দীর্ঘ ১ বছরের চেষ্টার পর জি আর ই তে মধ্যম রকমের স্কোর পাওয়ার পর হাজারো টেনশন শেষে .... সবচে বড় কথা মিডল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে হয়ে বিয়ে না করে পড়ার উদ্দেশ্য বিদেশ পাড়... এত ফাড়া পার করলো সে কিছুটা বিজয়ী অনুভূতি হচ্ছে.....।এসব কথাই ভাবছিল সাফা কাতার এয়ার ওয়েজে উঠে আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময়। মা বাবা সবার কথা মনে পড়ল তাঁরা যথেষ্ঠ সাপোর্ট দিয়েছেন সত্যি কিন্তু নিরুপায় হয়ে কারন সাফা যুক্তি দেখালো যে বড় বোনের পড়া ঠিক মত শেষ হয়নি এই সব বিয়ে শাদির ঝামেলার জন্যে! সাফা মনে করে ওর বড় বোন অনেক ই মেধাবি কিন্তু সুযোগের অভাবে প্রতিভা বিকাশ করতে পারছেনা আর সে নিজে যদি একটা অবস্থানে যেতে পারে তাহলে ছোট ভাইবোনদের ও সুযোগ সৃস্টি করতে পারবে....
জীবনে প্রথম বার ইন্টারন্যাশনাল প্লেনে চড়ে এতসব কথা ভাবছিল, জানালার পাশেই সিট পেয়েছে সে। পাশে খেয়াল করল একজন বুড়ো লোক যাত্রী। উনাকে সাফার বেশ সম্ভ্রান্ত টাইপ লাগলো। কেমন যেন একটু স্মিত হাসি বিনিময় হল দুজনের। তার ও পাশে এক কিশোর ছেলে মনযোগ দিয়ে আইপডে গেম খেলছে। হয়ত এরা নানা নাতি হবে আবার না ও হতে পারে। এই তিন সিটের পর মাঝে ফাকা জায়গা রেখে সিংগেল সিটের একটা সারি আছে।সে সিটে কে বসল সাফা না দেখে চোখ মুদে ঘুমানোর চেষ্টা করল! কারন শুনেছিল প্লেন যখন উড়তে আরম্ভ করে তখন নাকি যাদের মোশন সিকনেস আছে তাদের অনেক কস্ট হয় আর আওয়াজ হয় প্রচন্ড। তাই ঘুমিয়ে ব্যপারটা এড়ানোর চেষ্টা আরকি। কারন বমি টমি শুরু হোয়ে গেলে কেলেংকারি অবস্থা হবে। নির্দেশনা আসল যখন সিট বেল্ট বাধার তখন বেশ জোর করেই ঘুমানোর চেস্টায় থাকল সাফা। পাশের নানা সাফা কে জিজ্ঞেস করল ''ফার্স্ট টাইম ট্রাভেল?'' সাফা মৃদ্যু স্বরে বলল ''হুমম''এরপর এতটাই আওয়াজ হল যে নানার সান্ত্বনার বানী আর কানে ঢুকেনি সাফার।প্লেন পুরোপুরি আকাশে ওড়ার পর কানে ওড়না দিয়ে মুখে চেপে বসে রইল সাফা। নানা তখন পিতৃস্নেহে প্লেনের দেয়া প্যাকেট থেকে পাফড ইয়ার ফোন ওর কানে লাগিয়ে দিল। সাফা কৃতজ্ঞ অনুভব করল। তখন চোখ পড়ল ও পাশের কিশোর ছেলেটির দিকে গেম খেলায় ক্লান্তি নেই তার।
এতখনে দেখল একার সিটে বসে আছে রাশাদ ভাই। কেমন যেন ওর হৃদপিন্ড নেমে গেল।হৃদপিন্ড তো নামবেই সব সময়েই রাশাদ কে দেখলে সাফার দম আটকে যায়। সাধারন গোলগাল ফর্সা চেহারা রাশাদের কিন্তু কেমন যেন আকর্ষন সেই বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তির ২ মাস পরে থেকে সাফা এই দম আটকানো রোগ হয়।রাশাদ নাম করা বিতার্কিক, রেসাল্ট অনেক ভাল সব মিলিয়ে সবার কাছে প্রত্যাশিত।