সেদিন ক্যাম্পাসে বাস ছাড়ার অপেক্ষায় বসে আছি, সামনের সিটে এসে বসল আমার এক ক্লাসমেট। তার খানিক পর দেখি ঘাড়ের কাছে ফার্স্ট ইয়ারের দুই পিচ্চি মেয়ে দাড়িয়ে ইতস্তত করছে, বোধহয় দুইজনের একসাথে বসার ইচ্ছে! কি আর করা, মুখে একটা বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব ঝুলিয়ে আমার সিটটা ছেড়ে ক্লাসমেট কে বললাম, সর! বসতে দে। তার চেহারা দেখে মনে হল সে পৃথিবীর প্রথমাশ্চর্য দেখছে, নামটা ধরে বলল ............! তুই একটা মেয়ের পাশে বসে যাবি? এবার আমার ভ্যাবাচ্যাকা খাবার পালা। বাস ভর্তি পোলাপানের সামনে কোনমতে একটা মিচকা শয়তান টাইপ হাসি দিয়ে বললাম, কবে কইছি আমি কোন মেয়ের পাশে বসমু না? তার উত্তরঃ না বলিস নাই তবে কখনও আমার পাশে বসিসও নাই, তাই ভাবছিলাম তুই হয়ত কোন মেয়ের পাশে বসিস না। আমি তো পুরাই টাশকি খাইছি, মানে মানে করতে করতে বসে বললাম এই ছয় বছরে কোনদিন বসি নাই? সোজা সাপটা উত্তরঃ না, কোনদিন বসিস নাই। মাথার মধ্যে তখন তারে নিয়া “সার্চ দ্য খোঁজ” শুরু হয়ে গেছে, ফলাফল যা পেলাম তাতে আমি নিজেই হতাশ। ভার্সিটি লাইফের শুরুতেই কিভাবে কিভাবে যেন আমার গায়ে দুইটা তকমা বসে গিয়েছিল এক. ভালো ছেলে, আর দুই. ভালো ছাত্র। তারপর প্রথম দুই/তিন সেমিস্টারে আমার রেজাল্ট দেখে অনেকের কাছে দ্বিতীয় তকমাটা খসলেও, প্রথমটা থেকেই গিয়েছিল। কেউ কেউ অবশ্য এখনও বলেন ভালো ছাত্র মানেই যে ভালো রেজাল্ট করতে হবে এমন নয়। এটা বলে কি তারা নিজের মনকে প্রবোধ দেন না আমাকেই সান্ত্বনা দেন? এই প্রশ্নের জবাব আমি আজো পাইনি। যা হোক, এই তকমাদ্বয়ের সুফল যেমন লাইফে প্রচুর পেয়েছি তেমনি কিছু কিছু বলিও দিতে হয়েছে, আমার আজকের এই ক্লাসমেট তাদের মাঝে একজন যাদের সাথে আমি খুব একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে পারিনি
নিজেকে আমি খুব একটা দোষও দিই না কিন্তু এটাও তো জানি যে আমার মেজাজ সপ্তমে আর প্রথমে যেখানেই থাকুক না কেন সে বা তারা প্রত্যেকেই ভালো আচরণ পাবার অধিকার রাখে, আমি আসলে একটু রুঢ় আচরণই করে ফেলেছিলাম। এরপর অনেকদিন পর্যন্ত বুঝতেও পারিনি যে আমি কতোটা পচা কাজ করে ফেলেছি। তারপর যখন বুঝতে পারলাম বেশ খারাপ লেগেছিল, ভীষণ অনুশোচনা হয়েছিল। ততদিনে যা হবার তা হয়ে গেছে, সে হয়তো আমার খুব ভালো বন্ধু হতে পারতো, তার বদলে আমরা হাই হ্যালো বলেছি কতদিন হিসেব করে বলা যাবে। ত্রিশ জনের ব্যাচে যদি এই অবস্থা হয় না জানি পঞ্চাশ/একশত হলে কি করতাম!! বছর দুই আগে একবার সরি বলার চেষ্টা করেছিলাম তখন সে আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়েছিল, কি বলেছিল এখন আর মনে নেই। তারপর মাঝে মাঝেই ফেইসবুকে চ্যাট করতাম। তখন আমি হঠাৎ আবিষ্কার করলাম সে খুব মজার একটা মানুষ। আমি খুব কম মানুষের সাথেই ফেইসবুকে চ্যাট করি, তার মাঝে সে একজন। সে অন্তত প্যানপ্যান করেনাই কোন দিন। বেশ কয়েকবার আমার খুব মন খারাপ সময়ে তার সাথে চ্যাট করেছি এবং অদ্ভুতভাবে প্রতিবারই আমার মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিলো । মাঝখানে খুব খেপেছিল সে, বারবার বলত ........... তুই আবার লেখালেখি শুরু কর। ব্লগে লিখলেও তো পারিস? তখন আমি জেনারেল হবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তাকে আর লিঙ্কটা দেই নি। হয়তো দেবোও না।
আবার বাসে ফিরে আসি। একটা সস্তা গান গাইছিলাম গুনগুন করে। সে হঠাৎ বলে উঠল তুই এই গান কিভাবে গাচ্ছিস ............ ? এই গান তোকে মানায় না? আমি উল্টা প্রশ্ন করলাম, কেন? কি হইছে ? এটা তো শুধু একটা গান! সে উত্তর দিল, কেন তুই তো বলতি একটা গান শুধু একটা গান নয়, একটা গান মানে অনেক কিছু। হায় খোদা!! কবে বোধহয় সাহিত্য, দর্শন, জীবনবোধ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলাম! নিজের ফাঁদে নিজেই ধরা পড়েছি। তবে একটা শিক্ষাও হল যে জ্ঞান কপচাতে গেলে বুঝে শুনে কপচাতে হবে নয়তো এরকম ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
দুই দিন আগে অ্যাসাইন্মেন্টের গ্রুপ ডিসকাশনে আবার একদফা ঢিসুম ঢিসুম হয়েছে, যদিও এবার আমার কোন দোষ ছিল না, ঈমানে কইলাম। তারপর থেকে আবার স্নায়ু যুদ্ধ চলছে। ভাবছি এইবার স্ব উদ্ব্যোগে মিটিয়ে ফেলব।
বন্ধুরে নিজের ইগোর কারণে হয়ত তোকে কখনই বলবনা, তাই এখানে বলছি পারলে আমার দেয়া কষ্টগুলো ভুলে যাস!!!!!!!!!!!