somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভেঙে পড়ে ঝাউ, বালির উত্থান, ওড়ে ঝড়/ তোমার চোখের নিচে আমার চোখের চরাচর

৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মনে আছে, তখন ১৯৯৮ সাল। শাবিপ্রবিতে একবার বন্ধুরা মিলে পরিকল্পনা করছিলাম, ভার্সিটি গেটে পজিশন নিয়ে একটা বইয়ের দোকান করবো। নাম হবে, ’মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয়’। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও সেই পরিকল্পনা আমাদের কল্পনাতেই রয়ে যায়। তখন সাধ ছিল, সাধ্য ছিল না। আর আজ ২১/০৪/২০২১ এ এসে বাংলা কবিতা আর গদ্যের গুরু শঙ্খদার প্রয়াণে যখন স্মরণ করছি আমাদের সেইসব শঙ্খ বিজরিত প্রাণময় দিনগুলোর কথা, সেইসব স্বপ্নের কথা, তখন মুহম্মদ ইমদাদ সিলেটে, পলাশ দত্ত ঢাকায়, এমদাদ রহমান প্যারিসে আর শামীম ভাই ব্রিসবেন। আমাদের দেখা হয় না বহু বছর। এখনও সাধ আছে, এবার সাধ্যও আছে, কিন্তু নাই শুধু সময়।— এইরকমই একটা পোস্ট ছিল সেদিন ফেবুতে আমার। অন্য অনেকের পোস্ট দেখতে দেখতে ভাবছিলাম এই প্রয়াণ কি এতাটাই অবাক হওয়ার? অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল কি? সত্যিই মেনে নেয়া অনেক কষ্টের এটা? নাকি এটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘ জীবনের পর শেষ সময়ে এসে তখনও কি পৌঁছননি তিনি মৃত্যুর দ্বারে! এইতো গত বছর এই সময়েই তো চলে গিয়েছিলেন প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়। তখনই আশঙ্কা হয়েছিল—কতো হলো শঙখদার—৮৮? ভাবছিলাম, তিনি তো দিব্যি আছেন—নাকি তাঁরও সময় হয়ে এলো সন্তর্পণে? —এইসব ভাবনার ভেতর এমদাদ রহমান কমেন্টস করলেন—

আজ সারাদিন এইসব ভেবে ভেবেই কেটেছে ঋতো। তিনি আমাদের সময়ে বেঁচে ছিলেন না কি আমরা বেঁচে ছিলাম তাঁর সময়ে!! শাবি'র প্রতিটি দিন আমাদের শঙখের নাম দিয়েই বোধ হয় শুরু হতো, শেষ হতো আদিগন্ত হাঁটতে হাঁটতে...

লিখলাম: হ্যাঁ। আর আমার বিছানায়, বালিশের পাশেই থাকতো ওঁর জার্নাল। মনে আছে, একেবারে শুরুর দিকে, আমরা বসে ছিলাম তখনকার ক্যানটিনের সামনের দিকের ঘাসে। বিকেল বেলা আড্ডা দিচ্ছিলাম। পলাশ দত্ত এসেই বললেন, যেকোনো একজন কবির নাম বলো তো। বললাম শঙ্খ ঘোষ। পরমুহূর্তে মনে হলো কেন এলো এই নাম। এই কবির কোনো কবিতা কি পড়েছি আমি? হ্যাঁ, কয়েকদিন আগেই তো পড়ছিলাম,.. ভেঙে পড়ে ঝাউ, বালির উত্থান, ওড়ে ঝড়/ তোমার চোখের নিচে আমার চোখের চরাচর/ ওঠে জেগে..

এই যে তাঁর নাম, 'শঙখ', এই শব্দটির ভেতর আমি সব সময় আমাদেরকে দেখতে পাই ঋতো— তুমি, ইমদাদ, জাহিদ ভাই, শামীম ভাই, দীন ভাই, পলাশদা, সুমন...

অথচ তাঁর কবিতার সাথে পরিচয়ের পর বিগত ২৪ বছরে কখনো দেখা হয়নি তাঁর সাথে। তিনি আমাদের অন্তরাত্মায় এতোটাই প্রথিত হয়েছিলেন যে আলাদা করে সেটার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি কি-না সেটাই ভাবতে হচ্ছে আজ। কিংবা হয়তো মুখোমুখী সাক্ষাতের যোগ্য তখনও মনে করিনি নিজেদের। দু’বছর আগেও তিনি এসছিলেন ঢাকায়। আমিও তখন ঢাকাতেই ছিলাম। যাবো যাবো করেও যাওয়া হয়নি সেবার বাতিঘরে। মনে পড়ছে ২১ তারিখের নির্মলদার সেই পোস্টটির কথা—

