- এই ছেলে..
- আরেহ!! এযে মেঘ না চাইতেই সুনামি...কেমন আছো সিনোরিটা?
- ব্যস্ত? ইশশ!! ভারী তো সুনামি...কাউকে তো একটু ডুব সাঁতার কাটতেও দেখি না..
- তুমি এলে আমি কখনোই ব্যস্ত নয় মেয়ে!! আমার পৃথিবী থমকে যায়। ডুবসাঁতার? হাসালে...ডুবে গেছি কবেই!! আর জানবেই বা কি করে? হুরপরীদের আবার বুদ্ধি কম!
- ভালো হবে না কিন্তু? চলে যাবো...
- আর কতোই বা খারাপ হবে? যাওয়ার আগে একটা কথা ছিলো যে...
- সেই অনাদিকালের কথাটা বুঝি? যেটা শোনার অপেক্ষায় থাকি...সেই কথাটা?
- কোন কথা শোনার অপেক্ষায় থাকো মেয়ে?
- আশ্চর্য!! ঐযে বললে না একটা কথা আছে, সেইটা...
- হুম্মম...কিন্তু কি কথা তুমি কি করে বুঝলে?
- বুঝে ফেলেছি তাই বলবে না বুঝি?
- আগেতো শুনি!!
- আমি শোনার অপেক্ষায় থাকি...তুমি শুনবে কেন? তুমি বলবে...আমি শুনবো...
- বলতেই যে চাইছি...তবে আমি কিন্তু পুরোনো কথা বলি না...সব টাটকা শব্দ, বুকের রক্তমাখা!!
- হুউউউ...বন্ধক রেখে সুদ আদায়ের কোন উপায় নেই দেখছি...
- এই যে মেয়ে...ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি...
- হুউউউ...এছাড়া কি আর তোমার কোন কথা আছে?
- আরেকটা কথা আছে...
- শুনছি তো...
- শুধু তোমাকেই ভালোবাসি...
- ভালোবাসা এত্তো সহজ বুঝি?
- এতোই সহজ, তবে সরল নয় কিন্তু...
- সেতো কল্পনাকে ভালোবাসা ছেলে...আমাকে নয়...
- তুমিতো কল্পনা নও...আসো যে প্রতি রাতে...
- শেহেরজাদীর গল্পকে ভালোবেসেছো তুমি, তাকে নয়।
- শেহেরজাদীকে ভালোবাসি বলেই তার গল্পদের ভালোবাসি। বালক নই মেয়ে...পুরুষ রূপকথায় ভোলে না, তার রাজকন্যা চাই...
- চেনো বুঝি আমাকে তুমি?
- চিনি তো...চুপচাপ একাকী রাতজাগা এক কিশোরী, যার মনখারাপের সাক্ষী থাকে ভেজা বালিশ। সেই মেয়েটা যে শ্রাবণ নামলে বৃষ্টিজলে ভেজার সময়ে মিশিয়ে দেয় চোখের নোনা জল...তুমি তো সেই মেয়েটা যে রূপটান শেষে আয়নায় তাকালে দেখো কষ্টের জলছাপ...চিনিতো তোমায়...তোমার সাথে আমার চেনা ছায়াপথে...বহুদিন পথ হেঁটেছি পাশাপাশি...
- তুমি না অসহ্য!!
- তুমিও অসহ্য...তবে অসহ্য ভাললাগা!!
- আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছো?
- আল্লাদ তোমার একার সম্পত্তি বুঝি? আল্লাদ করা আমারও মৌলিক অধিকার।
- তোমারটাই মৌলিক অধিকার...আমারটা যৌগিক!!
- হবেইতো...আমার ভাবনাটা খাঁটি...একদম নিখাদ ভালবাসা!!
- এইইই শোন...
- বলো সিনোরটা...আমার রাজকন্যা!!
- তুমি বড় হবে কবে বলতো?
- শোন মেয়ে...
মন সাবালক হোক, অনুভূতিরা নাবালকই থাকুক!!
ঝুমকোর দোলায়, নূপুরের শিঞ্জনে আটকে থাকুক প্রেমিক হৃদয়,
ঝাকঁড়া চুলের ফাঁকে ধরা পড়ুক গেরুয়া বিকেল, আর
রুক্ষ নীলাভ গালে চোরকাঁটার জংগলে দিক হারাক প্রেমিকা মন।
ঘোর বরষা দিনে কাজল ঘেরা চোখের চাহনিতে আকাশকে ভুলে
বুকের মাঝে ঝলকে উঠুক বজ্র-বিদ্যুত,
চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কাকভেজা অপেক্ষাকে দেখে
বৃষ্টিজল উপেক্ষা করে পথে নামুক ভালোবাসারা।
মেঘের কোমল আশ্রয় দিক কারো বুকের কাশবনে,
আঙুল ছোঁয়ায় রক্তে জাগুক ময়ুরাক্ষী নদীর স্রোত,
রাত গহীনে এলোমেলো কথায় ফুটুক লক্ষকোটি জারুল ফুল।
হাজার বছর, অনন্তকাল পেরিয়ে এলেও
প্রেমের বয়স থমকে না হয় থাকুক সেই আঠেরোতেই!!
