লেখালেখিটা আমার ঠিক আসে না। ব্যকারন জ্ঞান নেই। বচন ভঙ্গিও বেক্ষাপা সবার সাথে সুট করে না। তারপরেও একটা আন্তরিক প্রচেষ্টা সবসময় থাকে কিন্তু ল্যাপটপের কি বোর্ডে হাত রাখলেই, কোঁথ থেকে এক ঝাক নেই, নেই এসে কাধে ভর করে।
ঠিক তিন দিন আগে ভিজিয়ে রাখা ছোলার মতন, এখুনি মাটিতে ছড়িয়ে দিলে চারা গাছ গজাবে তারপর বাতাসে দুলে দুলে আমার ব্যর্থতার গান গাইবে।"
এক
মি. আশিকুর রহমান কি অবস্থা আপনার?
-খুব খারাপ।
কেন, কেন গার্ল ফ্রেন্ড ভেগে গেছে বুঝি?
-না, না।
তবে......?
-সময় চলে যাচ্ছে, নিজেকে প্রমান করার।
কি প্রমান করতে চান?
-আমি যে একজন মানুষ............।
এতে প্রমান করার কি আছে? সেটাত ঈশ্বরী প্রমান করেদিয়েছে। তাছাড়া আপনাকে ত বানরের কিংবা গাধার মত দেখায় না। কাজেই আপনাকে গাধা বলে, এমন গাধা ত দুনিয়ার বুকে একটিও নেই।
-আছে.........।
বলেন কি কে সেই গাধা......?
আমার মাস্টার মশাই, আমার পিতৃদেব, আমার জননী, আমার ভাইয়েরা, বয়েসে বড় সবাই এমন কি আমার জী এফও।
আমার পিতৃদেব স্কুলে ভর্তি করার সময় স্যারদের কাছে মিনতি করেছিলেন, আমার গাধাটাকে মানুষ করেদিন। আমি যদি মানুষই হতাম তবে আমার পিতৃদেব ওভাবে ওই কথা বলতেন না। সেই থেকে চলছে আমায় মানুষ করার আপ্রান প্রচেষ্টা।
ভেরি স্যাড, ভেরি স্যাড। সত্যই আপনার মনের পজিশন খুব খারাপ। আমার মনে হচ্ছে ওটা এখন ২৩২ ড্রিগ্রী বেঁকে গেছে, ওটা দিয়ে আর ত্রিভুজ আঁকান সম্ভব না।
তা এখন কি করবেন, ঠিক করলেন?
-কিসসু না।
মানে......!
-এখন দুটো ষ্টিক ফাটব, তারপর সপ্নের রাজ্যে ঝাপ দিব। মাঝ পথে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে আমি জেগে উঠব তারপর আগে যা করছিলাম তাই করব হে হে হে হে হে............
তাহলে এতক্ষণ যে......?
-ওটা ইমশন ছিল, কেটে গেছে।
ওঃ
-কি ?
কি মানুষ টানুষ হওয়া নিয়ে বলছিলে ?
-ওটা আমার বাবার কাজ ছিল, আমার না।
মানে কি বলতে চান আপনি ? নিজের দোষ অন্যের চাপিয়ে দিচ্ছেন।
-আজ যদি আমার বাবা অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হতেন ? তাহলে আমার আর কোন কষ্ট, অভাব থাকত না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাড়ি, অসংখ গাড়ি, বন্ধু বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী, ভক্ত, সুন্দরী যুবতীরা আমার চার পাশে মৌমাছির মত গুঞ্জন করত। আমার মন তার সকল খায়েস পূরণ করে খুশি থাকত।
ছেলে বেলা থেকে কি দিয়েছে আমার বাবা, দারিদ্রতা ছাড়া?
আহ...!
-উপহাস করছেন?
না।
-তবে ?
আসুন না একটু ফ্লাসব্যাকে যাওয়া যাক।
-যেমন?
আপনার স্কুলে। কোন স্যারের কথা কি মনে পরে? যে স্যার আপনাকে স্নেহ করতেন।
-পরবে না কেন! গুলজার স্যার আমাদের ইংরেজি সাবজেক্ট নিত। আমায় খুব ভালোবাসতেন। যদিও আমি কোনদিন ইংরেজিতে ৩৬ এর বেশি মার্ক তুলতে পারনি।
তবে ভালবাসত কেন?
-স্যার বলতেন আমার হাতের লেখা নাকি অনেক সুন্দর। স্যার আমার লেখার ভক্ত ছিলেন। আমায় বড় বড় স্বপ্ন দেখাতেন। এমন কি বারকয়েক হোঁচট খাবার পর যখন মনে হল আমি আর কোনদিনই স্কুলের গণ্ডি পেরুতে পারব না। তখন গুলজার স্যার আমায় একদিন ধরে এনে পরিক্ষায় বসান।
আমি তার কাছে চিরঋণী। যদিও সেই ঋণ প্রকাশ করতে আমি আর কোনদিন তার মুখমুখি হইনি।
কিন্তু কেন যান নি?
-ভয়ছিল।
কিসের ভয়?
যদি আবার বড় ঝামেলায় জড়িয়ে ফেলেন? ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স পড়তে বলেন। পড়তে আমার ভীষণ ভয় লাগে বিশেষ করে ইংরেজি।
ওঃ
-উপহাস করছেন?
আর কোন স্যারের কথা মনে নেই?
-তরুন স্যার আমাদের অংক সাবজেক্ট নিত। ক্লাসে সারাক্ষণ আমাকে গালমন্দ করত। বলত তোর ব্রেন ত আনইউজড রে, চাইনিসরা পেলে কোটি কোটি ডলার দিয়ে কিনে নিবে।
কেন, কেন ?
