মসজিদ ছাড়া অনেক সময় আমরা কিছু মুসলিম একত্রিত হয়ে নামাজ আদায় করি। অফিস, আদালত বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এভাবে বেশী নামাজ আদায় করতে হয় ধর্মপ্রান মুসলমানদের। সেক্ষেত্রে আমরা উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে থেকেই কেউ একজন ইমাম হয়ে যাই। কিন্তু ইমাম হতে হলে কি যোগ্যতা থাকতে হবে বা কি নিয়ম মানতে হবে তা আমরা আনেকেই জানি না। এই বিষয়ের উপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করব হয়তো আমাদের কাজে লাগবে।
নামাযের ইমামতের গুরুত্ব ও ফযীলতঃ
১- ইমামতি করা দ্বীনের
একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ
যা স্বয়ং নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সারা জীবন করে গেছেন।
অতঃপর তাঁর মৃত্যুর পর চার
খলীফা তা সম্পাদন করেছেন
এবং এখনও মুসলিম সমাজের
উত্তম ব্যক্তিরাই সাধারণত:
সেই উত্তম কাজটি পালন
করে থাকেন।
২- পাঁচ ওয়াক্ত নামায সম্পাদন
করা ইসলামের দ্বিতীয় রোকন
এবং ইসলামের স্পষ্ট প্রতীক
যা মহান আল্লাহ জামাআতবদ্ধ
ভাবে আদায় করার আদেশ
করেছেন। আর সেই আদেশ ইমাম
ব্যতীত বাস্তবায়িত হয় না।
৩- নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমাম ও
মুয়াযযিনের জন্য এই
বলে দুয়া করেন:
“ ﻥﺫﺆﻤﻟﺍﻭ ﻦﻣﺎﺿ ﻡﺎﻣﻹﺍ ﻢﻬﻠﻟﺍ ،ﻦﻤﺗﺆﻣ
ﺪﺷﺭﺃ ﺔﻤﺋﻷﺍ ﺮﻔﻏﺍﻭ ﻪﺟﺮﺧﺃ ”ﻦﻴﻧﺫﺆﻤﻠﻟ
ﺩﻭﺍﺩﻮﺑﺃ ﻱﺬﻣﺮﺘﻟﺍﻭ
“ইমাম হচ্ছে জিম্মাদার আর
মুয়াজ্জিন আমানতদার,
হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের
সঠিক পথ দেখাও কর
এবং মুয়াজ্জিনদেরকে ক্ষমা
কর”। [আবু দাউদ, নং৫১৭ /
তিরিমিযী, নং ২০৭/ সহীহ
সুনান আবুদাঊদ, ১/১০৫]
ইমামতীর অধিক হকদার কে?
এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“লোকদের ইমামতি করবে ঐ
ব্যক্তি যে তাদের
মধ্যে আল্লাহর কিতাব সব
চেয়ে বেশী পাঠ করতে পারে।
যদি তারা পাঠ করার
ক্ষেত্রে সমমানের হয়,
তাহলে তাদের
মধ্যে যে সুন্নতের অধিক
জ্ঞানী হবে সে ইমামতি
করবে। যদি সুন্নতের
জ্ঞানে সকলে বরাবর হয়,
তাহলে তাদের
মধ্যে যে সর্বপ্রথম
হিজরতকারী সে ইমামতি
করবে।
যদি তারা সকলে হিজরতের
ক্ষেত্রেও বরাবর হয়
তবে তাদের মধ্যে আগে ইসলাম
গ্রহণ করেছে সে তাদের
ইমাতি করবে। কোন
ব্যক্তি যেন কোন ব্যক্তির
অধীনস্থ স্থানে তার
অনুমতি ব্যতীত
ইমামতী না করে এবং কোন
ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত
আসনে যেন তার অনুমতি ব্যতীত
না বসে”। [মুসলিম, অধ্যায়,
মাসাজিদ এবং নামাযের
স্থান সমূহ, হাদীস নং ৬৭৩]
সহীহ মুসলিমে এই বর্ণনার ঠিক
পরের বর্ণনায় আগে ’ইসলাম
গ্রহণের স্থানে বয়সে বড়
শব্দটি এসেছে।
উপরের বর্ণনানুযায়ী ইমামতির
বেশী হকদার ব্যক্তিবর্গের
ধারাবাহিকতা এইরূপ:
১- কুরআন সব
চেয়ে বেশী পাঠকারী।
এখানে সব
চেয়ে বেশী পাঠকারী
বলতে যার কুরআন সব
চাইতে বেশী মুখস্থ
আছে তাকে বুঝানো
হয়েছে। কারণ আমর বিন
সালমার হাদীসে নবী (
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
আদেশ এই ভাবে উল্লেখ
হয়েছে, “যখন নামাযের
সময় হবে, তখন তোমাদের
মধ্যে কেউ আযান
দিবে এবং তোমাদের
মধ্যে যার অধিক কুরআন
মুখস্থ
আছে সে ইমামতি করবে’’।
[বুখারী, অধ্যায়, মাগাযী,
হাদীস নং ৪৩০২]
২- সকলে কুরআন মুখস্থের
ক্ষেত্রে সমান
হলে সুন্নতের
ব্যাপারে অধিক জ্ঞানী।
৩- সুন্নতের জ্ঞানেও
সকলে বরাবর
হলে যে ব্যক্তি কুফরের
দেশ হতে ইসলামের
দেশে আগে হিজরতকারী।
৪- হিজরতের
ক্ষেত্রে সকলে বরাবর
হলে, যে ইসলাম
গ্রহণে অগ্রবর্তী।
৫- আর ইসলাম গ্রহণে সবাই
বরাবর হলে, যে বয়সে বড়।
যেমন সহীহ মুসলিমের
পরের হাদীসে বর্ণিত
হয়েছে।
উপরে বর্ণিত
পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের
তরতীব নির্ণয়ে বিভিন্ন
উলামা ও মাজহাবের কিছু
মতভেদ থাকলেও
হাদীসে বর্ণিত
ধারাবাহিকতা প্রাধান্য
পাবে। তবে চতুর্থের
স্থানে পঞ্চম হওয়ার
সম্ভাবনা হাদীস
দ্বারা স্বীকৃত। অর্থাৎ
হিজরতের দিক
দিয়ে সকলে বরাবর
হলে বয়সে বড়
বেশী হকদার না ইসলাম
গ্রহণে অগ্রগামী হকদার?
