু থাকবে না। পাকিস্তান যদি নিজেকে ভারতের সাথে মিলিয়ে দেয়, তাহলে মিটে যাবে পাক-ভারত বিবাদ।


পৃথিবী দখলের এই প্রচেষ্টা এ যুগের কোন উদ্ভাবন নয়। হাজার হাজার বছর ধরেই এ প্রচেষ্টা চলমান। একটা সময় মানুষ যখন শাসকের প্রতি আনুগত্যশীল ছিল, তখন শাসকেরা বিশ্ব দখলের চেষ্টা করেছে। এককভাবে আলেকজান্ডার, তেমুজিনের মতো শাসকেরা এ দৌড়ে অনেক দূর এগিয়েছিল। বর্তমান যুগে মানুষ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যশীল, তাই কোন রাষ্ট্র যখনই শক্তিশালী হয়ে ওঠে তখন সে চায় পুরো পৃথিবী দখল করতে। এটাই রাষ্ট্রের রাজস্তত্ব।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৩৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×