বলাকায় নাইট শো দেখে ফিরলাম। ছবির নাম অবশ্যই- ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’। হুমায়ূন আহমেদের ছবি। শুধু তাই না, সর্বশেষ ছবি। একটা সিনেমার জন্যে অধীর আগ্রহে বসে থাকার জন্যে এর চেয়ে বেশি আর কি লাগে? তারওপর আগ্রহটা আরও অনেক বেড়ে গিয়েছিলো মানুষের লাফালাফি দেখে। সত্যি কি অশ্লীল কিছু আছে এর মধ্যে? সত্যি কি সমকামীতা কে ‘বৈধতা’ দেয়াকে উৎসাহিত করেছেন হুমায়ূন আহমেদ? শ্রাবণ মেঘের দিন, আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া যার কাছ থেকে পেয়েছি, তাঁর রুচি কিভাবে এতো নিম্নমানের হবে? মুক্তি পাওয়ার আগেই, না দেখেই সবাই এতো লাফ-ঝাঁপ করছে কেন? একটা ছবির সমালোচনা করার জন্যে সেটা দেখা তো অন্তত জরুরী। কিন্তু হুজুগে বাঙালীর ততোটুকু দেরী সয় না। বলাকার সামনের পোস্টারেও দেখলাম লেখা আছে, 'শিশুদের সাথে আনবেন না'।
যাই হোক। রিভিউ তে চলে আসি।
মূল সিনেমা শুরুর আগে সেটার পটভূমি সম্বন্ধে কিছু ইনফরমেশন দেয়া হয়। সেখানে জানানো হয়, প্রায় দেড়শো বছর আগে সিলেটের হাওর অঞ্চলের এক বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেঁটুগান নামক নতুন এক ধরনের জলসা শুরু হয়। রূপবান কিশোররা এখানে মেয়েদের সাজ সেজে নাচ-গান করতো। ধীরে ধীরে বিষয়টা আরও ছড়িয়ে পড়ে, তৎকালীন বিত্তবান ও জমিদারদের কাছে জনপ্রিয় ওঠে ঘেঁটু গান। একসময় এর মধ্যে অশ্লীলতা ঢুকে পড়ে, সেইসব রূপবান কিশোরদের কে জমিদাররা যৌনসঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে। জমিদারদের স্ত্রীরা এসব অসহায় কিশোরদের সতীন বলে মনে করতো।
সিনেমাটার শুরুটা চমৎকার। ওপেনিং সিনে দেখা যায়, গম্ভীর চেহারার আপাত নির্মম জমিদার চৌধুরী সাহেব (তারিক আনাম খান) তার বিশাল জমিদার বাড়ির ছাদে বসে পোর্ট্রেট করাচ্ছে শাহ আলম (আগুন) নামের এক তরুণ শিল্পীকে দিয়ে। ছাদ পেরিয়ে ওপাশে দেখা যাচ্ছে বর্ষার পানিতে টুইটুম্বুর হাওর। সেই হাওরের পানিতে নাচ-গান করতে করতে বজরায় করে জমিদার বাড়ির আমন্ত্রণে আসছে সিনেমার প্রাণ- ঘেঁটু গানের দল।
তিন মাস হাওরের পানিতে জলবন্দী থাকে সে অঞ্চলের মানুষ, সে সময়ের অলস জীবনে আনন্দ-ফূর্তির জন্যেই চৌধুরী সাহেব ভাড়া করে নিয়ে আসেন ঘেঁটু দলকে। সাধারণ সময় তারা গান-বাজনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, কিন্তু গভীর রাতে জমিদারের বিকৃত লালসার শিকার হয় দলের নেতার(জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়) ছেলে ও দলের মূল নর্তকী কমলা। এমনিতে সে ছেলে হিসেবেই ঘোরাঘুরি করে সারাদিন, কিন্তু রাত হলেই মেয়েদের মতো গালে রুজ মেখে, চোখে কাজল মেখে পায়ে ঘুঙুর পরতে হয় তাকে। চৌধুরী সাহেবের মনোরঞ্জনে