সেখানে সাফা আড়ালে থাকা অন্তর্মূখী অ আকর্ষনীয় মেয়ে তাই হীনমন্যতায় কখনো কাছে যাওয়া তো দূর কথা ও বলা হয়নি। এমনি সিনিয়রদের সাথে সাফা অনেক সাবলীল কিন্তু রাশাদের সাথে কথা হয়নি।তবে একটা বাজে ঘটনা ঘটেছিল একবার, সাফা প্রায়ই আড়াল হতে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকত মাঝে মাঝে আনমোনা হয়ে ও ব্যাপারটা রাশাদের বন্ধুরা টের পায় আর এ নিয়ে রাশাদের সাথে ইয়ার্কি করে এরপর রাশাদ একবার কঠিন দৃস্টিতে তাকিয়েছিল সাফার দিকে। সেদিন এতটাই অপমান বোধ করেছিল সে যে পরে ৪ দিন আসেনি ভার্সিটি তে। এবং নাক মুখ গুজে পড়ায় মন দেয়।সে বছরই রাশাদের গ্রাজূয়েশন শেষ হয় নামকরা উন্নয়ন সংস্থায় যোগ দেয় আর তার কিছুদিন পর বাইরে পিএইচ ডি করতে যায় চাকরিটা বহাল রেখেই। সাফা এর পর ও গুগল করে রাশাদের খবর নিত কারন অনেক পেপার পাবলিশ হয় ওর। এত লুকোচুরি সাফার আর আজ কিনা এত দিন পর কাছে দেখল মুখে ওড়না চেপে বিষন্ন বিষাদে শ্বাস নেয়াই কস্ট হয়ে গেল। যাক সে আর তাকাবে না ঠিক করল। প্লেন এখন মিহি গতিতে উড়তে থাকল সাফা নিচে তাকাল। দেখলো রাতের মেঘ, কেমন যেন ঠান্ডা লাগলো ওর।
পাশের নানা টা আবার সাফা কে জিজ্ঞেস করল '' নাও ফিলিং বেটার?''
সাফা এবার উত্তর দিল বিনয়ী হয়ে '' ইয়েস''
সে এবার জিজ্ঞেস করে ' আপনি আমেরিকার কই যাবেন?
নানা বলে '' আমি থাকি ওখানে অনেক বছর বাংলাদেশ বেড়াতে আসছিলাম,তুমি কই যাও?''
সাফা বলে ,'' নিউ ইয়র্কে আপাতত, ভার্জিনিয়া তে যাব, মাস্টার্স করতে''
নানা বলে ,ভার্জিনিয়া?? ভালই নিউ ইয়র্ক থেকে দূর না। কেউ কি আছে তোমার?
সাফা বলে।,''জ্বী আমার মামা আছে নিউ ইয়র্কে।
নানা বলে, তোমার নাম কী?
সাফা বলে , সাফা মারজান
নানা বলে , বাহ আমার নাম নুরুল আমিন
সাফা স্মিত হেসে বলে ''আচ্ছা''
নানা এরপর বলতে লাগলেন, পাশের ছেলেটি তার সবচে বড় মেয়ের বড় ছেলে আর সে নাকি কথা বলতে পারেনা তবে গেম বানাতে পারে। এরপর তিনি তার অন্য ছেলেমেয়ে আর নাতি নাতনীর কথা বললেন।শুনতে শুনতে হঠাৎ সাফার ঘুম পেল। নানা বুঝলেন তিনিও বললেন ''ওকে রেস্ট কর''
দোহায় ট্রানজিটে প্লেন নামার আগে সাফার ঘুম ভাংগে।সে দেখে রাশাদ তাকিয়ে আছে ওর দিকে, খুব ই অপ্রস্তুত বোধ করে সে।মাথা নিচু করে ফেলে ব্যাগ গুছানো শুরু করে। মনে মনে ভাবছে উনি চলে যাবেন, পাশে নানা বললেন আমরা গেলাম হোটেলে ।সাফা হেসে মাথা নাড়ল আর ব্যাকপ্যাক নিয়ে হাতের ব্যাগটা বের করতে লাগল। রাশাদ তখন নামিয়ে দিয়ে বলে '' চল!''
সাফা তখন বলতে লাগলো '' আরে আপনি কেন কস্ট করবেন??'' আমি পারব''
রাশাদ বলে '' বিনয় লাগবেনা ঘুমের মাঝে কি কি সব বলে ফেললে আর এখন বিনয়''
সাফার আবার হৃদপিন্ড নেমে গেল
রাশাদ এবার হেসে বলল ''চল তোমাকে ভার্জিনিয়ার ডর্মে নামায় দেই''