somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জমিদার পুষ্প সাহার পুকুর নিয়ে উত্তেজনা

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পুরান ঢাকার লালবাগের জগন্নাথ সাহা সড়কের ঐতিহ্যবাহী পুষ্প সাহা পুকুরটি যেভাবে দিনে দিনে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে চলে গেল, তা সত্যিই বিস্ময়কর।
পুষ্প সাহা উনিশ শতকের শেষের দিকে এখানে দ্বিতল বাড়ি ও একটি মন্দির নির্মাণ এবং এ পুকুরটি খনন করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি সপরিবারে দেশ ত্যাগ করেন।


১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর সরকার এ সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করে। অনেক দিন ধরে কিছু অবাঙালি লোক পুষ্প সাহার বাড়িটি লিজ নিয়ে বসবাস করে আসছে। আর পুকুরটি স্থানীয় লোকজন ব্যবহার করে আসছিল। পুকুরটি ঘিরে মনোরম পরিবেশ থাকায় মানুষ বিকেলে এখানে বেড়াতে আসত। তখন এ পুকুরে ছিল দুটি ঘাট। একটি পুরুষদের ব্যবহারের জন্য। অন্যটি মেয়েরা ব্যবহার করত।
সূত্রে আরো জানা যায়,


১৯৬৫ সাল থেকে স্থানীয় ‘আজাদ মুসলিম ক্লাব’ পুকুরটি ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বছর বছর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিল। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। কিন্তু মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হলে জনৈক ব্যক্তি ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ এনে পুকুরটি দখলের চেষ্টা চালায়।
কিন্তু স্থানীয় লোকজন চ্যালেঞ্জ করলে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এরপর পুকুরটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিল। সম্প্রতি একটি চক্র পুকুরটি দখলের জন্য ওঠেপড়ে লাগে। ইতোমধ্যে তারা গোপনে পুকুরটি ভরাট শুরু করেছে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্থানীয়রা অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও পুকুর রক্ষায় শহীদনগর, জগন্নাথ সাহা রোডের বাসিন্দারা একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি পুরো শহীদনগর ও পুকুরটি চারদিক প্রদক্ষিণ করে।
আজাদ মুসলিম ওয়েলফেয়ার কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর হাজি আলতাফ হোসেন বলেন, ‘প্রায় ৬০ বছর ধরে পুষ্প সাহা পুকুরটি ‘আজাদ মুসলিম ক্লাবের’ অধীনে ছিল। সরকার থেকে লিজ এনে আমরা এ পুকুরে মাছের চাষ করতাম। উপার্জিত অর্থ দিয়ে ক্লাব চলত।’
তিনি আরো বলেন, ‘মহাজোট সরকার আসার পর আমাদের লিজ দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। আমরা পুনরায় চিরস্থায়ী লিজ চেয়ে আবেদন করেছি। আমরা নিজেদের টাকায় পুকুরটি সংস্কার করে মাছ চাষ ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। এলাকাবাসী যাকে ভূমিদস্যু হিসেবে চেনে, তিনি এখন পুকুরের মালিক সেজে তা দখলের পাঁয়তারা করছে।’
কর্তৃপক্ষকে পুকুরটি রক্ষার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান তিনি।



জমিদার পুষ্প সাহার পুকুর নিয়ে উত্তেজনা
স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোশাররফ হোসেন খোকন এ পুকুর সম্পর্কে বলেন, ‘পুকুরটি রক্ষার জন্য আমি আগেও সচেষ্ট ছিলাম, এখনো আছি। নাজিমুউদ্দিন হঠাৎ পুকুরটির মালিক সেজে ভরাট করতে থাকায় বিস্মিত হয়েছি। তিনি এ এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। প্রায়ই তিনি জাল দলিল করে বিভিন্ন মানুষের জায়গা-জমি দাবি করে বসেন। তবে পুকুরটি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের নীরবতাও রহস্যজনক। ঐতিহ্যবাহী এ পুকুরটি রক্ষায় সরকার এবং সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।’
শহীননগরের বাসিন্দা মো. সাহানুর, মো. ইউসুফ ও মো. হেমায়েত বলেন, ‘ভূমিদস্যু নাজিমুউদ্দিন পুকুরটি পুরোপুরি দখল করে প্লট আকারে তা বিক্রি করতে চাইছে। পুকুরটি রক্ষায় আমরা এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছি। আমরা চাই পুকুরটি আগের পর্যায়ে ফিরে আসুক।’
তারা আরও বলেন, ‘নাজিমুউদ্দিন নিরীহ মানুষের হাতে অস্ত্র দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিতে চায়। পরে নিজেই র‌্যাবের হাতে ধরা খায়। বয়স্ক দেখে র‌্যাব তাকে ছেড়ে দেয়।’
তারা আরও অভিযোগ করেন, ‘পুকুরটি রক্ষায় যারা বেশি তৎপর ছিল তাদের মধ্যে আজিম, রানা ও ইস্তানুকে গত ৩১ আগস্ট খেলনা অস্ত্র দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেন নাজিম। এভাবে মহল্লায় এক অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছেন তিনি।’
শহীদনগরের মো. মকবুল হোসেনের ছেলে মো. রাসেল বলেন, ‘নাজিমুউদ্দিনের প্রত্যক্ষ মদদে গত ৮ আগস্ট আমার জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের জন্য ১০/১২ যুবক আসে। তারা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে দেয়। আমি পুকুরটি রক্ষার পক্ষে থাকায় নাজিম উদ্দিন আমার ওপর হামলে পড়ে।’
রাসেল আরো বলেন, ‘আমার জান-মাল রক্ষায় ওই দিন রাতে লালবাগ থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করি। ডায়েরি নং-৩১৩ এবং আমার জমির ওপর হাইকোর্টের নিষেজ্ঞা থাকার পরেও নাজিমুউদ্দিন দখলের চেষ্টা চালায়। পরে এলাকাবাসীর বাঁধার মুখে তিনি পিছু হটতে বাধ্য হন। অবশেষে আমাকে খেলনা পিস্তল দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিতে আরেকটি প্রয়াস চালায় এই নাজিম উদ্দিন।’
এদিকে নাজিমুউদ্দিনকে সহায়তা করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল মোস্তাকিন বলেন, ‘কাগজপত্রের ব্যাপার এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা রয়েছে। এছাড়া পুকুর সম্পর্কে এলাকাবাসী বলতে পারবে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’
নাজিমুউদ্দিনের (৬৫) সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার বাসায় গিয়েও কোনো সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:০৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×