- বাহ!! আমার কবিতা আমাকেই দিচ্ছো?
- তুমি যে সত্যি বলো...তুমি কবি!!
- সবাইয়ের কবি নই কিন্তু, কারো কারো...
- ‘কারো’টা দু’বার হয়ে গেলো যে...দ্বিতীয় ‘কারো’টা করাত হয়ে কাটছে...
- খালি ফাজলামি তোমার!!
- ফাজিলের বুঝি মন থাকতে নেই?
- সবার সাথেই তুমি এমন...
- হা হা হা...এবারে সত্যি তুমি ছোট্ট মেয়ে...
- মানে কি?
- ওই যে মেয়েলী মেয়েলী আল্লাদী কথাখানি!! সবাইকে নাগো মেয়ে...শুধু রাজকন্যাকেই বলি...
- এইসব মনরাখা কথা তুমি সবাইকেই বলো...আমার মন অন্য কোথাও রেখো ছেলে!!
- চারপাশে তুমি আর তুমি...আশেপাশে যাকেই বলি না কেন সেতো তোমাকেই বলা!!
- ইশশ!! কবে যে তোমার সাথে কথায় জিততে পারবো?
- সে আশা ছেড়ে দাও সিনোরিটা।
- অবশ্য আমার হারতেই ভালো লাগে।
- আর আমার হারাতে...
- তুমি বোকা!!
- সে ছিলাম বটে। আজকাল নিজেকে বুদ্ধিমান মনে হয়...
- কেন বলতো?
- নইলে কি আর রাজকন্যা আমার কাছে ইচ্ছে করে হারে...
- আমি তোমার কল্পনায় গড়া রাজকন্যা ছেলে...তুমি চাইলেই আছি, আর না চাইলেই নেই!!
- নাহ!! আমার রাজকন্যা জলজ্যান্ত...তাকে রোজ দেখি।
- প্লিজ!! বোলো না যে স্বপ্নে দেখো...
- নাহ তেমন নয়। চোখ বুজলেই তাকে দেখি আর চোখ খুললেও। চাইলেই তাকে দেখি।
- তুমি না আসলেই অসহ্য!!
- সেতো তুমিও...অসহ্য ভালোলাগা...তারও বেশী কিছু!
- তার বেশী আর কি হয়?
- যখন অসহ্যও অভ্যেস হয়ে যায়...তখন চলে অভ্যেসের চর্চা! সে এক আজব নেশা...এই নেশা থেকে কোন মুক্তি নেই। মুক্তি পেতেও চাই না...হারাতে চাই কেবল।
- মরতে সাধ হয় ছেলে?
- মরেও কি আর তেমন সুখ? বিলীন হয়ে যেতে সাধ হয়...কবিতার শেষ কথা হতে বড় সাধ হয়। ও তুমি বুঝবে না মেয়ে!!
- তোমার সাথে কথা বুনতে ভালো লাগে ছেলে। তুমি কথায় কথায় হেঁয়ালি করো আর সে হেঁয়ালির জালে হারাতেও ভালো লাগে।
- শুনেই কেমন যেন ভালো লাগলো...ওম ওম জ্বর আসার আগের সময়!! এখন বুক ধুকপুক করছে...অস্থির লাগছে।
- ইশশ!! কথাইতো বুনছি...হৃদয়ে স্টিচ নয়!!
- কথা বুনতে বুনতে আরেকটু হলেই যে হৃৎপিণ্ড সেলাই হয়ে যাচ্ছিলো।
- ধ্যাত!! তুমি না একটা যা তা!!
- হুম্মম...তোমার যা ইচ্ছে তা লেখার খাতা!! মেয়ে কথা শুধু কি মুখেই বলি?
- উহুউউ...আঙ্গুলে টাইপ করে অক্ষরে...
- তার চেয়েও বেশী... আঙ্গুলের নিয়ন্ত্রণতো তোমার হাতে...কথাগুলো যে সব হৃদয় থেকে আসে...
- তুমি না...
- একটা যা তা...তাইতো? একদম!!
- উহুউউ...একটা পাগল!!
- হুম্ম...এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছি জানো?
- কি?
- এই কি তবে পাগল হবার লক্ষণ? পাগলদের কি এমনি লাগে প্রথম প্রথম? তবে পাগল হওয়ার মতো সুখ আর কিছুতেই নেই। আমি পাগলই হবো মেয়ে...
- লক্ষণগুলো বলতো শুনি…তারপরে রোগ নির্ণয়!!
- ঘুমাতে দাওনা, খেতে দাওনা, জিরুতে দাও না, ভাবতে দাও না, আবার না ভাবতেও দাও না…আরো লক্ষণ চাই?