জলসায় নাচতে হয়। রাত আরও গভীর হলে আপাত ধার্মিক জমিদার বাড়িতে নিকৃষ্টতম পাপের দরজা খুলে যায়; কমলার আর্তনাদে চমকে উঠে জমিদারের স্ত্রী, ছোট্ট কন্যা থেকে শুরু করে কমলার নিজের বাবা। দারিদ্র্যের কষ্টে জেনেশুনে নিজের ছেলেকে এ পথে নামানোর কষ্টে ছটফট করে কাঁদতে থাকে বাবা, কিন্তু প্রতাপশালী জমিদারের বিরূদ্ধে মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারে না।
------আংশিক স্পয়লার------
জমিদারের স্ত্রী (মুনমুন আহমেদ) শুরু থেকেই কমলা কে দুই চোখে দেখতে পারে না, সত্যি যেন সতীন বলে মনে করে তাকে! জমিদারকে অনুরোধ করে তাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে, কিন্তু জমিদার তালাক দেয়ার হুমকি দিতেই সে নিরস্ত হয়। এমনকি চৌধুরী সাহেবের নির্দেশে কমলাকে তার নিজের হাতে সাজিয়ে দিতে হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে কমলার প্রতি তার বিদ্বেষ বাড়তেই থাকে। একসময় দাসীর (শামীমা নাজনীন) সহযোগিতায় কমলা কে হত্যা করার প্ল্যান করে জমিদার বউ। কমলার ছাদের কার্ণিশ ধরে হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস আছে। ঠিক হয়, তখনই তাকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয়া হবে।
পরিণতিতে কি হয়? ছবিটি দেখলেই বুঝতে পারবেন। এধরনের সিনেমায় অ্যাকশন ছবির মতো টেনশন তৈরি করা বেশ কষ্ট, কিন্তু নিজস্ব মুন্সিয়ানাতেই হুমায়ূন আহমেদ তা পেরেছেন।
-------------------------------------------------------
ছবিটার কাহিনী যতোটা সরল, ততোটাই ব্যতিক্রম। যে কারণে উপভোগ করেছি অনেক বেশি। ঠিক এই কনসেপ্টের ফিল্ম আমাদের দেশে কেন, হলিউড-বলিউডেও তেমন নেই বোধহয়! অন্তত আমি দেখিনি। সোজাসাপ্টা, কিন্তু ভিন্ন আইডিয়ার এই কাহিনী হুমায়ূনের ছোঁয়ায় রীতিমতো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এই ধরনের ফিল্মের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণে যে এনভায়রনমেন্ট, সেটা খুবই চমৎকার হয়েছে। ব্রিটিশ আমলের ছাপ প্রতিটি দৃশ্যে স্পষ্ট। জমকালো জমিদার বাড়ি, পানি থৈ থৈ হাওর, সবই চমৎকারভাবে মানিয়ে গেছে। সিঁড়িওয়ালা উঁচু উঁচু খাট, রূপার রেকাবি, পোর্ট্রেট ইত্যাদি ছোটখাটো জিনিস ঠিক ওই সময়েই যেন নিয়ে যায়।
জমিদারের চরিত্রে তারিক আনাম খানের চেয়ে ভালো সম্ভবত কেউ করতে পারতো না। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের প্রতাপশালী চরিত্রের স্থান পূরণ করে আসছেন। প্রবল ব্যক্তিসম্পন্ন এ জমিদার যেমনই নিষ্ঠুর, তেমনই দয়ালু। নিজের বিকৃত যৌনাকাঙ্খা মেটানোর জন্যে ঘেঁটু আনতে তার বাধে না, অন্যদিকে নিজের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হন ঘোড়ায় চড়ে, গরীব শিশুদের মিষ্টি বিলান। দান-খয়রাতের ব্যাপারেও কোন কার্পণ্য করেন না তিনি। আবার শিল্পের প্রতিও তার ঝোঁক আছে, যে কারণে গানের সাথে সাথে তাল দেন, শিল্পী রেখে নিজের পোর্ট্রেট আঁকান। অর্থাৎ, সবদিক দিয়েই তিনি একজন চমৎকার ব্যক্তিত্ববান জমিদার, শুধু যৌনতার দিক দিয়েই তিনি কিশোর সমকামী।
