বেশ কিছুদিন হল একজোড়া স্যান্ডেল কেনা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে, কিন্তু কিনি কিনি করে আর কেনাই হচ্ছে না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম টিউশনিতে যাবার আগে স্যান্ডেল কিনে ফেলব, নইলে পদত্যাগ আসন্ন। যাইহোক ইজিবাইক ওরফে টমটমে চড়ে আসলাম আম্বরখানা। তারপর দাদাকে ফোন করে বললাম “দাদা, ব্যস্ত? ফ্রি থাকলে নিচে আয় কাম আছে”। খানিকপর দেখি দাদা ঠোঁটে একটা বিড়ি ঝুলিয়ে আসছে। (আমার বন্ধুরা সবাই ধূমপানের জন্য সিগারেটই পোড়ায় কিন্তু আমি কেন জানি “বিড়ি” শব্দটা বলে একটা হুলুস্থুল রকমের মজা পাই।) কাছে আসতেই একটু ভাব নিয়ে বললাম “শালা হা***দা, ট্রাউজার পইরা আইছস!! ভাবছিলাম তোরে নিয়া একটু শপিঙে যামু” কী কিনব প্রশ্নের উত্তরে যখন বললাম একজোড়া স্যান্ডেল, তখন দাদা মূখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল “বাটায় যাইতে প্যান্ট পরার দরকার নাই”।
বেশ কয়েকটা মডেল দেখার পর মোটামুটি একটা খুব পছন্দ হল, সাইজ মিলিয়ে কিনেও ফেললাম। সেলস ম্যান বলল “স্যার, নতুন জোড়া পরে নিন পুরনো টা প্যাক করে দিই”। আমিও কি মনে করে তাই করলাম। বাইরে আসতেই দাদা বলল “স্যান্ডেল কিনলি খানি দিবি না?” কি আর করা নতুন স্যান্ডেলের ফিলিংস নিতে নিতে চললাম রেস্টুরেন্টের দিকে। বেশি কিছু খাই নি শুধু একটা মোগলাই পরোটা আর এক গ্লাস লাচ্ছি। তারপর আমি বিদায় নিয়ে চললাম টিউশনির দিকে।
পড়ানো শেষে যখন দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছি তখন হঠাৎ বুকটা ধড়াস করে উঠল। র্যাকে সবগুলো স্যান্ডেল আছে শুধু আমার গুলো নাই!! ইতিউতি খুঁজলাম, আলো থাকা সত্ত্বেও সেল ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে খুঁজলাম। কোন ফলাফল না পেয়ে শেষে ছাত্রীকে জানালাম আমার স্যান্ডেল জোড়া পাচ্ছিনা। তারাও বেশ খানিকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে বলল, “স্যার!! আপনি আমার বাবার স্যান্ডেল পরে যান”। তখন আমি বিষাদ মাখা কাতর গলায় বললাম “আমি একটু আগে স্যান্ডেল জোড়া কিনেছিলাম তো পুরনোটা তাই এখনো ব্যাগে রয়েই গেছে, আমি সেগুলো পরেই চলে যেতে পারব”। আমার ছাত্রীও বিচক্ষণ গোয়েন্দার মত রহস্যের সমাধান টানল “ও!! আসলে স্যার নতুন স্যান্ডেল, চকচকে দেখেছে তো তাই চোর ওটা নিয়ে চলে গেছে। আমি মনে মনে নিজেকে ঝাড়ি দিতে দিতে বেরিয়ে এলাম, ভাবছিলাম নতুন জোড়া না পরলেই তো এ ঘটনা ঘটতো না। বাইরে এসে বাতাসের ঝাঁপটা গায়ে লাগতেই, চোরের ভয়ে মাটিতে ভাত খাওয়া টাইপ চিন্তা ভাবনার জন্য নিজেকে আরেক দফা ঝাড়ি দিলাম। তারপর না জানি আমার কি হল!! এই রকম সমস্যায় আগে কখনো পরি নাই, একটু একটু কষ্টও হচ্ছিল আর পেট ফেটে হাসি আসছিল। আমিও রাস্তায় পাগলের মত একা একা হাসতে হাসতে হাঁটতে থাকলাম। তারপর হঠাৎ খেয়াল হল এমন একটা ঘটনা বন্ধুদের জানাব না?? সেলফোন হাতে নিয়ে বন্ধুদের সব ঘটনা জানাতে থাকলাম। তারপর ভূত থেকে ভূতে। একেক জনের কি ফূর্তি!! যার কাছ থেকে টিউশনি টা পেয়েছিলাম সে বলল “দোস্ত তিন বছর ঐ বাসায় পড়াইলাম কই আমার তো কিছু হয় নি? স্যান্ডেল শুনেছি নতুন জামাইয়ের চুরি যায়, তা বন্ধু ছাত্রী কি তোমাকে পছন্দ করে ফেলল?”
এ সব শুনতে শুনতে একসময় আমার ডেরায় এসে পৌছুলাম। রুমের সামনে দাড়িয়ে যখন চাবির জন্য পকেট হাতড়াচ্ছি তখন আমার সাবেক রুমমেট বকের মত গলা বাড়িয়ে বলল “হাতে বাটার শপিং ব্যাগ, কি ............ স্যান্ডেল কিনলি নাকি”?? আমিও হতবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম পুরনো স্যান্ডেল গুলো বের করার পরও আমি কি পরম মমতায় খালি ব্যাগটি রুম পর্যন্ত বয়ে এনেছি। কি আর করা হরষে বিষাদে আরেকবার পুরো ঘটনা বর্ণনা করতে হল।
মাস শেষে ছাত্রীর অভিভাবক একটা খাম ধরিয়ে দিলেন। বাসায় এসে দেখি তাতে আমার বেতন ছাড়াও বেশ কিছু টাকা রয়েছে, যা দিয়ে ঐ নতুন স্যান্ডেল দুই জোড়া কিনে ফেলা যায়। যা হোক পরদিন ছাত্রীর অভিভাবককে জানালাম আমাকে গতকাল কিছু টাকা বেশি দিয়ে ফেলেছেন। উত্তরে তিনি জানালেন ওটা দিয়ে যেন আমি একজোড়া স্যান্ডেল কিনে ফেলি। আমি বললাম “তা কেন? ওটা তো যে কোন খানেই হারাতে পারতো আপনাদের বাসায় হারিয়েছে বলে আপনারা দিবেন, এর প্রয়োজন নেই”। তাতে তিনি যা বললেন তা নিঃশব্দে মেনে নিলাম, তিনি বলেছিলেন “আমি বাসায় থাকলে উনি কখনই এটা করতেন না, কারণ সেটা আমার বাবা মার দায়িত্ব কিন্তু যেহেতু এখন আমি মা বাবা থেকে দূরে আছি তাই তিনি এটা করেছেন, আর কিছু না”।
আমি ?? আমি আর কি করব ?? দন্ত বিকশিত করে বন্ধুদের আরেকবার পুরো ঘটনাটা জানালাম। আর এখন জানালাম আপনাদের।
বি.দ্র. আম্বরখানার দাদা আর এই পোস্টের শিরোনাম নির্ধারক একই ব্যক্তি – নীরব দা ।