আমি বুড়। ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছে করছে। এতকাল সে আমাকে নানা তালে নাচিয়েছে, পেছনে দাড়িয়ে ব্যাগ পাইপ বাজিয়েছে—এইবার আমি নিজের তালে নিজে নাচব। একবারই এসেছি ভাই। আবার আসব কি না, কে জানে? অতএব, আমি এখন স্বাধীন!আমার পতাকা নেই, লাল কেল্লাও নেই। একটা দেহ আছে, পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চ। মাথাটাকেই ধরা যাক একটা গম্বুজ। এই কেল্লায় উড়িয়ে দিলাম আমার স্বাধীনটার পতাকা। এই স্বাধীনটার কোন ঘোষণা নেই। কোন সংবিধান নেই।
গর্ব হয়। গর্বে বুকের ছাতি ৪২ থেকে ফুলে ৮৪ ইঞ্চ হয়। আমাদের দেশ প্রেম, দেশের প্রতি ভালোবাসা। তুলনা হয় না।
১৬ কোটি মানুষের এই একরত্তি একটা দেশ। সেই দেশের মানুষের এত দেশপ্রেম। ভাবা যায়! আমি যুদ্ধ দেখিনাই, ভাষা আন্দোলন দেখি নাই। তার পরেও আমি গর্বিত আমি বাংলাদেশী।
আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। আমি আমার সেই ভালবাসাকে সাদা কাগজে কলমের আঁচরে প্রকাশ করি। ছাপা খানার লোকেরা রাত দিন, খেঁটে আমার দেশপ্রেম কে ছেপে চলেছে।
সেদিন বাংলাবাজারে দেখলাম এক লোক কত গুলো বই নিয়ে বসে আছে। হাকছে দশ টাকা! দশ টাকা!
অনেক বই এর মধ্যে একটা বই দেখলাম “মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস”। অবাক হয়ে গেলাম আরে লেখক কত প্ররিশ্রম করে, কত মমতা আর ভালোবাসার সংমিশ্রণে একটু একটু তার এই সৃষ্টি গড়ে তুলেছিলে। গর্ব হয়। আমার দেশ প্রেমে।
সত্যি কথা বলতে কি? না আমরা কেউ দেশকে ভালোবাসি, না আমাদের মনে কোন দেশ প্রেম আছে। আমাদের দেশ প্রেম হচ্ছে স্বপ্নে। আর তার প্রকাশ গপ্লে, কবিতায়, নাটকে সিনেমায়।
২১ শে ফ্রেব্রুয়ারি আন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস। চারদিক দেয়াল লিখন, পোস্টার, ব্যানার, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১ শে ফেব্রু”।
আমরা স্মরণ করছি সেই মহান ভাষা শহিদদের। ছালাম, রফিক, বরকত। রাত ১২টা বাজল শহিদ মিনারে একগুচ্ছ ফুল ছুরে দিলাম, ব্যাস আমার কাজ শেষ।
তার পর বাসায় বসে হিন্দি সিনেমা, বা এফএম রেডিও মডার্ন বাংলা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরা। পরদিন আবার সেই আগের মত যেমন চলছিল তেমনি চলা। বলবেন ভাই এনটারটেনমেনট তো চাই। ইন্ডিয়ান টিভি চ্যানেল ছারা আর তো কিছু নেই। তা ঠিক “স্টার জলসার” সিরিলায় যত মানুষ দেখে NTV কিংবা চ্যানেল ”আই” নাটক তত মানুষ দেখে না।
বলবেন ওদের মত আমাদের অনুষ্ঠানের মান ভাল না, আর্টিস্ট নেই, লোকেশন নেই। আমরা যদমদ একটা কিছু বানিয়ে মার্কেটে ছেড়ে দি। পাবলিক এবার খা। পাবলিকের রুচি, পাবলিকের কাছে আমাদের কাজ আমরা করেছি।
একটার পিছনে হাজারটা যুক্তি, হাজার খানেক ইস্যু দাড়িয়ে যায়। একদল মার্কেট গবেষণায় ব্যাস্ত। রেজাল্ট জিরো। যে লাউ সেই কদু।
মার্চ এসেছে ব্যাস শুরু হয়ে গেল তর্ক। এ তর্কের নাম স্বাধীনতার ঘোষক। এ তর্কের শেষ নেই। চলছে তো চলছেই..................