আর মামুন বাংলালিঙ্ক-এর অ্যাডটা করার সময় শিশুশিল্পী থাকলেও এখন কিশোর শিল্পী হয়ে গেছে। সে-ই ছবির কেন্দ্রীয় আকর্ষণ। কিশোর ‘জহির’ থেকে নাওচনেওয়ালী ‘কমলা’ তে পরিণত হওয়া তার সাথে একেবারে মানিয়ে গেছে। জলসার জন্যে কমলার সাজসজ্জার প্রতিটি মুহূর্তই বেশ টাচিং, আর এই উগ্র সাজসজ্জা পুরোপুরি মানিয়ে গেছে অভিনেতা মামুনের সাথে। রাতে যখন জমিদারের শয্যাসঙ্গী হওয়ার জন্যে তার ডাক পড়ে, তখন তার ভয়ে জড়সড় দৃষ্টি দেখলেই মায়া লাগে। বিশেষ করে প্রথম রাতে তার ‘মাগো’ আর্তনাদ শুনে খুব খারাপ লাগে। আর ছেলে হয়েও মেয়ে রূপে তার এই আচরণ অনেকের কাছে বেখাপ্পা লাগতে পারে শুরুতে, কিন্তু ব্যাপারটা সত্যি এমনই বেখাপ্পা! সেটা আরও ফুটে ওঠে জমিদারের ছোট্ট মেয়ে ফুলরাণীর সবাইকে প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে, “কমলা মেয়ে না ছেলে?” সাধারণ একটা গ্রাম্য কিশোর হিসেবেও তাকে চমৎকার মানিয়ে গেছে। জমিদারের নিষ্ঠুরতায় সে চিৎকার করে কাঁদে, আবার মন ভালো থাকলে চোখ বন্ধ করে ছাদের কার্নিশ ধরে হাঁটে। জমিদারের মেয়ের সাথে তার বেশ ভাব হয়।
এর বাইরে আর তেমন কোন ক্যারেক্টারকে উজ্জ্বল মনে হয়নি। আগুন পোর্ট্রেট শিল্পী হিসেবে অভিনয় ভালোই করেছেন, তার সাথে কমলার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জমিদার বাড়ির প্রতিটি মানুষ কমলা কে ঘৃণা করে, একমাত্র সে-ই কমলার দুঃখ বুঝতে পারে। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে প্রাণ রায়, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় সবাই ভালো অভিনয় করেছেন। আসলে হুমায়ূন আহমেদের কোন সিনেমাতেই কেউ ‘খারাপ’ অভিনয় করে না!
দুর্দান্ত গানসহ নাচগুলো সিনেমাটার অন্যতম আকর্ষণ বলে আমার মনে হয়েছে। মেয়ে হিসেবে কমলার নাচ দারুণ হয়েছে, হঠাৎ দেখলে মনে হবে, জমিদার বাড়িতে জলসায় নাচছে কোন পরমাসুন্দরী কিশোরী মেয়ে। এসব জায়গায় কমলার মেক-আপ যথেষ্ট প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটকেও এ ধরনের দলীয় যাত্রাগান রয়েছে। তবে ঘেঁটুপুত্র কমলার গানগুলো এদিক দিয়ে আগের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বলে আমার মনে হয়। কমলার সাথে সাথে ড্যান্স মাস্টার প্রাণ রায়ের নাচও ভালো মানিয়েছে।
এবার আসা যাক বহুল প্রতীক্ষিত প্রশ্নে, ‘সিনেমাটা কি সত্যি অশ্লীল?’