কবি শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে ঢাকার বিখ্যাত গ্রন্থবিতান "বাতিঘর"-এ আমার হঠাৎ দেখা হয়েছিলো গত ২০১৯ সালের কোনো একসময়। সম্ভবত ফেব্রুয়ারি মাসে হবে। তিনি একটি সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিলো, কিন্তু কোনো কথা হয়নি। তাঁর হয়ে বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর আমাদের কুশল বিনিময়ের আগেই আমাকে জানায় যে শঙ্খ ঘোষ কথা বলতে পারেন না। তাঁর গলায় কী একটা অসুখ হয়েছে—ডাক্তারা কবিকে নিষেধ করেছেন কথা বলতে বা কথা বলার চেষ্টা করতে। আমি একটু অবাকই হলাম। কথাই যদি বলতে না পারবেন, তবে সাহিত্য সম্মেলনে এলেন কেন? ভাবলাম, কিন্তু বললাম না। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্ণধার, বিশিষ্ট সাহিত্যিক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ কবি শঙ্খ ঘোষকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন। ভাবলাম কথা বিনিময়ই যখন হবে না, তখন আর সময় নষ্ট করে লাভ কী? আমি আমার চিত্রগ্রাহকদের বললাম, তোমরা চট করে আমাদের কিছু ছবি তোল। ভবিষ্যতে এই ছবিগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। এই ছবিতে নন্দিত কবি শঙ্খ ঘোষ আছেন, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ আছেন এবং লাস্ট বাট নট দি লিস্ট আমিও তো আছি। এই বলে আমি হাসলাম। কবি শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে আজ সেই দুর্লভ মুহূর্তের দুটো ছবি প্রকাশ করা হলো। ওপারে কী আছে জানি না। ভালোকিছু থাকলে কবি শঙ্খ ঘোষের যেন তা পাওয়া হয়।

এদিকে, মুহম্মদ ইমদাদ লিখলেন: আমাদের অহংকার এই যে, আমরা বেঁচে ছিলাম শঙ্খ ঘোষের সময়ে। বিদায়, কবি শঙ্খ ঘোষ, আমাদের কালের রাখাল!! আর পোস্ট করলেন শঙ্খের “বৃষ্টি” কবিতাটি—

আমার দুঃখের দিন তথাগত
আমার সুখের দিন ভাসমান!
এমন বৃষ্টির দিন পথে পথে
আমার মৃত্যুর দিন মনে পড়ে।

আবার সুখের মাঠ ভরা জল
আবার দুঃখের ধান ভরে যায়!
এমন বৃষ্টির দিন মনে পড়ে
আমার জন্মের কোন শেষ নেই।


আবার ২১ তারিখে ব্রিসবেন থেকে শামীম ভাই লিখলেন: ১৯৯৯ সালে সাস্ট বইমেলায় আমরা একটি স্টল দিয়েছিলাম।| মূল উদ্যোক্তা ছিল পলাশ দত্ত। আমি, মুহম্মদ ইমদাদ, এমদাদ রহমান সহ আমাদের সময়ের সাস্ট ক্যাম্পাসের “পড়াশুনা”কে সেকেন্ডারি-কিছু করে চলা সব পোলাপাইন পলাশের সাথে ছিলাম।| ট্রাঙ্ক ভর্তি করে বই এনেছিলাম “বইপত্র” থেকে। স্টলের নাম দিয়েছিলাম তাঁর কবিতার নামে – ‘মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয়’। তখন বা এর কিছু আগে থেকে তাঁর কবিতার সাথে আমার পরিচয়। জীবনানন্দ দাশের পরে বাংলা কবিতার সবচেয়ে বড় নক্ষত্র ছিলেন তিনি। আজ তিনি চলে গেলেন (বলতে হবে করোনা তাঁকে নিয়ে গেলো)। বিনম্র শ্রদ্ধা।

এক মরণের থেকে আরেক মরণে যেতে যেতে
আমার আমির থেকে জেগে ওঠে আরো আরো আমি..



--ঋতো আহমেদ
৩০/০৪/২০২১

নির্মলদা: কবি নির্মলেন্দু গুণ
পলাশদা: কবি পলাশ দত্ত
মুহম্মদ ইমদাদ: কবি
এমদাদ রহমান: গল্পকার, অনুবাদক
দীন ভাই: কবি মোস্তাক আহমাদ দীন
শামীম ভাই: বিজ্ঞানী মুহাম্মদ জে এ সিদ্দিকী, গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি
জাহিদ ভাই: লেখক; নিউজ এডিটর এণ্ড হেড অব নিউজরুম, bdnews24.com
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:১৪
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×