”মা “ ডাকটি শোনার জন্য একজন “মা” সেই প্রথম যেদিন বাচ্চাটি পেটে আসে সেদিন থেকে কত যন্ত্রনাই যে ভোগ করতে হয় তা একজন মা-ই জানে। এটি পৃথিবীর কোন পুরুষ কল্পনাও করতে পারবে না । তাতে সে তার স্ত্রীকে বা প্রেয়সীকে যতই ভালবাসুক। এ এক মায়ের কস্টের মাঝে সুখের অনুভূতি। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আমরা জানি ১০ মাস ১০ দিন বাচ্চা পেটে মা ধারন করে। আমি জানি না এ তথ্যটি কোথা থেকে এসেছে বা কীভাবে এসেছে? সত্যি কথা হলো কোন বাচ্চাই ১০মাস ১০ দিন পরে নয় বরং ৯ মাস ১০ দিন পরে বা আগে হয়!শিশুটি জন্ম নেবার পর মা তার সমস্ত কস্ট বা বেদনা সত্যি এক মুহুর্তে ভুলে যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য নয় মাসের সে কি যন্ত্রনা তা কি করে একটি বাচ্চার মুখ দেখার সাথে সাথে একজন মা’ ভুলে যায়? মনে হয় কি যেন জয় করেছি? আমি অনেক কিছু পেয়েছি। তবে এর সাথে এটিও কিন্তু সত্যি কথা প্রথম সাত দিন খুব একটি মায়া হয় না….অনেকে হয়ত ভাববেন সেটি কি করে হয় ! এটাই হয়…এরপর সাত দিন যেতে না যেতেই কেমন একটি টান….কেমন অনুভব মনে হয় কলিজার সাথে সম্পর্ক! বাচ্চা যখন কেঁদে ওঠে তখন কিসের আগুন আর কিসের পানি? দৌড়ে বাচ্চার কাছে না আসতে পারলে সে যে কী অস্থিরতা ঘিরে ফেলে সমস্ত শরীরে তা বলে বোঝানোর বিষয় নয়! এ এক অন্য অনুভূতি। এ এক মায়ের অনুভূতি। মা' কথাটি বা শব্দটি এই পৃথিবীর সবচেয়ে আপন। সন্তানের প্রতি মায়েরই থাকে নিস্বার্থ ভালবাসা ! সন্তানের জন্য ব্যাকুল থাকে মায়ের মন।এই ধরনীর সকলেই মায়ের আদরেই বেড়ে উঠতে চায়। ঠিক তেমনি ভাবে মায়ের আদর, স্নেহ, আর অকুন্ঠ ভালবাসা সকলের মানব হৃদয়কে উদ্বেলিত করে তুলে। একজন মা' অনেক চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে সন্তানকে আদর , মমতা আর সোহাগ দিয়ে মানুষ করার প্রানান্তকর চেষ্টা করে থাকে। আর এই মায়েদের মধ্যে একটি বিভাজন আছে বলে আমি দেখি। তা হল- মা- আর চাকুরী জীবি মা !
মা ঃ অনেকেই বলেন, একজন ঘরে থাকা মা সন্তানের জন্য বেশি কল্যানকর। অনেকটাই যে কল্যানকর তা আমিও অস্বীকার করব না। একজন গৃহিনী মা’ তিনি সবসময় বাচ্চার সাথে থাকেন। বাচ্চাকে স্কুলে ড্রপ করেন আবার স্কুল থেকে নিয়ে আসেন। স্কুল ছুটির পর বাচ্চাকে নিয়ে কোথাও বসে ফুসকা খান। বাচ্চাকে হাতে তুলে খাওয়ান হোক না সে কলেজ পড়ুয়া ছাত্র !বাচ্চা রোদে পুড়ে স্কুল থেকে আসলে মাথা ব্যথার কথা শুনলে মা’ সব কাজ ফেলে মাথাটাও টিপে দেন। শীতে ঠান্ডা লাগবে বলে নিজ হাতে কুসুম গরম পানি বাথরুমে রেখে আসেন। এই ঘরে থাকা মায়ের আদর স্নেহে বড় হয়ে ওঠে তার সন্তান। এই বাচ্চাটি হয়, আবেগী, আদব কায়দা শিখে মায়ের মতো, সবকিছু চলে রুটিন মাফিক। মায়ের আদর বেশি পায় বলে এটি তার যেমন সৌভাগ্যের ব্যাপার তেমনি এর একটি খারাপ দিকও আছে। মায়ের আদরে বেড়ে ওঠা বাচ্চাটি পরনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। সব কাজ মা করে দেয় বলে সে নিজে কোন কাজ করতে শেখে না। প্রাকটিকাল খাতা হোক বা আর্ট সবকিছু্ মা জানে বাচ্চাটি নয়। কোন অভিভাবকের সাথে কথা বলে কোন নোট শীট কালেক্ট করা সেটাও মায়ের কাজ ।ফলে সন্তানটি জানে না কারো কাছ থেকে কীভাবে বা কি কথা বলে একটি শীট বা প্রয়োজনীয় নোটটি আনতে হবে। অর্থাৎ একজন মায়ের আদরে বেড়ে ওঠা সন্তানটি আদর ভালোবাসায় বেড়ে উঠলে পরনির্ভরশীল থাকে বেশি। এক্ষেত্রে মায়েদের একটু সচেতনতা জরুরী বলে আমি মনে করি।