আসলে কে স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষক? জানেন কি?
বাংলাদেশের মহান দুজন রাজনীতিবিদ। সকলের শ্রদ্ধার প্রাত্র। আমরা তাদের সন্মান করি। নিজের আদর্শ জ্ঞান করি আবার তাদের নিয়েই কাঁদা ছুড়াছুরি করি এঁর কোন মানে হয়? মিটিং কিংবা মিছিলে আমরা শ্লোগান তুলি, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শের সৈনিক, আমরা জিয়াউর রহমান এঁর আদর্শের সৈনিক। না বর্তমানের কোন রাজনীতিবিদের আদর্শে এই মহান নেতারা আছেন আর না ভবিষ্যৎ এ কোনদিন জন্ম নেবেন।
মুখেই কেবল “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ঢাকা এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য অংশে আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। এই গণগত্যার প্রাক্কালে তৎকালীনআওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ নিরাপত্তার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ৩০ মার্চের মধ্যেই তাদের অনেকে কলকাতায় সমবেত হন। প্রাদেশিক পরিষদের যে সকল সদস্য ১০ এপ্রিল এর মধ্যে কলকাতায় পৌছতে সক্ষম হন তাদের নিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। তার নির্দেশেই অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরো কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া প্রণয়ন করেন[১]।এরপর ব্যরিস্টার আমীর-উল-ইসলাম এই ঘোষণাপত্রের আইনগত দিকগুলো সংশোধন করে একে পূর্ণতা দান করেন[২]। এই ঘোষণাপত্রটি প্রথমে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর থেকে প্রচার করা হয়[৩]।এরপর আবার ১৭ এপ্রিল তারিখে মেহেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী স্থান বৈদ্যনাথতলায় (পরবর্তী নাম মুজিবনগর) এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপরিষদের সদস্য এম ইউসুফ আলী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন[৪]। এই ঘোষণার মাধ্যমে নবগঠিত প্রবাসী আইন পরিষদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে সাথে সাথে এ ঘোষণাপত্র প্রবাসী সরকারের অবস্থান ও যৌক্তিকতা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে[৫]। এদিনই ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়া হয় এবং একই সাথে ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কার্যকর হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। এর ফলে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারও বৈধ বলে স্বীকৃত হয়। এ ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকলের মধ্যে চেইন অফ কমান্ড স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়।
ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বিবরণ
মুজিবনগর, বাংলাদেশ
তারিখ: ১০ এপ্রিল ১৯৭১
যেহেতু ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল; এবং
যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল;
এবং
যেহেতু জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সনের ৩রা মার্চ তারিখে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন আহ্বান করেন; এবং
যেহেতু তিনি আহূত এই অধিবেশন স্বেচ্ছার এবং বেআইনীভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন; এবং
যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করার পরিবর্তে বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারষ্পরিক আলোচনাকালে ন্যায়নীতি বহির্ভূত এবং বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করেন; এবং
যেহেতু উল্লিখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান; এবং
যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং এখনও বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে; এবং
যেহেতু পাকিস্তান সরকার অন্যায় যুদ্ধ ও গণহত্য এবং নানাবিধ নৃশংস অত্যাচার পরিচালনার দ্বারা বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের পক্ষে একত্রিত হয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব কে তুলেছে; এবং
যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপর তাদের কার্যকরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে;
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আমাদের সমবায়ে গণপরিষদ গঠন করে পারষ্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে
বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি এবং এর দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি; এবং
এতদ্বারা আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; এবং
রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন; এবং
তাঁর কর ধার্য ও অর্থব্যয়ের ক্ষমতা থাকবে; এবং
বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য আইনানুগ ও নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতারও তিনি অধিকারী হবেন।
বাংলাদেশের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, কোনো কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান না থাকেন অথবা যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাজে যোগদান করতে না পারেন অথবা তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে যদি অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রপ্রধান প্রদত্ত সকল দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পালন করবেন। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, বিশ্বের একটি জাতি হিসাবে এবং জাতিসংঘের সনদ মোতাবেক আমাদের উপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তেছে তা যথাযথভাবে আমরা পালন করব। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য আমরা অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলীকে যথাযথভাবে রাষ্ট্রপ্রধান ও উপ-রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য দায়িত্ব অর্পণ ও নিযুক্ত করলাম।
স্বাক্ষর: অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলী
বাংলাদেশ গণপরিষদের ক্ষমতা দ্বারা
এবং ক্ষমতাবলে যথাবিধি সর্বাধিক ক্ষমতাধিকারী।
আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ ১৯৭১
বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রদত্ব ক্ষমতাবলে আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ নামে একটি আদেশ জারি করেন। ঘোষণাপত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সকল আইন চালু ছিল, তা রক্ষার্থে এই আদেশ বলবৎ করা হয়[২]।
আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ ১৯৭১
মুজিবনগর, বাংলাদেশ, ১০ এপ্রিল ১৯৭১, শনিবার ১২ চৈত্র ১৩৭৭
আমি বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে এ আদেশ জারি করছি যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সকল আইন চালু ছিল, তা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একইভাবে চালু থাকবে, তবে প্রয়োজনীয় সংশোধনী সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের জন্য করা যাবে। এই রাষ্ট্র গঠন বাংলাদেশের জনসাধারণের ইচ্ছায় হয়েছে। এক্ষণে, সকল সরকারি, সামরিক, বেসামরিক, বিচার বিভাগীয় এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছেন, তারা এতদিন পর্যন্ত নিয়োগবিধির আওতায় যে শর্তে কাজে বহাল ছিলেন, সেই একই শর্তে তারা চাকুরিতে বহাল থাকবেন। বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত সকল জেলা জজ এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সকল কূটনৈতিক প্রতিনিধি যারা অন্যত্র অবস্থান করছেন, তারা সকল সরকারি কর্মচারীকে স্ব স্ব এলাকায় আনুগত্যের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করবেন।
এই আদেশ ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে।
স্বাক্ষর:- সৈয়দ নজরুল ইসলাম
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি
তথ্যসূত্র
১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র, তৃতীয় খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা, ১৯৮২, পৃষ্ঠা ৪-৭
২) বাংলাপিডিয়া নিবন্ধ: স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। লেখক: সাজাহান মিয়া।
৩) রেহমান সোবহান (১৯৯৮)। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ঃ একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য। মাওলা ব্রাদার্স। পৃ: ১০৪–১০৫। আইএসবিএন 984-410-102-6
৪) হোসেন তওফিক ইমাম (২০০৪)। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১। আগামী প্রকাশনী। আইএসবিএন 984-401-783-1।
৫) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম (২০০৬)। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে। অনন্যা প্রকাশনী। আইএসবিএন 984-412-033-0।
৬) শামসুল হুদা চৌধুরী (২০০১)। একাত্তরের রনাঙ্গন। আহমদ পাবলিশিং হাউস। আইএসবিএন 984-11-0505-0
৭)মঈদুল হাসান (২০০৪)। মূলধারা ৭১। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। আইএসবিএন 984 05 0121 6।
তাহলে দাঁড়াল কি? একটি বিদ্রোহী জাতি গোষ্ঠী। কোন সরকার গঠন ছাড়াই নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করল? আর তাই নিয়ে আমরা তর্কে লিপ্ত।
১৯৭১ থেকে আজ ২০১৬ বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের মানুষ কতটুকও বদলেছে? যে আশা, যে স্বপ্ন নিয়ে একদিন পাকিস্থানি শিক্ষিত সামরিক বাহিনীর বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল। আজ ৪৫ বছর পর তার কতটুকও আমরা পেলাম?