এক কথায়- না, একবিন্দু না। একটা অত্যন্ত অশ্লীল আর কুৎসিত বিষয়কে হুমায়ূন আহমেদে যেরকম রুচিশীল আর মর্মান্তিকভাবে দেখিয়েছেন, তা আজকের আমাদের দেশের আর কোন পরিচালক পারবেন বলে মনে হয় না। সবকিছু মিলিয়ে ছবিটায় কমলায় কষ্টই ফুটে উঠেছে। সেই সাথে সেসময়কার হাওর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা সম্বন্ধে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গিয়েছে। কমলা বেশ কিছু জায়গায় অন্তর্বাস ধরনের জামা পরে ঠিক, কিন্তু তা সিনেমার পরিবেশের সাথে এতোই মানিয়ে গেছে যে অশ্লীলতা দূরের কথা, তার জন্যে আপনার কষ্টই লাগবে। সমকামীতাকেও কোথাও ‘উৎসাহিত’ করা হয়নি এখানে। সেটার নিকৃষ্ট রূপটাই দেখানো হয়েছে। এটা যদি অশ্লীলতা হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় ধর্ষণের প্রসঙ্গ আনাও অশ্লীলতা।
আর সিনেমার ব্যানারে শিশুদের আনতে যে নিষেধ করা হয়েছে, এটাকে আমার ওয়ার্নিং-এর চেয়ে মার্কেটিং পলিসি-ই বেশি মনে হচ্ছে! শিশুদের দেখে এমন কিছু বুঝতে পারার কথা না। বুঝলেও সেটাকে খারাপ জেনেই বুঝবে। একটা মুভিকে বয়সসীমায় বাঁধা হয় তাতে কতোটা যৌনতার উপস্থিতি আছে তার উপর ভিত্তি করে। সেদিক থেকে এটি শিশুদের জন্যে এমন কিছু নয়। তারা আজকাল হলিউড মুভিতেও এর চেয়ে অনেক বেশি দেখে। তারপরও যদি কেউ ইচ্ছা করে অশ্লীলতা খুঁজে বের করতে চান, সেটা তার সমস্যা, সিনেমার নয়।
প্রতিটা সিনেমা নিয়েই পরিচালকের একটা চিন্তা থেকে, তিনি কোন নির্দিষ্ট একটা বিষয়ে দর্শকদের ফোকাস করতে চান। এই সিনেমাটার ফোকাস শুধু কমলার কষ্ট না, পাশাপাশি হাওর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা সম্বন্ধেও অনেক কিছু তুলে ধরা হয়েছে। যে কারণে বেদেদের সাপের নাচ, মুরগি লড়াই, গ্রাম্য জুয়া ইত্যাদি গ্রামীণ ব্যাপারগুলো সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।
এবার আসি আরেকটা প্রশ্নে। এটাই কি হুমায়ূন আহমেদের সেরা কীর্তি?
আমার কাছে তা মনে হয়নি। ভিন্নধর্মী এ কনসেপ্ট নিয়ে সিনেমাটাকে পূর্ণ করার আরও অনেক সুযোগ ছিলো, কিন্তু বার্ধক্যের কারণেই বোধহয় হুমায়ূন আহমেদ তা পারেন নি। কেমন যেন একটা তাড়াহুড়ার ছাপ আছে পুরো ছবিটার মধ্যে। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু দৃশ্যও আছে, যেগুলো না হলেও কোন অসুবিধা হতো না। কমলাদের এ পথে নামার পেছনে যেহেতু দারিদ্র্য রয়েছে, তাই কাহিনীটা আরেকটু পেছন থেকে শুরু করলে বোধহয় ভালো হতো। সিনেমার মাঝে মাঝে স্মৃতিচারণ হিসেবে কমলার মা আর বোনের কথা আসে, যেগুলো দৃশ্য হিসেবে সুন্দর হলেও ঠিক উপলদ্ধি আনতে পারে নি। আর ফিনিশিং আরও চমৎকারভাবে করার সুযোগ ছিলো। বেশ কিছু টেনশনের জায়গা আছে, সেগুলোকে আরও পলিশ করে টান টান উত্তেজনাময় করা যেতো।
