
অনেক দিন আগের কথা। সেই নির্বাচনের আগের দিনটা। বাসায় ফিরছিলাম, টাউন হলের সামনে নেমে গেলাম টুকটাক বাজারের কাজে। বাজারে শুনি দুই তরুণের আলোচনা। অনেক গরীব দুজন, টুকটাক মালামাল টানাটানির কাজ করে ক্লান্ত হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। পাশে দাঁড়িয়ে ওদের হতাশাগুলো শুনলাম, যুদ্ধাপরাধ নিয়ে ওদের বোধগুলায় আঁড়ি পাতলাম আর অবাক হলাম কারণ সকাল বেলাতেই এক ইন্জিনিয়ার বন্ধুর এসব নিয়ে বিরুপ কমেন্ট শুনে মন খারাপ হয়ে ছিলো। আমাদের অনেক শিক্ষিত জনের চেয়ে ঐ দুই তরুণের বিবেক অনেক পরিস্কার মনে হলো। মনের মাঝে অবিরাম খচখচানি, মোবাইল বের করে লিখে ফেললাম একটা লম্বা এসএমএস... বিষয়বস্তু ছিলো এমন -- যে লোক গুলো একাত্তরে এতোটা নৃশংসতা দেখাতে পারে, যে লোকগুলো নিজের মাতৃভূমি আর নিজের মানুষগুলোর সাথে এতোটা বেঈমানি করতে পারে, তাদের আমরা ক্ষমা করে কিভাবে আমাদের সেই দেশটাকে চালানোর ক্ষমতা দিতে পারি? কাল ভোট দেবার আগে প্লীজ অন্তত আরেকবার আপনার বিবেকের কাছে পরিস্কার হন। চেষ্টা করেন আপনার চারপাশের বিবেক গুলোকে জাগিয়ে তুলতে... মজার কথা কি জানেন, এই এসএমএস পাঠিয়েছিলাম মোবাইলে থাকা বন্ধু - কলিগ মিলিয়ে দশ পনেরো জনের কাছে, রাত তিনটার দিকে এক ভেন্ডরের পরিচিতজনের থেকে এই এসএমএসটাই পাই.... অবাক হয়ে গিয়েছিলাম পরেরদিন যখন শুনি এই এসএমএস টাও অনেক কে নাড়া দিয়ে গেছে....
এই তো সেদিন ব্লগে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম আমাদের বিলাসিতার চাকচিক্য নিয়ে.... সেই পোষ্টটাও এমনই এক খচখচানি থেকেই। পরেরদিন সাত সমুদ্দুর পাড়ের এক বন্ধুর ফোন। ফেসবুকে পোষ্টের লিংক থেকে এসে পোষ্ট পড়ে ফোন দিয়েছে। বললো আমরা আসলেই তো এভাবে ভাবিনাই, দেশে থাকতে বসুন্ধরা সিটিতে কতো মজা করেছি, কতো পয়সা খরচ করলাম... আরও অনেকের কম্প্লিমেন্ট থেকে আবার নতুন খচখচানি থেকে এই পোষ্ট

মূল কথা হলো আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের পরিমাপ করা, বুঝতে চাওয়া আমরা নিজেরা কতটুকু পারি... কদিন আগে কৃষি মার্কেটে সামান্য পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার কারণে কোটি কোটি টাকার চাল ডাল নষ্ট হলো। ব্যবসায়ীরা কান্নাকাটি করে বললো সরকার, সিটি কর্পোরেশন সমসয়মতো পানি নিস্কাশন পথ ঠিক করলে এমনটি হতো না। আচ্ছা এই যে এরা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে, প্রত্যেকে এক লাখ কিংবা হাজার পন্চাশেক টাকা দিলে একটা আধুনিক পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা কি করা সম্ভব ছিলো না? আমাদের বাসার সামনে রাস্তায় একটা বিরাট গর্ত, অন্ধকারে কিংবা পাশাপাশি দুটো রিকশা গেলেই কাউকে না কাউকে গর্তে চাকা নামাতেই হয় আর তারপরেই মারাত্মক ঝাঁকুনি... গর্তের চারপাশে চারটা বাড়ি, চার বাড়িওলা পাঁচ হাজার করে দিলেই আরামে গর্ত বোঁজানো যায়। বলেছিলাম আমাদের বাড়িওলাকে, উনি হেসেই উড়িয়ে দিলেন, বললেন ওয়ার্ড কমিশনারকে জানানো হয়েছে, ঠিক করে দিবে... আরে ভাই গর্তটা তো আপনারাই কেউ খুঁড়েছিলেন নিজেদের বাড়ির কোনো কাজে, দিনে দিনে আজ এতো বড় হয়েছে, এখন সিটি কর্পোরেশনের মুখ চেয়ে কেনো?
এসব দেখলে খারাপ লাগে, মনে হয় কিছুই করবার নেই... সরকার ব্যবস্থাই তো একটা নিস্ক্রিয় সিস্টেম এই দেশে, তার মুখ চেয়ে আবার হাঁ করে তাকিয়ে থাকা... কদিন আগে বিআরটিএ গেলাম, স্রেফ একটা রেজিস্ট্রেশনের কাজে কি পরিমান দালাল আর দুর্ণীতি, শিক্ষা হয়ে গেছে এক বেলাতেই

শেষ করি একটা প্রস্তাব দিয়ে... এই ব্লগের আমাদের নিজেদের মাঝে চমৎকার কিছু ভার্চুয়াল সম্পর্ক... সামনে রোজা - ঈদ, সবাই কমবেশী বোনাস, টাকা পয়সা পাবে... সবারই বাজেট হবে, সামর্থ্য মতো শপিং... আমরা এই ব্লগের পন্চাশ জন সহ ব্লগারও যদি বাজেট থেকে হাজার খানেক টাকা কিংবা পাঁচশো টাকা আলাদা করে রাখি তবে কি খুব সংযম করতে হবে? মনে হয় না... এই অল্প কয়টা টাকা যদি আমরা কোনো একটা অসহায় লোককে কোনো একটা কাজ করার মূলধন হিসেবে দিতে পারি, আর সেই টাকায় যদি কোনো একটা পরিবার সামনের একটা বছর একটু হলেও স্বাছন্দ্যে থাকতে পারে তবে ক্ষতি কি.... অন্তত আমাদের নিজেদের মাঝে একটু হলেও ভালোকিছু করার ইচ্ছাটা তো জাগ্রত হবে... সহ ব্লগারদের দু এক জনের সাড়া পেলেও অনেক ভালো লাগবে...
কে জানে এই ইচ্ছাটাই সামনে অনেক বড় কিছু হতে পারে... চেষ্টা করতে দোষ কি, আপনার সামনের ছোট কোনো সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামান না একটু সময়, দেখাই যাক না আমরা নিজেরাও পারি কিনা.... আপনি, আমি কিংবা আমরা একজনের বিবেককে যদি নাড়াতে পারি কিংবা একটা ছোট্ট মুখে আলোকিত হাসি আনতে পারি, সেটাই কি অনেক কিছু করে ফেলা নয়?
চমৎকার সেইসব দিনের প্রত্যাশায় আশাবাদী হয়ে আছি..........................
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১১:৫৭