somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যারা আমায় বাঁচতে শেখায় – ২

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের ডিপার্টমেন্টের নিয়ম ছিল সেমিস্টার শেষে প্রত্যেকটা গ্রুপকে একটা করে সেমিনার পেপার তৈরী করতে হবে। তো আমি যখন ৩/২ তে (তৃতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার) তখন গ্রুপের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হল এবার কাজ করব “শিক্ষা ও দারিদ্র্য সম্পর্ক” নিয়ে বলা বাহুল্য সুপারভাইজারও অনুমতি দিয়েছিলেন। আনুসাঙ্গিক সকল কাজ শেষে যখন মাঠ পর্যায়ে কাজে বের হলাম তখন ঠিক করলাম আমি “রথও দেখা কলাও বেচা” স্টাইলে কাজ করব (যেহেতু স্যাম্পল নিয়ে কড়াকড়ি ছিল না)। ক্যাম্পাসে খেতে গিয়ে টংএর মামার সাক্ষাৎকার নিতাম, আমার বাসার কাজের বুয়ার সাক্ষাৎকার নিলাম আর রিকশায় যাওয়ার সময় রিকশাওয়ালাদের সাথে গল্প করতে করতে আমি প্রয়োজনীয় তথ্যটুকু পেয়ে যেতাম, আর তারাও নিজেদের খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ভেবে আমাকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতেন। হয়তো দিন বদলের স্বপ্ন দেখতেন। এভাবেই আমি একদিন এক রিকশাওয়ালার দেখা পেলাম তাঁর নাম মোঃ রুহুল আমিন, বয়স চল্লিশ, বাড়ি উলিপুর, কুড়িগ্রাম। সিলেটে রিকশা চালান অতিরিক্ত উপার্জনের আশায়। তাঁর সাথে কথা বলার পর পুরো কাজটাই আমার কাছে হাস্যকর মনে হতে লাগল। আর মনে হচ্ছিল আমার প্রশ্নগুলো অর্বাচীনের মত হয়ে যাচ্ছে।

তিনি অশিক্ষিত। তাঁর দুই ছেলে স্কুলে পড়ে। একজন ক্লাস সেভেনে আরেকজন ফোরে। তিনি তাদের সামর্থ্যের মধ্যে ভালো স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন। নিয়োগ দিয়েছেন গৃহশিক্ষকও। তাঁর ছোট ছেলে লেখাপড়ায় মোটামুটি হলেও বড়টি বড়ই ফাঁকিবাজ। গ্রামের দুরন্ত কিশোর তার বোধহয় পড়ালেখায় মনযোগ কম। তাই আমাকে খুব আফসোস করে অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বলেছিলেন, “মামা মুই এটে কোনা এত কষ্ট করি ইস্কা চালাওঁ আর মোর ছাওয়াটা একনাওঁ মোর বাদে বোজে না, অয় খালি সারাদিন টায়ার ডাঙ্গি বেড়ায়। কয়দিন হয় কওছে এলা বলে ফির একখান সাইকেল কিনি দেওয়া খাইবে” (মামা, আমি এখানে এত কষ্ট করে রিকশা চালাই আর আমার ছেলেটা একটু আমার কথা ভাবে না, ও শুধু সারাদিন টায়ার নিয়ে খেলে। কিছুদিন হল বলছে এখন নাকি তাকে একটা সাইকেল কিনে দিতে হবে)। কিন্তু তাঁর মত সচেতন অভিভাবক আমি খুব কমই দেখেছি। তিনি রূটিন করে প্রতি সপ্তাহে তাঁর সন্তানের গৃহশিক্ষককে ফোন দিয়ে নিয়মিত খোঁজ খবর নেন। আমাকে খুব আকুতি নিয়ে বললেন “কন তো মামা মুই কি করোং ?? অয় কি কোন দিনও বুজবার নয়" (বলেনতো মামা আমি কি করি সে কি কোনদিনও বুঝবে না) । ঠিক সেই সময় আমি তার চোখে যে আকুতি দেখেছি একই রকম আকুতি দেখেছিলাম চির অমনযোগী এই বান্দার পিতার চোখে, যিনি ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী। সেইদিন আমি বুঝলাম পিতার কোন জাত ধর্ম নাই, বর্ণ গোত্র পেশা কিচ্ছু নাই। তাঁর শুধু একটাই পরিচয় তিনি পিতা।


ফিরে আসার সময় সান্ত্বনা দিয়ে বলে আসলাম, এবার বাড়িতে গেলে একটু বুঝিয়ে বলবেন, বড় হচ্ছে তো এখন ঠিক বুঝবে। তিনিও আমাকে বললেন “দোয়া করমেন মামা ওমরা য্যান তোমারে মত ভার্সিটিত পরবার পায়” (দোয়া করবেন মামা ওরা যেন আপনার মতই ভার্সিটিতে পড়তে পারে)। একটা সুন্দর হাসি দিয়ে মাথা কাত করে সম্মতি জানিয়ে চলে আসলাম আর মনে মনে বললাম, দোয়া তো করতে অসুবিধা নাই মামা পরাণ ভইরা দোয়া করতে রাজী আছি। কিন্তু দোয়াতে মনে হয় আর বেশিদিন কাজ হইব না। আপনে আর কি করবেন ?? শক্ত সিটে বইসা যাত্রী নিয়া রিকশার প্যাডেল মারতে থাকেন আর ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর স্বপ্নই দেখেন। আপনে তো আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের নাম শোনেন নাই। ইউজিসি, আমব্রেলা অ্যাক্ট আর ২০২৬ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বনির্ভর হওয়ার কথাও জানেন না। এইচইকিউইপি প্রকল্পে যে ৬৮১ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে সেটা নেয়ার সময় তো আর কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করে নাই। কিন্তু শোধ করতে হবে আপনাকেও। অশিক্ষিত নিম্নবিত্ত হইছেন তাই কি হইছে?? বাংলাদেশের জনগনের বাইরে তো আর না


**************************************************
উৎসর্গঃ যাদের পিতৃত্ববোধ আছে।

যারা আমায় বাঁচতে শেখায়

যারা আমায় বাঁচতে শেখায় – ৩




সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৩
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×