মামুনের অভিনয়ে ছোট্ট একটা অসঙ্গতি আমার চোখে পড়েছে। কমলা হিসেবে তাকে দারুণভাবে মানিয়ে গেলেও বিভিন্ন জায়গায় এক্সপ্রেশন অনেকটা একই ধরনের মনে হয়েছে। হাসি, কান্না আর সাধারণ এক্সপ্রেশন, এর বেশি তেমন কোন তীব্র এক্সপ্রেশন তার মুখে চোখে পড়েনি। জমিদারের সামনে প্রথম নাচে খেয়াল করলে এটা বুঝতে পারবেন, তার মুখ ঠিক একই রকম হাসি-হাসি থাকে পুরোটা সময়। যদিও নাচ আর অঙ্গভঙ্গী নিয়ে কোন অভিযোগ নেই; সেগুলো কে অসাধারণও বলা যায়।
মাহফুজুর রহমান খানের ক্যামেরার কাজ অতুলনীয় হয়েছে। সাধারণ অনেক দৃশ্যকেও ধারণ করা হয়েছে মনোরমভাবে। এদিক থেকে একে ক্ল্যাসিক বলবো আমি। আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও দারুণ। ইমন সাহা সব জায়গায় ঠিক প্রয়োজনীয় মাত্রার মিউজিক-ই বসিয়েছেন।
তবে আমার মতো অনেকেই হয়তো শ্রাবণ মেঘের দিন টাইপ কিছু আশা করবেন। সেটা হয়তো পুরোপুরি পূর্ণ হবে না। কমলার জন্যে একবুক কষ্ট নিয়ে ফিরবেন ঠিকই, কিন্তু শ্রাবণ মেঘের দিন কিংবা আগুনের পরশমনির মতো পরিপূর্ণতা পাবেন না। আর আমি যতোদূর জানি, শেষদিকে হুমায়ূন অসুস্থ হয়ে পড়ায় সহকারী পরিচালক জুয়েল রানাই অবশিষ্ট কাজ করেছেন। সেটারও একটা প্রভাব থাকতে পারে।
শ্যামল ছায়া ছবিটারর অস্কার নোমিনেশন পাওয়া নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। তিনি বলেছিলেন, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এ জন্যে তাঁকে অনেক কম বাজেট দিয়েছিলো, নাহলে তিনি সত্যি অস্কার এনে দিতেন! এটাতেও এমন কোন পরোক্ষ কারণ থাকতে পারে।
হুমায়ূন আহমেদের সিনেমার রেটিং যদি করি, তাহলে এটা শ্রাবণ মেঘের দিন এবং আগুনের পরশমনির পরই স্থান পাবে। আর হ্যাঁ, এটা আমার জীবনে দেখা অন্যতম ব্যতিক্রমধর্মী প্লটের সিনেমা।
সবার কাছে একটা অনুরোধ- সিনেমাটা হলে গিয়ে দেখুন, প্লিজ। নাহলে কোনভাবেই মূল স্বাদটা পাবেন না। হুমায়ূন চেয়েছিলেন এই সিনেমাটা মানুষ হলে এসে দেখুক, তাই এটাকে টিভিতে প্রিমিয়ার করতে নিষেধ করেছিলেন। তারওপর দীর্ঘদিন পর বাংলা সিনেমা দেখার জন্যে দর্শক হলে ফিরেছে। রীতিমতো ধস্তাধস্তি করে আজ টিকেট কাটতে হলো। জলিলের মোস্ট ওয়েলকাম, তারপর এটা। স্বীকার করতেই হবে, এমন অনেক মানুষ এই ছবি দুটো দেখতে হলে যাচ্ছে, যারা বাংলা সিনেমা মানেই মনে করতো অশ্লীলতা। কিছুদিন পরে আসছে ফারুকীর টেলিভিশন। সব মিলিয়ে আমার মনে হয়, ২০১২ সালটা আমাদের সিনেমার জন্যে একটা টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।
হুমায়ূন আহমেদ কে নিয়ে আগের পোস্টঃ হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ উৎসর্গ পত্র সমগ্র...... কিছু ছবি এবং পরিশেষে একটি প্রস্তাব
আগের মুভি রিভিউঃ বাংলা মুভি রিভিউঃ ফিরে এসো বেহুলা (বোনাস- প্রথমবার বলাকায় যাওয়ার লুলীয় একটি অভিজ্ঞতা )