জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারম এর ভেতর হুজুরদের WWF রেসলিং ম্যাচ যারা দেখেন নাই তারা মিস করছেন। অন্যান্য বার আউট ডোর ভেন্যু তে ম্যাচ হলেও এই বার ইনডোর ভেন্যুতে ম্যাচ হইছে।রেফারি ছিলেন জাতীয় মসজিদের ইমাম যোহরের নামাজের পর মোনাজাত ধরার আগেই মাওলানা সাদ পন্থী vs মাওলানা জুবায়ের পন্থী রেসলিং ম্যাচটি শুরু হয়ে যায় । দেখলাম এক পক্ষ আরেক পক্ষের দিকে প্লাস্টিকের জুতার বাক্স ছুড়ে মারছে প্রতিউত্তরে তারা আবার নামাজ পড়ার টুল গুলো ছুড়ে মারছে এভাবে মসজিদের বিভিন্ন সামগ্রী ছোড়া ছড়ি চললো কিছুক্ষণ।তার পর শুরু হলো টানাটানি কেউ দাড়ি ধইরা টানে কেউ চুল ধইরা টানে।ফাইনাল রাউন্ডে ধস্তা ধস্তি পর্ব শুরুর পর দেখলাম কারো লুঙ্গির গিট খুইলা গেছে আবার কারো পাঞ্জাবি ছিড়া গেছে তাই ধস্তা ধস্তির পর্ব বেশিক্ষন চলে নাই।এখানে একটা ঝামেলা আছে এরা সবাই পাঞ্জাবি পরে ,টুপি মাথায় দেয় ,দাড়ি রাখে ফলে কে কোন দলের অনুসারী বুঝা যায় না ।মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হয়ে নিজেই নিজের দলের লোককে পিটানো শুরু করে আবার অনেক সময় ধস্তা ধস্তি দেখতে যাওয়া উৎসুক জনতা প্রহারের শিকার হন । দুই দলের আলাদা রঙের পাঞ্জাবি থাকলে এই সমস্যা হতো না।
আজকে দেখলাম কাকরাইল মসজিদের দখল নিয়ে দুই পক্ষ বেশ উত্তেজিত। ইতিমধ্যে এক পক্ষ সকাল বেলা দলবল নিয়া মসজিদে ঢুইকা গেছে তারা নাকি আর বের হবে না। ভাবছেন এতো লোকের খাওয়া দাওয়া বাথরুম কোথায় কেমনে কি ? টেনশন নিয়েন না এরা এভাবে দিনের পর দিন থাকতে পারে। দেখবেন এদের সাথে একটা বড় ব্যাগ থাকে সেটার মধ্যে বিছানা মশারি থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিসপত্র থাকে। ওই ব্যাগ সাথে থাকলে এদেরকে নিয়ে সাহারা মরুভূমির মাঝ খানে ফলে দিলেও এরা কয়েক সপ্তাহ টিকে থাকবে ।এরা যখন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় দেখবেন সব লাইন ধরে এক জন আরেক জনের পিছনে পেঙ্গুইনের মতো হাটে। প্রত্যেক গ্রূপের সাথে নিজস্ব হাড়ি পাতিল ও চুলা থাকে।
তবলিক জামাত এর পক্ষে বিপক্ষে নানা রকম যুক্তি আছে আমি সেই বিতর্কে যাবো না।কিন্তু আল্লাহর ঘর মসজিদের ভিতর হানাহানিতে লিপ্ত হওয়াটা আমার কাছে ভালো লাগে নাই। যারা নিজেরা মসজিদের ভিতর মারামারি করে মসজিদের দরজা জানলা ভাঙে তারা আবার আরেক জনকে দীনের জ্ঞান দেয় কি করে ? হাস্যকর আমার তো মনে হয় এরা নিজেরাই বেয়াক্কেল না হলে এমন কাজ কেউ করে ? ধর্ম আসলে খুব স্পশকাতর বিষয় এ নিয়ে কম কথা বলাই ভালো। তবে ভিন দেশের এক জন আলেমের বক্তব্য কে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের আলেমরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেরা মারামারি করে এক ভাই আরেক ভাইকে রক্তাত্ব করবে সেটা কাম্য নয় ।তবলীগ জামাত ২০১৫ সালে ১০ সদস্যের শুরা ব্যবস্থা বাতিল করার মাধ্যমে নিজেরা নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে গেছে । তাই তাদের কোথায় উত্তেজিত হয়ে বিবাদে জড়ানোটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। যেহেতু হজের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ টঙ্গীর ইজতেমা আমাদের দেশে অনুষ্ঠিত হয় তাই আমার মনে হয় আমাদের দেশের ১০ জন আলেম কে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে নেতৃত্বে আমাদের হাতে নিয়ে দেওয়া উচিত।
তাবলিগ জামাতে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ও বর্তমান অবস্থা
ভারতে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভীর হাতে সৃষ্ট তাবলিগ জামাত শুরু থেকেই ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছিল কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে। বাংলাদেশেও সেভাবেই এর সূচনা হয়। তাবলিগ জামাতে মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।
১৯৯৫ সালে মাওলানা ইনামুল হাসান কান্ধলভী মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তাবলিগের ১০ সদস্যকে নিয়ে শুরা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। যেন তার অনুপস্থিতিতে শুরা সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এটি ২০১৫ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল।
২০১৫ সালে তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভীর প্রপৌত্র মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির করা হয়।
২০১৭ সালে মাওলানা সাদ কান্দলভীর কয়েকটি বিবৃতি দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারীদের বিরুদ্ধে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার মুফতি ইব্রাহিম দেসাই এই বিষয়ে 'আস্কইমাম' ওয়েবসাইটে ফতোয়া দেন। এতে মাওলানা সাদের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
২০১৮ সালে তাবলিগ জামাতের মধ্যে ২ পক্ষের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয় দিল্লির নিজামুদ্দিনে। মাওলানা সাদ কান্দলভীকে নিয়ে এই দ্বন্দ্বে পৃথক হয়ে পড়েন তাবলিগের অনুসারীরা। মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে পৃথক ফতোয়া দিয়ে বৈশ্বিকভাবে দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি অনুসরণ করা হয় কওমি ও দেওবন্দী মাদ্রাসাগুলোয়।
এই দ্বন্দ্বের রেশ এসে পড়ে বাংলাদেশেও।দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসরণে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার অনুসারীরাও মাওলানা সাদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। তারা মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশে ২ ভাগে বিভক্ত তাবলিগের অনুসারীরা ২ পর্বে ইজতেমার আয়োজন করে আসছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:৫৪