শুচিস্মিতা,
বেশ অনেকদিন হয়ে গেল কাউকে চিঠি লিখিনা । চিঠি কেন কিছুই লেখা হয়ে উঠছেনা আমার। আক্ষরিক অর্থেই লিখতে বসেছি অনেকদিন বাদে। জানিস একটা সময় ছিল যখন খুব লিখতাম। খুউব। সপ্তাহে দু'চারটে লেখা জাতীয় দৈনিকগুলোতে হরহামেশাই বের আসতো। লেখা আর বই পড়ার বাইরে আমার ভুবন কল্পনা করতে কষ্ট হতো। আমি এমন বদলে গেলাম কীভাবে বুঝতে পারছি না।
সময় কত দ্রুত বদলে দেয় মানুষকে। যে আমি একটা সময় নারী সঙ্গ ভয় পেতাম। কোন মেয়ে সামনে পড়লে লজ্জায় কুঁকড়ে যেতাম। সে এখন অনেক কটা বান্ধবী পাশে নিয়ে ঘুরে।
আমি অনেক পালটে গেছিরে। ভাষা যেমন বদলে যায়, মানুষে চরিত্রও ঠিক তাই। কখনো তাতে পাওয়া যায় কাশফুলের শুভ্রতা, কখনো কুৎসিত আর বীভৎসতার সম্মিলন। আমার চিন্তার জগতটা অনেক ক্ষুদ্র হয়ে গেছে। অনেক বড় একটা স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করে ছিলাম। কিন্তু নিজের প্রতি যে বিশ্বাসটুকু ছিল সেটা উবে গেছে এখানকার মেকীত্ব দেখে। নাকী আমিই ব্যর্থ! অসহায় লাগে খুব। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই বুঝতে পারলাম না। বিশ্ববিদ্যালয় মানে বুঝতাম যেখানে প্রাণ খুলে কথা বলা যাবে। আমার যা চিন্তা তা নির্দ্বিধায় বলে ফেলা যাবে। যেখানে শিক্ষা মানেই সত্যিকার কিছু শেখা। কিন্তু এখানে এসে দেখি সবাই CGPA আর চাকর হবার জন্য পড়ে ।সেন্ট্রাল লাইব্রেরী , পাবলিক লাইব্রেরী সব জায়গায় একই চিত্র। আমি অসহায়ের মত আমার স্বপ্নটাকে ভেঙে যেতে দেখেছি।
হলের কথা ভাবলে মনটা বিষণ্ণ হয়ে যায়। আমাদের অধিকারের সবটুকু কেড়ে নেওয়া হয় এখানে। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে বাইরে থাকার সামর্থ্য না থাকায় বাধ্য হয়ে এ বন্দীত্বটুকু মেনে নিতে হয়েছে।রাজনীতি মানে কই লেজুড়বৃত্তি? শুধুইও একাই সব দখল করে থাকা। ছোত বেলা থেকেই রাজনীতির সংস্পর্শে ছিলাম না। ভালো লাগেনা। কিন্তু এমন কেন হবে?
তোকে লেখা প্রথম চিঠি এটা । ভেবেছিলাম অনেক কাব্য করে লিখব। কিন্তু কলম তো আর আমার কথাতে চলে না , বরং আমাকেই চলতে হয় তার কথাতে।জানিস আমি অনেক মিথের ভীড়ে ডুবে আছি । পূর্ণিমা দেখতে আমার ভালো লাগেনা। তারা ভরা জ্বলজ্বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে যে নৈর্ব্যক্তিক প্রাচুর্যতা পেয়েছি। তা পূর্ণিমাতে নেই।অথচ আমি মুখে স্বীকার করে বেড়াই পূর্ণিমা আমার খুব ভালো লাগে। কেন এটা করি আমি জানি না।
অনেকদিন হয় অংক করি না। অথচ এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। আমার ধ্যান জ্ঞান ছিল একটা সময়। কবিতা , গল্প ,ছড়া কিছুই লিখি না। আসলে লিখতে পারি না। আমি নষ্ট হয়ে গেছি। অথচ দেখ কী অবলীলায় কেটে যাচ্ছে হিরন্ময় সময়গুলো।আমি মারা যাচ্ছি আপন ভুবন থেকে ধীরে ধীরে। ব্যক্তিত্ব হারা অস্তিত্বের গণিততত্ত্ব নিয়ে পড়ে থাকি আমার উঠোনের শীতল ছায়ায়।বসে থাকি উবু হয়ে। আধখানা চাঁদ বরাবরই রসিকতায় হাত বড়িয়ে ফিরিয়ে নেয়।
ঊনকালে রোদ ছুঁয়ে যায় , ফের বেঁচে উঠি। রোদ নেমে গেলে উবু হয়ে ডুবে যাই.......
অনেক ভালো থাকিস রে। আকাশের মত।
ইতি
হালুম
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:১৯