-আসলে অংক জিনিষটা আমার মাথায় ঠিক খেলত না। একটা বানর কেন তৈলাক্ত বাস বেয়ে উপরে উঠবে, বাংলাদেশে কি বাঁশের অভাব পড়েছে? যতসব বেকুবের দল। অংকে আমি কখনই ২৮ এর বেশি মার্ক পেতাম না। টেস্ট পরিক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার সময় স্যার আমায় ডেকে বললেন, দয়া হল তাই পাশ করলি, না হলে জাহান্মামে বসে অংক কষতিস।
হা হা হা হা বলেন কি?
-উপহাস করছেন ত? আপনি বা ছাড়বেন কেন? করেন করেন এমন সুযোগ ত সব সময় পাওয়া যায় না।
ঠিক তা নয়। আসলে আমি চিন্তিত আপনার ভবিয্যত নিয়ে।
হুম আর কোন স্যারের কথা মনে পরে।
-কাসেম স্যার আমাদের কমার্স এর সাবজেক্ট নিত। খুব বড় মাপরে টিচার ছিলেন। কি এক অদ্ভুত কারনে আমাদের সেই পাড়াগাঁয়ের স্কুলে জীবনটা কাটিয়ে দিলেন সেটা আজও রহস্য।
স্যারের ক্লাসে আমি ছিলাম সেরা, হিসাববিজ্ঞানে আমার মাথা খুব খেলত। এই কারনেই স্যার আমায় খুব স্নেহ করতেন।
আর আপনার ক্লাসমেট রা তাদের কথা মনে নেই আপনার। যোগাযোগ আছে কি তাদের সাথে?
-এই ধরেন বছরে একবার বাড়ি গেলে মাঝে মধ্যে তাদের সাথে দেখাট্যাঁখা হয় আর কি?
আশ্চর্য মানুষ ত আপনি.?
-শুনুন এভাবে অপমান করবেন না, বলেদিলাম।
তারপর আগে বারুন আপনার ক্লাসমেটদের সাথে যোগাযোগ নেই কেন?
-আমি আসলে তাদের ঠিক সহ্য করতে পারতাম না। আমার হিংসা লাগত। সবাই কত সুন্দর সুন্দর ড্রেসআপে কেমন ফুল বাবু হয়ে স্কুলে আসত। আর আমি, সেই এক শার্ট? কোথাও বেরাতে গেলে সেই একই প্যান্ট? আমার জননী কোনদিন আমায় ২ টাকা বাদাম খাবার জন্য দিতে পারে নি। আমি এই রাগে স্কুলে যেতাম না। জননী আমায় বকত, আমি টেপ রেকর্ডার মনে করে চুপ করে থাকতাম। আমি জানতাম চার্জ ফুরিয়ে গেলে এমনি থেমে যাবে। আমার মনে একটাই ক্ষোভ আমি কেন ওদের মত হতে পারিনি।
আসলে আপনি বাইরের জগতটাকে ভয় পান। লোকেদের সাথে মিশতে ভয় পান। গরীব হিসাবে আপনার অহঙ্কার করার কথা ছিল। আপনি সেই দন্যতাকে অভিশাপ মনে করেন। নিজেক গুটিয়ে নেন। ভয় পান পাছে আপনার দারিদ্রতা প্রকাশ পেয়ে যায়। আপনি লোকেদের অনুকরণে বিশ্বাসী। এতটা দিন আপনি শুধু লোকদের অনুকরন করেই এসেছেন, এমন কি এখনও করছেন। নিজেকে প্রকাশ করুন এটাই আপনার মুক্তির পথ।
-সবাই কেবল উপদেশ বানী ঝারতে জানে। আপনাদের সমস্যা কি জানেন, সবাইকে আপনার ছাত্র মনে করেন।
এ কোন উপদেশ বানি নয় মি.। এ হচ্ছে আপনার কর্মকাণ্ড, আপনার অতীতের লেজার বুক।
-আমি মানি না। আজ আমি বিপাকে পরেছি তাই আপনি আমার উপর আপনার ব্যর্থতার জ্ঞান ঝারছেন। দুদিন বাদে আমার যখন ভালো সময় আসবে তখন দেখবেন? লোকেদের পিছে পয়সা খরচ করতে পারলে হল। তবেই তারা আমার পিছে থাকবে আমার কথা বলবে।
এরা আপনার প্রকৃত বন্ধু নয় মি. আশিকুর রহমান। এমন দুএক জনের নাম বলতে পারেন যে, আপনি এরকম জেনেও আপনার পাশে থেকেছে। পারবেন বলতে?
-মানে মানে।
জানতাম বলতে পারবেন না। আসলে এমন কেউ নেই আপনার সাথে। অনেকেই এসেছে কিন্তু আপনার স্বভাব, আপনার চরিত্র তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে দেয়নি। সবাই বিরক্ত হয়ে আপনার কাছ থেকে পালিয়ে গেছে। আপনি কাউকে বিশ্বাস করেন না। সবাইকে নিজের প্রয়োজনে খাটাতে চান। তাদের প্রয়োজনে কখনই নিজে থেকে এগিয়ে যান না। আপনি শুধু সবার কাছে নিজের দুঃখ দুর্দশার কথা বলে নিতেই শিখেছেন, দিতে শিখেন নি।
-কি বলছেন এসব যাতা! আমার বাবা মা কখন এমনটি আমায় শেখায় নি। আমি কত বড় বংশের ছেলে আপনি জানেন?
(চলবে)