আমার পিতার রক্তে রঞ্জিত হলো
আমার বাড়ির নিকোনো উঠোন ।
ছাব্বিশ জুলাই ঊনিশ‘শ একাত্তর,
সুনন্দপুর গ্রামে হানা দিল
পাকিস্তানি হায়েনারা ।
মর্টার মেশিনগান আর চীনা রাইফেলের
গর্জনে প্রকম্পিত হলো,
সবুজ ফসল, স্তব্ধ দীঘির কালো জল
আর গোরস্থানের শবদেহ গুলো ।
হানাদারদের সাথে ছিল
বাংলায় কথা বলা কতো গুলো চেনা কুলাঙ্গার।
বসন্তে রক্তে রাঙা ফুল ছড়ানো
আমার বাড়ির আঙ্গিনার পলাশ গাছটির তলায়
দড়ি পেঁচিয়ে সার বেঁধে দাঁড় করানো হলো,
গ্রামের স্কুলের কৃতী শিক্ষক
আমার তিন চাচা,আমার পিতা এবং
পাকিস্তানি দস্যুদের ভয়ে নিজ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আসা লজিং মাস্টার,
যার কাছে আমার অ আ ক খ এর হাতে খড়ি ।
পাঞ্জাবী অফিসার মেজর জং বাহাদুর
হিংস্র নেকড়ের মতো গর্জে উঠলো --- “ফায়ার“!
এলএমজির বিকট শব্দে,ছিন্ন ভিন্ন, ঝাঁঝরা হয়ে গেলো
আমার পিতা, চাচা আর প্রিয় শিক্ষকের
নিষ্পাপ দেহ ।
শহীদের রক্তের প্লাবনে রক্তিম হলো
সোনালী ধান ছড়ানো নিকোনো উঠোন ।
সে উঠোন দীর্ঘ আটাশ বছরেও
হয়নি নিকোনো,
শহীদের রক্তের পুষ্টি পেয়ে উঠোনে
বেড়ে উঠেছে ঘন সবুজ ঘাস ।
প্রতি ফাল্গুনে পলাশের লাল ফুল
আর সবুজ ঘাসে একাকার হয়ে
চিত্রিত হয় রক্ত সূর্য পতাকা ।
আজও সে পতাকা বদলে দেবার স্বপ্ন দেখে,
পাকিস্তানিদের জারজ সন্তান
একাত্তরের কুলাঙ্গার দালাল সম্প্রদায় ।
একাত্তরের বার বছরের কিশোর
আমি এখন পরিণত যুবক,
মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নেয়া আমার
অতৃপ্ত হৃদয় এখন প্রস্তুত ;
প্রিয়তমা স্ত্রী আর স্নেহের সন্তানের মায়া কাটিয়ে
স্বাধীনতা বিরোধী যে কোন অপতৎপরতা
ধুলিস্মাৎ করার মানসে প্রস্তুত;
প্রস্তুত একাত্তরের হাতিয়ারকে
নতুন করে শানানোর দৃঢ় প্রত্যয়ে
অন্তরের অলক্ষে পুষে রাখা সুতীব্র শ্লোগান ---
“Annihilate these demons” |
৬ ডিসেম্বর ১৯৯৯/ চট্টগ্রাম