যারা আমাকে ভাবে নির্ঘাত উন্মাদ, ঘরবন্দি থেকে কী সব লিখে রাখছি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়... তারা জানুক, আশ্চর্য সংঘাতের ভিতর কীরকমভাবে বেচে আছি আমি... বুকের ভিতর দাঁড়ানো একাকী বৃক্ষ থেকে অনর্গল পাতা ঝরে আর গোপনে অরগ্যানে বাজতে থাকে ছাই ওড়ানো সুর! আমার প্রতিটি স্বপ্নঘরের দরজায় দুলছে বিষধর গোখরের ফণা। তার চোখে চোখ রেখে শতাব্দীর ...
প্রতিদিন স্বাভাবিক নিয়মে বেঁচে থাকি-। গতকাল যেভাবে বেঁচেছিলাম মনে হয়েছিল- পরেরদিন বেঁচে থাকার দরকার নেই। তারপরও বেঁচে থাকি। জানালার কাঁচ দিয়ে আকাশ দেখি, সময় হলে অফিসের পথে পা বাড়াই অথবা মিশে যাই এই মানুষের ভারে নুয়ে পড়া শহরের অহংকারে। মহাবিশ্ব অথবা পৃথিবীর নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে আমাকে আদেশের শব্দ অনুসরণ করতে হয়। এভাবেই নিয়মের বারান্দায় একটি চেয়ারে পেতে তাতেই হেলান দিই এবং আমি চা খাই। ঘুমের পরে আয়নায় নিজেকে দেখবার জন্যে আগ্রহী হই- নানাবিধ কারণে কারো সাথে রেগে যাই, কাউকে ভালোবেসে ফেলি, কাউকে বুকে জড়াই এবং অনেককেই ভুলে যাই।
অনেকের অবজ্ঞা, কারো ছায়ামুখ কিংবা উষ্ণ আবেগেরও মুখোমুখি হই। কারো ঘোলা চোখে ক্ষুধার নখগুলো ভেসে ওঠে এবং আমি তা দেখতে পেয়ে ভেঙে পড়ি- একটা টেবিল পেতে কিংবা প্লেটের নিচে হাত নিয়ে ভাতভর্তি আঙুলগুলো লোকটির মুখে তুলে দিতে চাইলেও পারি না। এদিকে আছে আলস্য, খানিকটা শারীরিক তারুণ্য অথবা বরফের পেয়ালায় চুমুক। তারপর ছায়াদেখা রাত, অন্ধকার শুন্যগোলক।
চায়ের কাপ আমার প্রিয় জিনিসের তালিকায় নাম লেখায়- কারণ চায়ের পেয়ালা থেকে যে ধোঁয়া উড়তে থাকে তাতে আমি খুঁজে পাই দৃশ্য। নানাবিধ অঙ্কন। আর্ট। দেরিতে দরজা বন্ধ করে শুতে যাওয়া কিংবা দরোজা খুলেই ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস বহু পুরনো। হাস্যোজ্জ্বল সকালে টের পাই দরোজাটা খোলাই ছিল- শার্ল বোদলেয়ার, বুদ্ধদেব কিংবা দারবিশের কবিতার বইয়ের ওপর ধুলোর আস্তরণ মনে করিয়ে দেয় অনেকদিন হাতে নেয়া হয়নি । টের পাই পাশ্চাত্যের দর্শন আমাকে টানছে না- প্রাচ্যের সভ্যতা আমাকে বিমুখ করছে ইতিহাসের পাতা থেকে। অনুমান করি আজ বৃষ্টি হচ্ছে- ভুল ভাঙে ইট ভাঙতে থাকা নারীর হাতে উল্কির মতো ফোস্কা পড়া হাত দেখে। ধারণা করি আজ রোদ হাসবে- আদালতের রায় শুনে আগুন লেগে যায় শহরের ফুটপাতে।
আমি ধারণা করি এবার সূর্যমুখী পাহাড়ে দাবানল ছড়িয়ে যাবে- আমার অনুমান পাথর হয়ে যায়। মৃত্তিকালোভী ইঁদুরেরা ভয় পেতে শুরু করে। পাখিরা আকাশে আরেকটি আকাশ নির্মাণে ডানাগুলো বাতাসে উড়ায়- একে একে পুরো আকাশ পাল্টে যায় এবং অসাধারণ পাখিগন্ধফুল ফুটতে শুরু করে। আমি অবাক হয়ে, পাখিদের ভালোবাসতে শুরু করি।