অনেক দিন পর ভরপুর উত্তেজনা নিয়ে টিভিতে লাইভ মারামারি দেখলাম। ইদানিং রাতের বেলা বেশির ভাগ মারামারির ঘটনা ঘটে সে জন্য টিভিতে লাইভ দেখায় না। অন্যদিকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের চার্লি গুলা ভারত পালায় গেছে সেই জন্য হেলমেট বাহিনীকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। দিনের বেলা আটো রিকশা চালকরা লুঙ্গি কাচা দিয়া রাস্তার এই মাথা থেকে ওই মাথা দৌড়াদৌড়ি করে সেটাকে মারামারি বলা যাবে না।তবে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বার ছাত্ররা এক গ্রূপ আরেক গ্রূপের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়েছে । কারণ শুনার পর আপনিও আমার মতো দুঃখ প্রকাশ না করে উলটা ঠাট্টা মশকরা করবেন। গত সপ্তাহে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ এর ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক মারামারি হয় কারণ লোকাল বসে উঠার সময় ধাক্কাধাক্কি। গতকাল রাতে তেজগাঁও বুটেক্স ও পলিটেকনিক এর ছাত্রদের মাঝে মারামারি হয় কারণ চা খাওয়ার সময় দুই কলেজ এর ছাত্রদের মাঝে কথা কাটাকাটি।
আমাদের অহংকার জেন জেড প্রজন্ম এতো তুচ্ছ ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে নিজেরা মারামারিতে জড়িয়ে যাবে এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। কেনো জানি মনে হচ্ছে এর পিছনে কোনো চক্রান্ত আছে। যারা স্বৈরাচারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় ,বিনা বেতনে রোদ পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে ,রাত জেগে মহল্লা পাহারা দেয় তারা লোকাল বাসের ধাক্কাধাক্কি কে ইস্যু বানিয়ে নিজেরা মারামারি করার কথা না। আমি নিশ্চত এর পিছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত আছে।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে vs শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ এর শিক্ষার্থীদের মাঝে মারামারির ঘটনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন কোথায় কে ষড়যন্ত্র করছে। ঘটনার সূত্রপাত ১৬ নভেম্বর সে দিন মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন । দুই দিন পর ১৮ নভেম্বর ওই শিক্ষার্থী মারা যান ঐ দিন রাতে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার ও কলেজের বন্ধু বান্ধব ভুল চিকিৎসার অভিযোগে এনে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। ভুল চিকিৎসা কিংবা হাসপাতালের গাফিলতি তার মৃত্যু হয়েছে কিনা সেটা বুঝার জন্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন ঢালাও অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতাল ভাংচুর চালানো সমর্থন যোগ্য নয়। তারপর ও যা হইছে ধইরা নিলাম ঘটনার আকস্মিকতায় ইমোশনাল হয়ে তারা এমন কাজ করেছে। ঘটনা এখানেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু তা হয় নি এক দিন পর ২০ নভেম্বর মোল্লা কলেজের ৬০০ শিক্ষার্থী আবারো মিলিত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাংচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়াতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে এক জন পরিচালক ,চার জন ডাক্তার ও দুই শিক্ষার্থীকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু মোল্লা কলেজের ৬০০ শিক্ষার্থী তাতেও শান্ত হয় নি তারা কমিটি প্রত্যাখান করে হাসপাতালে হট্টগোল চালাতে থাকে। সন্ধ্যার পর ও পরিস্থিতি পরিবর্তন না হওয়াতে ন্যাশনাল কলেজের পাশে অবস্থিত পুরান ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ এর শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে একত্মতা প্রকাশ করে এবং তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা বুঝে নাই উলটা তারা শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দুই ছাত্র কে পিটিয়ে আহত করে। সে দিন রাতের বেলা পুলিশ অনেক কষ্টে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয় । দুঃখের বিষয় ২৪ নভেম্বর পুনরায় মোল্লা কলেজ এর শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে হামলা চালায়। এটা ছিল ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় দফা হামলা। এইবার তারা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ক্ষান্ত হয় নি সাথে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা চালায় সেখানে তারা ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। মোল্লা কলেজের অব্যাহত হামলার জবাব দিতে ২৫ নভেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের প্রায় ১২/১৫ হাজার শিক্ষার্থী বাহাদুর শাহ পার্কে জমায়েত হয়। সেখান থেকে তারা মোল্লা কলেজে পালটা হামলার উদ্দেশ্যে মিছিল নিয়ে রওনা হয়। পথে দুই বার পুলিশ বেরিকেড দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি এতো লোক কে আটকানো পুলিশের পক্ষে সম্ভব না পরে তারা মোল্লা কলেজে ঢুকে ব্যাপক ভাংচুর লুটপাট চালায়।
প্রশ্ন ১ : ২০ নভেম্বর মোল্লা কলেজ এর ৬০০ শিক্ষার্থী ডেমরা থেকে পুরান ঢাকার যেয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল ভাঙা ভাঙি করতেছে এটা শুনার পর মোল্লা কলেজের প্রিন্সিপাল ও প্রভাষকরা সাথে সাথে সেখানে যেয়ে তাদের শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ফেরত আনার চেষ্টা করলেন না কেন ?
প্রশ্ন ২ : ২০ নভেম্বর হামলার পর মোল্লা কলেজ এর শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল কোনো রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি ফলে ছাত্ররা ফের ২৪ নভেম্বর তৃতীয় দফা হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে । এর দায় ভার কার ?
প্রশ্ন ৩ : ২৫ নভেম্বর পনেরো হাজার শিক্ষার্থী যে মোল্লা কলেজে হামলা করবে সেটা তারা আগের রাতেই ঘোষণা দিছে। এমন কি মোল্লা কলেজের প্রিন্সিপাল সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি সেটা আগেই জানতেন। তে হলে তিনি ২৫ নভেম্বর সকাল বেলা কলেজ সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে তালা লাগিয়ে দিলেন না কেন ? হামলার সময় কলেজের ভিতর ছাত্র ছিল তিনি তো সেটা জানতেন ।তার মানে তিনি ইচ্ছা করে ছাত্রদের মার খাওয়ালেন ?
ভাঙাভাঙির পর সবাই যখন চলে গেছে তখন শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল কালো শার্ট ,কালো পাঞ্জাবি পরে মিডিয়ার সামনে হাজির হলেন ।কালো শার্ট ,কালো পাঞ্জাবি দেখে বুঝা গেলো তারা আগেই প্রস্তুত ছিলেন। এক শিক্ষক বললেন “এটা একটা মূর্খ অযোগ্য অসভ্য জাতিতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষক কে জোর করে পদত্যাগ করায় কি একটা অবস্থা কোন সিচুয়েশন এ চইলা গেছি। আজকে দেশে কোনো সরকার নেই দেশ একটি ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। “ এই কথা শুনার সাথে সাথে আমার সন্দেহ বেড়ে গেলো ভাবলাম এদের ওয়েব সাইটটা একটু ভিসিট করে দেখি বাহ্ সুন্দর যেয়ে দেখি ওয়েব সাইডে বঙ্গবন্ধু কর্নার সেখানে ৭ ই মার্চের ভাষণ তুলে দেওয়া আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কারা ছাত্রদের এক গ্রূপকে আরেক গ্রূপের পিছনে লেলিয়ে দিচ্ছে। ভাগ্য ভালো স্ক্রিন শট নিয়ে রেখেছি হয়তো লেখাটা পাবলিশ হওয়ার সাথে সাথে ওয়েব সাইড ডাউন হওয়া যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:১০