- তুমি না…এমন করে বুঝি কেউ বলে?
- কবিতা জানি না, সংলাপ জানি না, গুছিয়ে কথা বলতে পারি না…শুধু পাগলের প্রলাপ বকি!! তবে একটা কথা খুব জানি...তোমার মনের ঐ কাঁচভাঙ্গা হাসি টের পাই না ভেবেছো? সে হাসো...আমি ওই তাচ্ছিল্যের হাসিও ভালোবাসি।
- ভাগ্যিস বোঝো না ঝড়ের গতিপথ...
- ঝড়ে উড়ে যাচ্ছি। গন্তব্য জানি না...গতিপথ বোঝার সুযোগ কই মেয়ে? উল্টে পাল্টে ডুবে ভেসে কোথায় চলেছি কে জানে?
- পাগল হয়েই ছাড়বে তবে?
- এভাবেই বুঝি লোকে পাগল হয়? দারুণ তো...পাগল হবোই হবো তবে।
- এতো ইচ্ছে পাগলামি।
- ইচ্ছে নয় মেয়ে...নেশা...মাতলামি!!
- কেমন সে নেশা ছেলে?
- এ এক আশ্চর্য নেশা...বোঝাতে পারবো না। যার হয় শুধু সেই জানে...
- কথার নেশা?
- কথা, দেখা, ফিসফাস, অদেখা, আড়াল, চুলের সুগন্ধ, বুকের তিল, ঠোঁটের বাঁক, আঁচলের রং...আরো কতো কি!!
- ইশশ!!
- তাইতো...
- শোন ছেলে...ঘুমাতে যাও তো...আজকের পাগলামির কোটা শেষ...
- যেতে ইচ্ছে করছে না...তবে ভয় লাগে পাগলামির রেশন কার্ড না বাতিল হয়ে যায়।
- সব পাগলামি একদিনে খরচ করতে দেবো না আমি। একটু একটুই সই...আমার সারাজীবনের পাগল চাই।
- অভিনন্দন মেয়ে...পেয়ে গেছো তোমার পাগল!! তবে পাগল হলেও আমি ধনী। সুইস ব্যাংকে পাগলামির একাউণ্ট আছে...প্রতিদিন অঢেল পাগলামি করেও ফুরাবে না দেখো।
- উহহহ!! তোমাকে নিয়ে যে কি করবো সেটাই ভেবে পাই না...রাখবো নাকি ফেলে দেবো সেই দোটানায় থাকি। সব দায়, সব ঝামেলা আমার ঘাড়েই চাপে।
- যেমনটা তোমারটা চাপে আমার ঘারে?
- কবে শুনি?
- কবে না শুনি?
- একটা দায়ের কথা শুনি?
- ওই যে...তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ!!
- আবার??
- কোটা শেষ বুঝি? আজকের?
- তোমাকে রাত জাগিয়ে রাখতে কষ্ট হয় ছেলে।
- অতলে ডোবাতে বুঝি কষ্ট হয় না?
- সে আমি জেনে বুঝে করিনি ছেলে। তুমি যে হঠাতই ঝাঁপ দিলে।
- ঝাঁপ না দিয়ে উপায় কি?
- উপায় নেই বুঝি? কতোদিন তোমার চোখে চোখ রাখিনি অতল!!
- রেখেই বা ছিলে কবে?
- বাতাসকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিও সে ঝড় হয়েছিলো সেই কবে...
- সে ঝড় কি আর তোলা যায় না? সিডর কিংবা তিতলী?
- বাতাস যে দিক বদলেছে ছেলে...
- কি অনায়াসে কথাটা বললে!! আমার জানালা কিন্তু খোলাই আছে...তুমি জানোও না বাতাস দিক বদলানোর সময়ে কি ঝড় তুলে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে আমায়...
- আজ তোমার কি হয়েছে বলতো? বড্ড পাগলামি করছো?
- আমিই কি জানি ছাই!! পাগল মানুষ...হা হা হা!!
- শুভঙ্করদের এমন পাগল হলে চলে? তাদের যে ঝড় রোদ জল সব উপেক্ষা করে গড়ির মোড়ে অন্তহীন অপেক্ষায় থাকতে হয়।
- ভুল বললে!! শুভঙ্কররাই পাগল হয়। সাতমহলা বাড়ির যে মালিকের ঘরে তুমি জোছনা হয়ে ঝরো, সে তোমার জন্য পাগল হবেনা কখনোই। আমি পাগল হই বলেই যে তুমি নন্দিনী!!
© শিখা রহমান
বিঃদ্রঃ এই ব্লগে আমার চেনা একজনই পাগল আছে। এই পাগলামি তাকেই দিলাম। যার বোঝার সে বুঝে নিক, যার খোঁজার সে খুঁজে নিক। ভালো থেকো পাগলামিতে আর ভালোবাসায়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১২