কর্মজীবি মাঃ অনেকেই বলেন, একজন ঘরে থাকা মা’ আর একজন কর্মজীবি মা’ এর মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। কিছুটা যে আছে তা আমিও অস্বীকার করব না।একজন ঘরে থাকা মা’ যেমন সন্তানকে আদর সোহাগ দিয়ে, মনের মতো পছন্দের রান্নাটি করে খাওয়াতে পারেন তা একজন কর্মজীবি মা পারেন না। একজন কর্মজীবি মা যেমন তার সন্তানকে ২৪ ঘন্টা হয়তবা সময় দিতে পারেন না কিন্তু যতটুকু সময় পান তা সন্তানকে দেয়া থেকে কখনোই বঞ্চিত করেন না। তেমনি অফিসে বসে কতদিন যে তার দুপরের খাবারটা বক্স ভরেই বাসায় ফিরে এসেছে বা অফিসের কোন স্টাফের খাবার হয়েছে তা একজন কর্মজীবি মা’ ই জানে। অফিস প্রোগা্রমের অনুষ্ঠানে যখন নিজ সন্তানের প্রিয় খাবারটা থাকে মেন্যুতে তখন চোখের কোনে একফোটা জল এসে কখন যে নিজের অজান্তেই জমে যায় তা একজন কর্মজীবি মা’ই জানে। কত কস্টে সেই খাবারটা তার খেতে হয় সমাজ রক্ষার জন্য ! আর কেউ জিজ্ঞেস করলে, চোখের পানি ট্যিসু দিয়ে মুছে আর একজন কর্মজীবি মা’ বলে চোখে একটা ময়লা গেল। অফিস সহকর্মীরা যখন কাজের মেয়ে দ্বারা কিভাবে সন্তান নির্যাতীত হয় তা আলাপ চারিতা করে তখন একজন কর্মজীবিই মা’ জানে কিভাবে তার শ্বাস আটকে যায় ক্ষনে ক্ষনে।অফিস ছুটির কিছুক্ষন আগে আসার জন্য একজন মা’ যে কত ছটফট করে তা একজন কর্মজীবি মা’ ই বোঝে! ১০ টি মিনিট আগে যখন অফিস থেকে বের হতে পারে তখন সে কি আনন্দ তা কি করে বোঝান সম্ভব! এ কি খুব বেশি পাওয়া! কেউ হয়ত অলস সময় পার করে আর কারো কাছে ১০ টি মিনিট কত আনন্দের!বাসায় ফিরে ড্রেসটা কোন রকম পরিবর্তন করতে না করতেই বা্চ্চা খেল কিনা, গোসল করল কিনা, কোথাও কোন আঘাত পেল কিনা খবর নেয়া শুরু করে চলে যাওয়া হয় রান্না ঘরে। কালকের জন্য আবার সন্তানের খাওয়া, পরার হিসেবটা করতে হয় রাতের মধ্যেই। অথচ অফিস থেকে এসে হয়ত নিজের মুখটা ধোয়ার সময়টাও জোটেনি কপালে ।একজন কর্মজীবি মায়ের সন্তান পরনির্ভরশীলের চেয়ে আত্মনির্ভরশীল বেশি হয়ে উঠে। যা তার ভবিষ্যেতের জন্য ভাল ভূমিকা রাখে। কারন ছাড়া যেমন কোন কিছুই ঘটে না তেমনি একজন মা’ কর্মজীবি কেন হয় তার পিছনেও থাকে তার নানান কারন। এক কথায় তা ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। হয়ত আজ যিনি কর্মজীবি মা’ কয়েকটা বছর আগেও তিনি ছিলেন কারো মেয়ে। তাই অনেক নারীর কর্ম করতে হয় পরিবারের জন্য বা কেউ করেন তার নিজ পরিবারের জন্য বা কেউ করেন তার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য বা কেউ করেন তার পরিবারে সে একাই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বলে ! তারচেয়ে বড় কারন হিসাবে আমি যেটাকে প্রাধান্য দিব, একজন কর্মজীবি মা’ ও এক সময় পড়াশুনা করেছেন, স্বপ্ন দেখেছেন নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং দেশের জন্য..তাই তো মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করেছে..আজ একজন মা’ হয়েছেন বলে তাকে কেন সব ইচ্ছাকে বিসর্জন দিতে হবে? কেন? সব সময় একজন মা’কেই কেন সমাঝোতা করতে হয় তার সবকিছুতে হোক সেটি ছোট চাওয়া বা স্বপ্ন !
পরিশেষে, আমি বলতে চাই সবার উদ্দেশ্যে কর্মজীবি মা’ একজন ঘরে বসে থাকা মায়ের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করে বলে তার কিছুটা ভুল ত্রুটি হয়তবা থেকে যায়! তাই বলে আমরা যেন একজন কর্মজীবি মা’কে অবমূল্যায়ন না করি! মনে রাখতে হবে…মায়ের কোন বিভাজন হয় না…..মায়ের তুলনা শুধু মা-ই।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৬