প্রথম দেখা চৌরাস্তার ব্যস্ত মোড়ে,
ট্রাফিক পুলিশের ইশারায় স্থবির যানজটে।
কতোক্ষণ আর!! খুব বেশী হলে দু-এক মিনিট,
আর তোমাকে দেখা বড়জোর কুড়ি কি ত্রিশ সেকেন্ড।
বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা উদাসীন এক যুবক,
তার উড়ন্ত চোখ আকাশপানে পাখা মেলেছে।
আকাশ নীল শার্ট আর মেঘরঙ্গা জিন্স,
উস্কুখুস্কু ঝাঁকড়া চুলের একখন্ড ঝড়োয়া মেঘ।
কয়েকটা মুহূর্ত মাত্র!!
আর কক্ষচ্যুত আমার পৃথিবী,
আহ্নিকগতির দিক বদল,
আর ভরদুপুরে ফিনিকফোটা জ্যোৎস্না নামা…
সেই ত্রিশ সেকেন্ডের দেখা
আজ অবধি বুকের মাঝে আতশবাজির ফোয়ারা ছোটায়।
রঞ্জন…সে দিনটা এখনো মনে আছে জানো?
তারিখটা ছিল ২৯শে আগস্ট।
এরপর কলাভবনের চত্বরে,
হঠাৎ চোখের সামনে কোথাও একটা চেনা ছায়া।
কোথাও সেই ঝড়োয়া বাতাস, এক টুকরো কালবোশেখী।
বিভোর আড্ডার মাঝেও বাধ্য হলাম তাকাতে।
বুকের ভেতরে ওই অদ্ভুত ধুকপুকানিটা
এ জীবনে যতোবার হয়েছে,
ততোবারই জেনেছি আমি প্রেমে পড়েছি।
সেদিনও জানলাম।
চোখের সামনে সেই রোদ-পোড়া রাস্তা, বাসের দরজা,
সর্বনাশা দুপুর আর ঝড়ের মতো তুমি,
আবার ভেসে এলো সবটা।
পরিচয় হলো সেদিনই, ১৯শে সেপ্টেম্বর।
সেদিন তোমার সাবলীল আলাপভঙ্গী, জড়তাহীন কথা,
সমুদ্রের মতো কন্ঠস্বর,
আজও বুকে তীর হয়ে বিঁধে আছে।
আমি ডুবেছিলাম রঞ্জন!!
সাঁতার জেনেও ডুবেছিলাম,
ভাসতে চাইনিতো…
তোমার বলিষ্ঠ বাহুতে, নীলাভ গালে আমার বিকেল থমকে গিয়েছিলো।
ওই পুরুষালী বুকে, একাকী চিবুকে মনের আঙ্গুলের অবাধ্য এক্কাদোক্কা,
ফিসফিসিয়ে বলেছিলাম তখনই "শিরায় শিরায় বিষ!!"
তোমাকে ভাবলে এমন অস্থির লাগে...
ভয় থাকে না, লজ্জা-দ্বিধা কিচ্ছু থাকে না আমার।
তুমি আমায় বড্ড নির্লজ্জ্ব, খুব বেপরোয়া করে দাও।
চৌরাস্তার মোড়ে ভীড় অগ্রাহ্য করে তোমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে পারি,
মস্ত উঁচু ইমারত থেকে বাতাসে ছুঁড়ে দিতে পারি ভালোবাসার স্বীকারোক্তি,
খুব সহজেই সব ছেড়ে তোমার জন্য বন্ধুর পথ হাঁটতে পারি।
আমার সবটাই যে দিয়ে ফেলেছি এই তোমায়,
টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে রেখেছি তোমার চারপাশে।
নিকোটিনের গন্ধমাখা ওই কালচে ঠোঁটের টোপ গিলেছি,
তোমার ওই উড়াল চোখের ফাঁদে মন দিয়েছি।
রঞ্জন!! এই চাঁদ টাঙ্গানো নাভী, এই বাদামীরঙ্গা যৌবন
তোমায় ছাড়া বড্ড ফাঁকা, খুব বেমানান জানো?
ভেতরের এই উথাল পাথাল ঢেউ
কখনো জোয়ার এলে আনমনে ওই আঙ্গুলে ছুঁয়ে দেখো…
যে আঙ্গুল ভুল করেও ছুঁয়ে গেলে ধমনীতে চিড়বিড়িয়ে ওঠে প্রেম।
বিশ্বাস করো রঞ্জন…
তোমায় দেখলে সব ভুলে যাই।
তোমাকে ভাবলেই রক্তেমাংসে নেশা ধরে,
তুমি ঝাঁচকচকে আগুন, খিদের মতো টাটকা আগুন।
ভুলে যাই যে আমার শরীর মনের ক্রাশ
এই তুমি বন্ধুর ছোটভাই,
আমার চেয়ে ঠিক এক বছর ৪ মাস ৮ দিনের ছোট।
কখনো বলা হবে না তোমাকে "এইইই শোন...তুমি আমার শিরায় শিরায় বিষ..."
সাথে থাকা হলেও জানি তোমার পাশে থাকা হবে না।
বছর কুড়ি পরে আমরা যখন ঘোরসংসারী,
হয়তোবা খুব সুখীও,
বুকের মাঝে ফাঁকা লাগলে জেনে নিও ঠিক
ওখানটাতে ছিলাম আমি।
একলা দুপুর-গহীন রাতে অস্থিরতা, আনমনে ঘোর,
লাগলে তখন জেনে নিও আমিও ছিলাম,
আমিও তোমার “শিরায় শিরায় বিষ।“
© শিখা রহমান
(ছবি ইন্টারনেটে সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৫