সেই বাল্য কাল হতেই জেনে আসছি! ইংরেজরা আমাদের শোষণ করেছে, পাকিস্থানিরা আমাদের শোষণ করেছে। হ্যাঁ করেছে বৈকি! করেছে বলেই না আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পেয়েছি, রেলে চরতে পারছি, বড় বড় ফ্যাটরি আমাদের দেশে হয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য নির্ভীকতা অর্জন করতে পেরেছিলাম।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে ইলেকট্রিক লাইনের পোল দাড় করানো হচ্ছে। ঘরে ঘরে ইলেকট্রিক লাইন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সবুজ মাঠের বুক চিরে পিচের রাস্তা চলে যাচ্ছে।
বিনিয়োগ কারি দেশ সুমহ আমাদের সহজ সর্তে ঋণ দাণ করছে। যাতে আমরা আরও ইলেকট্রিফিকেশন করতে পারি। নতুন নতুন রাস্তা, ব্রিজ,কাল্ভারট বানতে পারি। ওঁরা আমাদের প্রলুব্ধ করবে আমরা তাতে সারা দিব জেনেই এমন প্রস্তাব করে আমরাও মাথা পেতে নেই।
অবাক হয়ে যাই, ইলেকট্রিফিকেশনে লোণ কে দিল অমুক দেশ। ইলেক্ট্রোনিক সামগ্রী কে সবচে বাংলাদেশে বিক্রি করে কেন? সেই দেশ।
যে দেশ গাড়ি বানায় সেই দেশ রাস্তা বানাতে লোণ দিবে এটাই স্বাভাবিক। তাই না? রাস্তা হল, নতুন বাস সার্ভিস চালু হল। পাবলিকের পায়সা এক শ্রেণীর ট্রান্সপোর্ট মালিকের হাতে। সরকার কি পেল? রাজস্ব কি হল? ঘোড়ার আণ্ডা!
ফ্রি বছর নতুন বাজেট হয়। তাতে এক সুমুদ্র ঘাটতি? এই ঘাটতি পূরণের উপায় বিদেশি বিনিয়োগ। বলি আমরা কি কোনদিনও স্বাবলম্বী হব না।আমি বুড়। ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছে করছে। এতকাল সে আমাকে নানা তালে নাচিয়েছে, পেছনে দাড়িয়ে ব্যাগ পাইপ বাজিয়েছে—এইবার আমি নিজের তালে নিজে নাচব। একবারই এসেছি ভাই। আবার আসব কি না, কে জানে? অতএব, আমি এখন স্বাধীন!আমার পতাকা নেই, লাল কেল্লাও নেই। একটা দেহ আছে, পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চ। মাথাটাকেই ধরা যাক একটা গম্বুজ। এই কেল্লায় উড়িয়ে দিলাম আমার স্বাধীনটার পতাকা। এই স্বাধীনটার কোন ঘোষণা নেই। কোন সংবিধান নেই।
গর্ব হয়। গর্বে বুকের ছাতি ৪২ থেকে ফুলে ৮৪ ইঞ্চ হয়। আমাদের দেশ প্রেম, দেশের প্রতি ভালোবাসা। তুলনা হয় না।
১৬ কোটি মানুষের এই একরত্তি একটা দেশ। সেই দেশের মানুষের এত দেশপ্রেম। ভাবা যায়! আমি যুদ্ধ দেখিনাই, ভাষা আন্দোলন দেখি নাই। তার পরেও আমি গর্বিত আমি বাংলাদেশী।
আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। আমি আমার সেই ভালবাসাকে সাদা কাগজে কলমের আঁচরে প্রকাশ করি। ছাপা খানার লোকেরা রাত দিন, খেঁটে আমার দেশপ্রেম কে ছেপে চলেছে।
সেদিন বাংলাবাজারে দেখলাম এক লোক কত গুলো বই নিয়ে বসে আছে। হাকছে দশ টাকা! দশ টাকা!
