“ মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায় ” ইদানিং সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধিদের দেখলে এই কথাটা বার বার মনে হয়। ৫ আগস্টের আগে উনারা এক সুরে কথা বলতো এখন আরেক শুরে কথা বলে। এদের দেখলে খুব অচেনা মনে হয় ,এদের কথার ধরণ ,চোখের চাহুনি , হাব ভাব সব কিছুই বদলে গেছে । সুবিধাবাদী লোকজন সময়ের সাথে পরিবর্তন হবে সেটাই স্বাভাবিক তাও কেনো জানি মেনে নিতে কষ্ট হয় । যারা এভাবে গিরগিটির মতো রং পরিবর্তন করে তাদেরকে আমার স্বৈরাচারের থেকেও বেশি ভয়ংকর মনে হয়।
কিছু দিন আগে ফরহাদ মাজহার এর একটি স্টাটাস চোখে পড়লো ,দেখলাম উনি চিন্ময় দাশের মুক্তির দাবিতে কান্নাকাটি করে ফেসবুক ভাসিয়ে ফেলেছেন। তিনি সবাইকে হিন্দু মানেই দিল্লির দালাল, বিজেপির এজেন্ট, হিন্দুত্ববাদী এই ধরনের সাম্প্রদায়িক ট্যাগিং না করার অনুরোধ করেন । তিনি আরো বলেন , মোটা মাথা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে ভারতকে মোকাবেলা করা যাবে না। যারা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে রাজনীতি ব্যাখ্যা করেন ও ক্রমাগত গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে, তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি উপদেষ্টাদের মূর্খ বলেন তাদের অ্যান্টেনা সাফ ও তীক্ষ্ণ করার পরামর্শ দেন।
মুরুব্বি মানুষ উনার বিষয়ে মন্তব্য করতেও খারাপ লাগে। উনি আসলে লালনবাদ, পালনবাদ, সুফিবাদ, ইসকনবাদ সব মিলিয়ে বরবাদ হয়ে গেছেন ।কি বুঝে উনি এমন একজন দুশ্চরিত্রের মানুষের পক্ষে সাফাই গাইলেন ঠিক বুঝলাম না। লুইচ্চা চিন্ময় এর সাথে যে ভাবে জোরাজোরি করে ছবি তুলেছে তাতে বুঝা যায় ইসকনের সাথে উনার সম্পর্ক অনেক গভীর। সনাতনী জাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রাম ও রংপুরের সমাবেশে বিজেপির পতাকা উড়িয়ে জয় শ্রী রাম স্লোগান দিয়েছে তাও উনি তাদের বিজেপি ট্যাগ দিতে রাজি না কি আজব ! ভেবেছিলাম চট্টগ্রামের আইনজীবী হত্যা পর উনি হয়তো উনার ভুল বুঝতে পারবেন কিন্তু না উনার মধ্যে কোনো অনুসুচনাই দেখা যাচ্ছে না ।
আরেক জন সুশীল সমাজের প্রতিনিধির কর্মকান্ড সবার নজরে এসেছে তিনি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না।আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করার আদেশ চেয়ে গত ২৯ জুলাই আইনজীবীদের একটি দল হাইকোর্টে আবেদন করে।তাদের মধ্যে একজন ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না।এমনকি শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ২৯ জুলাই গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের সদস্যও ছিলেন তিনি। অথচ এখন তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ট্রাইব্যুনালে আইনি লড়াই করতে চান ।
আদালত পাড়ায় উকিল হিসাবে উনার খুব একটা নাম ডাক নেই হয়তো সেই কারণেই ডিগবাজি দিয়েছেন। যেহেতু স্বৈরাচারের দোসররা সব পলাতক এখন উলটা পালটা কথা বললে সহজেই গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। তাই নিজেকে লাইম লাইটে নেওয়ার জন্য এই পথ উনি বেছে নিয়েছেন। অবশ্য এই রকম দুই একটা জোকার না থাকলে গল্পের আসর জমে উঠে না।
সুশীল সমাজের আরেক প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল নিজের ইউ টিউবে চ্যানেল থেকে স্বৈরাচারের বিপক্ষে জনমত গড়ে তুলেন। সহজ সরল বাচন ভঙ্গির জন্য উনি খুব অল্প সময়ের মাঝে মানুষের মনে স্থান করে নেন।অনেক প্রবাসী সাংবাদিক বিদেশে বসে ভিডিও বানান কিন্তু দেশে বসে ভিডিও বানাতে অনেক সাহসের প্রয়োজন।অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সপ্তাহ খানেক উনি সাপোর্ট দিয়েছেন তারপর ধীরে ধীরে উনার ও রং পরিবর্তন শুরু হয় । কিছু দিন আগে এক অনুষ্ঠানে বললেন ছাত্রদের উপদেষ্টা বানানো ছিল এই সরকারের সব থেকে বড় ভুল। এই সরকার দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি ঠেকাতে পারছে না চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
অবাক হয়ে উনার কথা গুলো শুনছিলাম আর ভাবছিলাম কি ভাবে মানুষ এক নিমেষে পরিবর্তন হয়ে যায়। উনি খুব ভালো মতোই জানে গত পনেরো বছর স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ অতিরিক্ত লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে বাজারে ছেড়েছে। সেই অতিরিক্ত টাকা বাজার থেকে উঠিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত দ্রব্যমূলের উর্ধগতি ঠেকানো সম্ভব না । এই অতিরিক্ত টাকা বাজার থেকে উঠিয়ে নিতে আরো দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে সেটা জেনেও উনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপর দোষ চাপিয়ে দিলেন। পনেরো বছরের জঞ্জাল তিন মাসের মধ্যে পরিষ্কার করা সম্ভব না সেটা জেনেও উনি সাধারণ মানুষকে অন্তর্বর্তী সরকার এর উপর ক্ষেপিয়ে তুলছেন।
ইদানিং ছাত্রদের কথা শুনলে উনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। ছাত্ররা উপদেষ্টা হইছে এটা উনি সহ্য করতে পারছেন না। কিছু দিন আগে কলকাতার চিকিৎসকরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলো এভাবে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুললো না কেন ? তে হইলে আমরা জনগণ ছাত্রদের বাদ দিয়ে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বানাতাম । বাস্তব সত্য হচ্ছে ছাত্ররা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে ,ওরাই দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে, ওরা যদি নেতৃত্ব দিতে চায় দেক ওরাই তো দেশের ভবিষ্যৎ। আমরা আর কয় দিন বাচবো এক পা তো কবরে চলেই গেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে প্রস্তুত হতে সাহায্য করেন তাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দেন তাদের সঠিক নির্দেশনা দেন। সাহায্য না করতে চাইলে অন্তত বাধা দিয়েন না।পছন্দের দল ক্ষমতায় আসলে খুব বেশি হইলে প্রেস ক্লাবে ভালো পদ পাবেন তার চে বেশি হইলে হয়তো কোনো পত্রিকা বা টেলিভিশন চ্যানেল এর লাইসেন্স বাগিয়ে নিতে পারবেন সেই লোভে দেশের বারোটা বাজায়েন না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৪