somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্যান্ডেল কিনিলাম অতঃপর হারাইয়া ফেলিলাম

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কিছুদিন হল একজোড়া স্যান্ডেল কেনা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে, কিন্তু কিনি কিনি করে আর কেনাই হচ্ছে না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম টিউশনিতে যাবার আগে স্যান্ডেল কিনে ফেলব, নইলে পদত্যাগ আসন্ন। যাইহোক ইজিবাইক ওরফে টমটমে চড়ে আসলাম আম্বরখানা। তারপর দাদাকে ফোন করে বললাম “দাদা, ব্যস্ত? ফ্রি থাকলে নিচে আয় কাম আছে”। খানিকপর দেখি দাদা ঠোঁটে একটা বিড়ি ঝুলিয়ে আসছে। (আমার বন্ধুরা সবাই ধূমপানের জন্য সিগারেটই পোড়ায় কিন্তু আমি কেন জানি “বিড়ি” শব্দটা বলে একটা হুলুস্থুল রকমের মজা পাই।) কাছে আসতেই একটু ভাব নিয়ে বললাম “শালা হা***দা, ট্রাউজার পইরা আইছস!! ভাবছিলাম তোরে নিয়া একটু শপিঙে যামু” ;) কী কিনব প্রশ্নের উত্তরে যখন বললাম একজোড়া স্যান্ডেল, তখন দাদা মূখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “বাটায় যাইতে প্যান্ট পরার দরকার নাই”।;)
বেশ কয়েকটা মডেল দেখার পর মোটামুটি একটা খুব পছন্দ হল, সাইজ মিলিয়ে কিনেও ফেললাম। সেলস ম্যান বলল “স্যার, নতুন জোড়া পরে নিন পুরনো টা প্যাক করে দিই”। আমিও কি মনে করে তাই করলাম। বাইরে আসতেই দাদা বলল “স্যান্ডেল কিনলি খানি দিবি না?” কি আর করা নতুন স্যান্ডেলের ফিলিংস নিতে নিতে চললাম রেস্টুরেন্টের দিকে। বেশি কিছু খাই নি শুধু একটা মোগলাই পরোটা আর এক গ্লাস লাচ্ছি। তারপর আমি বিদায় নিয়ে চললাম টিউশনির দিকে।
পড়ানো শেষে যখন দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছি তখন হঠাৎ বুকটা ধড়াস করে উঠল। র‍্যাকে সবগুলো স্যান্ডেল আছে শুধু আমার গুলো নাই!! ইতিউতি খুঁজলাম, আলো থাকা সত্ত্বেও সেল ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে খুঁজলাম। কোন ফলাফল না পেয়ে শেষে ছাত্রীকে জানালাম আমার স্যান্ডেল জোড়া পাচ্ছিনা। তারাও বেশ খানিকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে বলল, “স্যার!! আপনি আমার বাবার স্যান্ডেল পরে যান”। তখন আমি বিষাদ মাখা কাতর গলায় বললাম “আমি একটু আগে স্যান্ডেল জোড়া কিনেছিলাম তো পুরনোটা তাই এখনো ব্যাগে রয়েই গেছে, আমি সেগুলো পরেই চলে যেতে পারব”। আমার ছাত্রীও বিচক্ষণ গোয়েন্দার মত রহস্যের সমাধান টানল “ও!! আসলে স্যার নতুন স্যান্ডেল, চকচকে দেখেছে তো তাই চোর ওটা নিয়ে চলে গেছে। আমি মনে মনে নিজেকে ঝাড়ি দিতে দিতে বেরিয়ে এলাম, ভাবছিলাম নতুন জোড়া না পরলেই তো এ ঘটনা ঘটতো না। বাইরে এসে বাতাসের ঝাঁপটা গায়ে লাগতেই, চোরের ভয়ে মাটিতে ভাত খাওয়া টাইপ চিন্তা ভাবনার জন্য নিজেকে আরেক দফা ঝাড়ি দিলাম। তারপর না জানি আমার কি হল!! এই রকম সমস্যায় আগে কখনো পরি নাই, একটু একটু কষ্টও হচ্ছিল আর পেট ফেটে হাসি আসছিল। আমিও রাস্তায় পাগলের মত একা একা হাসতে হাসতে হাঁটতে থাকলাম। তারপর হঠাৎ খেয়াল হল এমন একটা ঘটনা বন্ধুদের জানাব না?? সেলফোন হাতে নিয়ে বন্ধুদের সব ঘটনা জানাতে থাকলাম। তারপর ভূত থেকে ভূতে। একেক জনের কি ফূর্তি!! যার কাছ থেকে টিউশনি টা পেয়েছিলাম সে বলল “দোস্ত তিন বছর ঐ বাসায় পড়াইলাম কই আমার তো কিছু হয় নি? স্যান্ডেল শুনেছি নতুন জামাইয়ের চুরি যায়, তা বন্ধু ছাত্রী কি তোমাকে পছন্দ করে ফেলল?”
এ সব শুনতে শুনতে একসময় আমার ডেরায় এসে পৌছুলাম। রুমের সামনে দাড়িয়ে যখন চাবির জন্য পকেট হাতড়াচ্ছি তখন আমার সাবেক রুমমেট বকের মত গলা বাড়িয়ে বলল “হাতে বাটার শপিং ব্যাগ, কি ............ স্যান্ডেল কিনলি নাকি”?? আমিও হতবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম পুরনো স্যান্ডেল গুলো বের করার পরও আমি কি পরম মমতায় খালি ব্যাগটি রুম পর্যন্ত বয়ে এনেছি। কি আর করা হরষে বিষাদে আরেকবার পুরো ঘটনা বর্ণনা করতে হল।
মাস শেষে ছাত্রীর অভিভাবক একটা খাম ধরিয়ে দিলেন। বাসায় এসে দেখি তাতে আমার বেতন ছাড়াও বেশ কিছু টাকা রয়েছে, যা দিয়ে ঐ নতুন স্যান্ডেল দুই জোড়া কিনে ফেলা যায়। যা হোক পরদিন ছাত্রীর অভিভাবককে জানালাম আমাকে গতকাল কিছু টাকা বেশি দিয়ে ফেলেছেন। উত্তরে তিনি জানালেন ওটা দিয়ে যেন আমি একজোড়া স্যান্ডেল কিনে ফেলি। আমি বললাম “তা কেন? ওটা তো যে কোন খানেই হারাতে পারতো আপনাদের বাসায় হারিয়েছে বলে আপনারা দিবেন, এর প্রয়োজন নেই”। তাতে তিনি যা বললেন তা নিঃশব্দে মেনে নিলাম, তিনি বলেছিলেন “আমি বাসায় থাকলে উনি কখনই এটা করতেন না, কারণ সেটা আমার বাবা মার দায়িত্ব কিন্তু যেহেতু এখন আমি মা বাবা থেকে দূরে আছি তাই তিনি এটা করেছেন, আর কিছু না”।
আমি ?? আমি আর কি করব ?? দন্ত বিকশিত করে বন্ধুদের আরেকবার পুরো ঘটনাটা জানালাম। আর এখন জানালাম আপনাদের। :D:D:D:D:D:D:D:D

বি.দ্র. আম্বরখানার দাদা আর এই পোস্টের শিরোনাম নির্ধারক একই ব্যক্তি – নীরব দা
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩২
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×