অনেক বই এর মধ্যে একটা বই দেখলাম “মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস”। অবাক হয়ে গেলাম আরে লেখক কত প্ররিশ্রম করে, কত মমতা আর ভালোবাসার সংমিশ্রণে একটু একটু তার এই সৃষ্টি গড়ে তুলেছিলে। গর্ব হয়। আমার দেশ প্রেমে।
সত্যি কথা বলতে কি? না আমরা কেউ দেশকে ভালোবাসি, না আমাদের মনে কোন দেশ প্রেম আছে। আমাদের দেশ প্রেম হচ্ছে স্বপ্নে। আর তার প্রকাশ গপ্লে, কবিতায়, নাটকে সিনেমায়।
২১ শে ফ্রেব্রুয়ারি আন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস। চারদিক দেয়াল লিখন, পোস্টার, ব্যানার, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১ শে ফেব্রু”।
আমরা স্মরণ করছি সেই মহান ভাষা শহিদদের। ছালাম, রফিক, বরকত। রাত ১২টা বাজল শহিদ মিনারে একগুচ্ছ ফুল ছুরে দিলাম, ব্যাস আমার কাজ শেষ।
তার পর বাসায় বসে হিন্দি সিনেমা, বা এফএম রেডিও মডার্ন বাংলা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরা। পরদিন আবার সেই আগের মত যেমন চলছিল তেমনি চলা। বলবেন ভাই এনটারটেনমেনট তো চাই। ইন্ডিয়ান টিভি চ্যানেল ছারা আর তো কিছু নেই। তা ঠিক “স্টার জলসার” সিরিলায় যত মানুষ দেখে NTV কিংবা চ্যানেল ”আই” নাটক তত মানুষ দেখে না।
বলবেন ওদের মত আমাদের অনুষ্ঠানের মান ভাল না, আর্টিস্ট নেই, লোকেশন নেই। আমরা যদমদ একটা কিছু বানিয়ে মার্কেটে ছেড়ে দি। পাবলিক এবার খা। পাবলিকের রুচি, পাবলিকের কাছে আমাদের কাজ আমরা করেছি।
একটার পিছনে হাজারটা যুক্তি, হাজার খানেক ইস্যু দাড়িয়ে যায়। একদল মার্কেট গবেষণায় ব্যাস্ত। রেজাল্ট জিরো। যে লাউ সেই কদু।
মার্চ এসেছে ব্যাস শুরু হয়ে গেল তর্ক। এ তর্কের নাম স্বাধীনতার ঘোষক। এ তর্কের শেষ নেই। চলছে তো চলছেই..................
আসলে কে স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষক? জানেন কি?
বাংলাদেশের মহান দুজন রাজনীতিবিদ। সকলের শ্রদ্ধার প্রাত্র। আমরা তাদের সন্মান করি। নিজের আদর্শ জ্ঞান করি আবার তাদের নিয়েই কাঁদা ছুড়াছুরি করি এঁর কোন মানে হয়? মিটিং কিংবা মিছিলে আমরা শ্লোগান তুলি, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শের সৈনিক, আমরা জিয়াউর রহমান এঁর আদর্শের সৈনিক। না বর্তমানের কোন রাজনীতিবিদের আদর্শে এই মহান নেতারা আছেন আর না ভবিষ্যৎ এ কোনদিন জন্ম নেবেন।
মুখেই কেবল “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ঢাকা এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য অংশে আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। এই গণগত্যার প্রাক্কালে তৎকালীনআওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, গণপরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ নিরাপত্তার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। ৩০ মার্চের মধ্যেই তাদের অনেকে কলকাতায় সমবেত হন। প্রাদেশিক পরিষদের যে সকল সদস্য ১০ এপ্রিল এর মধ্যে কলকাতায় পৌছতে সক্ষম হন তাদের নিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। তার নির্দেশেই অধ্যাপক রেহমান সোবহান আরো কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া প্রণয়ন করেন[১]।এরপর ব্যরিস্টার আমীর-উল-ইসলাম এই ঘোষণাপত্রের আইনগত দিকগুলো সংশোধন করে একে পূর্ণতা দান করেন[২]। এই ঘোষণাপত্রটি প্রথমে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর থেকে প্রচার করা হয়[৩]।এরপর আবার ১৭ এপ্রিল তারিখে মেহেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী স্থান বৈদ্যনাথতলায় (পরবর্তী নাম মুজিবনগর) এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপরিষদের সদস্য এম ইউসুফ আলী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন[৪]। এই ঘোষণার মাধ্যমে নবগঠিত প্রবাসী আইন পরিষদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে সাথে সাথে এ ঘোষণাপত্র প্রবাসী সরকারের অবস্থান ও যৌক্তিকতা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে[৫]। এদিনই ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়া হয় এবং একই সাথে ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কার্যকর হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। এর ফলে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারও বৈধ বলে স্বীকৃত হয়। এ ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকলের মধ্যে চেইন অফ কমান্ড স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়।
ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বিবরণ
মুজিবনগর, বাংলাদেশ
তারিখ: ১০ এপ্রিল ১৯৭১
যেহেতু ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়েছিল; এবং
যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল;
এবং
যেহেতু জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সনের ৩রা মার্চ তারিখে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিবেশন আহ্বান করেন; এবং
যেহেতু তিনি আহূত এই অধিবেশন স্বেচ্ছার এবং বেআইনীভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন; এবং
যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করার পরিবর্তে বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পারষ্পরিক আলোচনাকালে ন্যায়নীতি বহির্ভূত এবং বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধ ঘোষণা করেন; এবং
যেহেতু উল্লিখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান; এবং
যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং এখনও বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নির্যাতন চালাচ্ছে; এবং
যেহেতু পাকিস্তান সরকার অন্যায় যুদ্ধ ও গণহত্য এবং নানাবিধ নৃশংস অত্যাচার পরিচালনার দ্বারা বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিদের পক্ষে একত্রিত হয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব কে তুলেছে; এবং
যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপর তাদের কার্যকরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে;
সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক আমরা, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আমাদের সমবায়ে গণপরিষদ গঠন করে পারষ্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে
বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি এবং এর দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি; এবং
এতদ্বারা আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; এবং
রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন; ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অধিকারী থাকবেন; এবং
তাঁর কর ধার্য ও অর্থব্যয়ের ক্ষমতা থাকবে; এবং
বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য আইনানুগ ও নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতারও তিনি অধিকারী হবেন।
বাংলাদেশের জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, কোনো কারণে যদি রাষ্ট্রপ্রধান না থাকেন অথবা যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাজে যোগদান করতে না পারেন অথবা তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে যদি অক্ষম হন, তবে রাষ্ট্রপ্রধান প্রদত্ত সকল দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পালন করবেন। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, বিশ্বের একটি জাতি হিসাবে এবং জাতিসংঘের সনদ মোতাবেক আমাদের উপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তেছে তা যথাযথভাবে আমরা পালন করব। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে। আমরা আরও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে, আমাদের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য আমরা অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলীকে যথাযথভাবে রাষ্ট্রপ্রধান ও উপ-রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য দায়িত্ব অর্পণ ও নিযুক্ত করলাম।
স্বাক্ষর: অধ্যাপক এম. ইউসুফ আলী
বাংলাদেশ গণপরিষদের ক্ষমতা দ্বারা
এবং ক্ষমতাবলে যথাবিধি সর্বাধিক ক্ষমতাধিকারী।
আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ ১৯৭১
বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রদত্ব ক্ষমতাবলে আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ নামে একটি আদেশ জারি করেন। ঘোষণাপত্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সকল আইন চালু ছিল, তা রক্ষার্থে এই আদেশ বলবৎ করা হয়[২]।
আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ ১৯৭১
মুজিবনগর, বাংলাদেশ, ১০ এপ্রিল ১৯৭১, শনিবার ১২ চৈত্র ১৩৭৭
