(পর্ব-০১)
প্রতিটি বিয়ে বাড়িতে এমন একজন থাকে যার কাজই থাকে সবাইকে ধমকানো। বাঁশটা এখানে কে পুঁতছে, মুরগী এখনো জবাই হয় নি কেন, গরুর গায়ের রঙ কালো কেন, বাচ্চাগুলা ঘুড়ে বেড়াচ্ছে কেন এমন নানান ইস্যুতে তারা ধমকনো দায়িত্ব মনে করে। বেশিরভাগ সময় বাড়ির কর্তা টাইপ মানুষ এই মহান দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
আফতাব সাহেব ও একই কাজ করছেন। কারণে অকারণে সবাইকে ধমকাচ্ছেন। সামনে তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে। প্রচুর কাজ। এখনো কাজের কিছুই হয় নি। তার ধারণা সবাই গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। বিয়ে যে কত সিরিয়াস একটা ব্যাপার কেউ বুঝছে না। ঘরভর্তি গাধার দল।
আফতাব সাহেবের হাতে তার মেয়ের বিয়ের কার্ড। তিনি খুব মনযোগ দিয়ে কার্ড পড়ে দেখছেন কোথাও কোন ভুল আছে কি না। বিয়ের কার্ডে ভুল থাকলে সমস্যা। মান ইজ্জতের ব্যাপার। তার সামনে তার ছোট শ্যালক মামুন দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন পরপর রুমাল দিয়ে ঘাম মুচ্ছে। বিয়ের কার্ড ছাপানোর দায়িত্ব তার উপরে ছিল। কি কারণে জানি না মামুন আফতাব সাহেবকে অনেক ভয় পায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আফতাব সাহেব কোন একটা ভুল খুঁজে বের করবেন এবং তাকে ধমক দিবেন।
-“স্টুপিড, রাবিশ,গাধা। কার্ডে আমার নাম ভুল কেন? কন্যার পিতার নামের বানানে এত অবহেলা কেন? কান ছিঁড়ে ফেলা উচিত। ”
এই নিয়ে দুইবার কার্ডে বানান ভুল। একবার কন্যার মায়ের নামে একবার কন্যার পিতার নামে। ঘটনা হচ্ছে কার্ডে বানান ভুল যে শুধু এই দুইবার ই হবে তা নয়। সামনের দুই বার ও কার্ডে বানান ভুল আসবে। কী কারণে ভুল আসবে তা সময়ের সাথে সাথে পরিষ্কার হতে থাকবে।
রুমটা অনেক ছোট হলেও বেশ সাজানো গোছানো। কি যেন একটা মায়া মায়া ভাব। কোন এক ষোড়শী মেয়ে যেন যত্ন করে রুমটা গুছিয়েছে। দরজার পাশে ছোট একটা আয়না। আয়নার গ্লাসে কপালের টিপ আটকানো। দেয়ালে সালমান শাহ এবং শাবণূরের একটা সিনেমার পোস্টার। পাশে লন্ডণ ব্রিজের একটা পোস্টার। পোস্টারে লন্ডণ ব্রিজের পাশে আইফেল টাওয়ার কী করছে বোঝা যাচ্ছে না। রুমটা ঠিক কার তাও বোঝা যাচ্ছে না। যার রুম তার পেশা সম্পর্কে আন্দাজ করা কষ্টকর। শেখ হাসিনা,খালেদা জিয়া কারো ছবি থাকলে সুবিধা হত। পরিচয় সহজে আন্দাজ করা যেত। তারপরেও রুমটা কার এটার একটা লিস্ট করা যেতে পারে। না। লিস্ট করতে ইচ্ছা করছে না। প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা করছে। জ্বরের তাপে বোধহয় বিছানায় আগুন লেগে যাবে। আগুনে রুম পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে। আচ্ছা রুম পুড়োলে রুমের মালিক কার জন্য আফসোস করবে? সালমান শাহ না আইফেল টাওয়ার যুক্ত লন্ডণ ব্রিজ?
প্রচণ্ড জ্বরে ঘোরলাগা ভাব আসে। চোখ বন্ধ করলে মনে হয় অসীমে তলিয়ে যাচ্ছি। সেই অসীম থেকে টকটকে লাল লিপস্টিক দেয়া এক মেয়ে আমার কপালে হাত রাখলো। তার হাত ঠাণ্ডা। পরম মমতায় সে আমার কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষনের মধ্যে হয়তো গুনগুন করে ঘুমাপাড়ানি গান গাইবে। কিন্তু না। গানের পরিবর্তে সে আমাকে একের পর এক প্রশ্ন জিজ্ঞসা করছে-ভাইজান আপনার শরীর কেমন, বাড়ি কই আপনার? আমি কোন প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছি না। আমার ধারণা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলে সে আর হাত বুলিয়ে দিবে না।
“ভাইজান আপনার নাম কী?
আমি বিড়বিড় করে বললাম-“আমার নাম রাশেদ”
নিজের নামের সৌন্দর্য বোধহয় এটাই। লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছা করে না। সবাইকে জানিয়ে দিতে মন চায়।