এ বিষয়ে হাদীসের শব্দের
ধারাবাহিকতায় পার্থক্য
দেখা যায়। তাই কেউ
বয়সে বড়কে প্রাধান্য
দিয়েছে আর কেউ ইসলাম
আগে গ্রহণকে প্রাধান্য
দিয়েছে। [শারহু
মুসলিম,৫ম খণ্ড, ১৭৫-১৭৭/ আর
রাওযা আন নাদিয়্যাহ,
মুহাম্মদ সিদ্দীক হাসান
খান, ১/৩২০/ মুগনী, ইবনু
কুদামাহ, ৩/১১১৬]
উপরোক্ত বিষয়ে আরো কিছু
তথ্য:
ক- উপরোক্ত
ধারাবাহিকতা বজায়
রাখার আদেশ মোস্তাহাব
আদেশ, শর্ত নয় আর
না ওয়াজিব। তাই
অগ্রাধিকার প্রাপ্তের
উপস্থিতিতে
অনগ্রাধিকার প্রাপ্তের
ইমমতি ফুকাহাদের
সর্বসম্মতিক্রমে বৈধ। [আল্
মাওসূআহ আল ফিকহিয়্যাহ,
৬/২০৯]
খ- এই
ধারাবাহিকতা রক্ষা করা
তখন প্রযোজ্য হবে, যখন
মসজিদে নির্ধারিত ইমাম
থাকবে না। আর
যদি মসজিদে ইমাম
নির্ধারিত
থাকে তাহলে সেই
ইমামতি করার
বেশী অধিকার রাখে;
যদিও তার
থেকে বেশী কুরআন
পাঠকারী ও সুন্নত
তথা অন্যান্য গুণের লোক
উপস্থিত থাকে। কারণ
নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বলেন: ‘‘কোন ব্যক্তি যেন
কোন ব্যক্তির অধীনস্থ
স্থানে কখনো ইমামতি না
করে।” [শারহু মুসলিম,৫/১৭৭]
গ- হ্যাঁ, তবে সেই
স্থানে যদি বড় ইমাম
(রাষ্ট্রপ্রধান) উপস্থিত
হন, তাহলে নির্ধারিত
ইমামও আর ইমামতি করার
বেশী হোকদার হবে না;
বরং সেই বড় ইমাম তখন
ইমামতি করার
বেশী হকদার হবেন। কারণ
তাঁর কর্তৃত্ব ও
ক্ষমতা ব্যাপক। [নায়লুল
আউতার,৩/২০২/ শারহু
মুসলিম,৫/১৭৭]
ঘ- হাদীসে বর্ণিত
উপরোক্ত
বৈশিষ্ট্যে যদি সকলে
সমান হয়,
তাহলে কী করতে হবে? এ
বিষয়ে সেই
হাদীসে আরো কিছু
বলা হয় নি। তবে অন্যান্য
দলীলের আলোকে ইসলামী
পণ্ডিতদের
অনেকে মনে করেন,
তাহলে তাদের
মধ্যে অধিক পরহেজগার
ব্যক্তি অগ্রাধিকার
পাবে। কারণ আল্লাহ
বলেন: “অবশ্যই আল্লাহ
নিকট তোমাদের
মধ্যে অধিক আল্লাহ ভীরুই
বেশী সম্মানীয়।” [আল
হুজুরাত/১৩] এর পরেও
সকলে বরাবর হলে তাদের
মাঝে লটারি করতে হবে।
সাহাবী সাআ’দ বিন
অক্কাস (রাযিঃ)
একদা আযানের
ব্যাপারে লটারি করেন।
তাই আযানের ক্ষেত্রে এমন
করা বৈধ হলে ইমামতির
ক্ষেত্রে বেশী বৈধ হবে।
[মুগনী,৩/১৬]
(আব্দুর রাকিব)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:১২