আমি বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতি এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে এ আদেশ জারি করছি যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সকল আইন চালু ছিল, তা ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একইভাবে চালু থাকবে, তবে প্রয়োজনীয় সংশোধনী সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের জন্য করা যাবে। এই রাষ্ট্র গঠন বাংলাদেশের জনসাধারণের ইচ্ছায় হয়েছে। এক্ষণে, সকল সরকারি, সামরিক, বেসামরিক, বিচার বিভাগীয় এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছেন, তারা এতদিন পর্যন্ত নিয়োগবিধির আওতায় যে শর্তে কাজে বহাল ছিলেন, সেই একই শর্তে তারা চাকুরিতে বহাল থাকবেন। বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত সকল জেলা জজ এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সকল কূটনৈতিক প্রতিনিধি যারা অন্যত্র অবস্থান করছেন, তারা সকল সরকারি কর্মচারীকে স্ব স্ব এলাকায় আনুগত্যের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করবেন।
এই আদেশ ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলে গণ্য করতে হবে।
স্বাক্ষর:- সৈয়দ নজরুল ইসলাম
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি
তথ্যসূত্র
১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র, তৃতীয় খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা, ১৯৮২, পৃষ্ঠা ৪-৭
২) বাংলাপিডিয়া নিবন্ধ: স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। লেখক: সাজাহান মিয়া।
৩) রেহমান সোবহান (১৯৯৮)। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ঃ একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য। মাওলা ব্রাদার্স। পৃ: ১০৪–১০৫। আইএসবিএন 984-410-102-6
৪) হোসেন তওফিক ইমাম (২০০৪)। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১। আগামী প্রকাশনী। আইএসবিএন 984-401-783-1।
৫) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম (২০০৬)। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে। অনন্যা প্রকাশনী। আইএসবিএন 984-412-033-0।
৬) শামসুল হুদা চৌধুরী (২০০১)। একাত্তরের রনাঙ্গন। আহমদ পাবলিশিং হাউস। আইএসবিএন 984-11-0505-0
৭)মঈদুল হাসান (২০০৪)। মূলধারা ৭১। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। আইএসবিএন 984 05 0121 6।
তাহলে দাঁড়াল কি? একটি বিদ্রোহী জাতি গোষ্ঠী। কোন সরকার গঠন ছাড়াই নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করল? আর তাই নিয়ে আমরা তর্কে লিপ্ত।
১৯৭১ থেকে আজ ২০১৬ বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের মানুষ কতটুকও বদলেছে? যে আশা, যে স্বপ্ন নিয়ে একদিন পাকিস্থানি শিক্ষিত সামরিক বাহিনীর বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল। আজ ৪৫ বছর পর তার কতটুকও আমরা পেলাম?
সেই বাল্য কাল হতেই জেনে আসছি! ইংরেজরা আমাদের শোষণ করেছে, পাকিস্থানিরা আমাদের শোষণ করেছে। হ্যাঁ করেছে বৈকি! করেছে বলেই না আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পেয়েছি, রেলে চরতে পারছি, বড় বড় ফ্যাটরি আমাদের দেশে হয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য নির্ভীকতা অর্জন করতে পেরেছিলাম।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে ইলেকট্রিক লাইনের পোল দাড় করানো হচ্ছে। ঘরে ঘরে ইলেকট্রিক লাইন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সবুজ মাঠের বুক চিরে পিচের রাস্তা চলে যাচ্ছে।
বিনিয়োগ কারি দেশ সুমহ আমাদের সহজ সর্তে ঋণ দাণ করছে। যাতে আমরা আরও ইলেকট্রিফিকেশন করতে পারি। নতুন নতুন রাস্তা, ব্রিজ,কাল্ভারট বানতে পারি। ওঁরা আমাদের প্রলুব্ধ করবে আমরা তাতে সারা দিব জেনেই এমন প্রস্তাব করে আমরাও মাথা পেতে নেই।
অবাক হয়ে যাই, ইলেকট্রিফিকেশনে লোণ কে দিল অমুক দেশ। ইলেক্ট্রোনিক সামগ্রী কে সবচে বাংলাদেশে বিক্রি করে কেন? সেই দেশ।
যে দেশ গাড়ি বানায় সেই দেশ রাস্তা বানাতে লোণ দিবে এটাই স্বাভাবিক। তাই না? রাস্তা হল, নতুন বাস সার্ভিস চালু হল। পাবলিকের পায়সা এক শ্রেণীর ট্রান্সপোর্ট মালিকের হাতে। সরকার কি পেল? রাজস্ব কি হল? ঘোড়ার আণ্ডা!
ফ্রি বছর নতুন বাজেট হয়। তাতে এক সুমুদ্র ঘাটতি? এই ঘাটতি পূরণের উপায় বিদেশি বিনিয়োগ। বলি আমরা কি কোনদিনও স্বাবলম্বী হব না।