ঝুম বৃষ্টিকে বলা হয় ক্যাটস এন্ড ডগস। বাংলায় কুকুর বিড়াল বৃষ্টি। কুকুর বিড়াল বৃষ্টির মত শহর জুড়ে পরেছে কুত্তা বিলাই গরম। মেজাজ গরম আছে তাই কুকুরকে কুকুর বলতে ইচ্ছা করছে না,কুকুরকে কুত্তা বলে তাচ্ছিল্য করতে ইচ্ছা করছে। এখন আবার মেডিকেলে যেতে হবে রোগি দেখার জন্য। রোগি দূর সম্পর্কের আত্মিয়। আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে ফালতু কাজ লাগে এই রোগি দেখতে যাওয়া। আরে বাবা আমি রোগি দেখে কি করবো?আমি কি ডাক্তার? মেজাজ আরও গরম হচ্ছে। কাউকে থাপড়ানো দরকার। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি থাপ্পড় খায় রিকশাচালকরা। বাঙালি ভিক্ষুককে পাঁচটাকা ভিক্ষা দিবে কিন্তু রিকশাওয়ালাকে দুই টাকা বেশি দিবে না যে তাকে এত কষ্ট করে টেনে আনলো। এর পিছনের কারনটা এর চাইতেও বিশ্রি।
রিকশায় উঠছি। পকেটে কোন টাকা নাই। ভাড়া চাইলে থাপ্পড় দিব। থাপ্পড় দিলে দুনিয়া ঠাণ্ডা।এছাড়া গরমের দিনে থাপ্পড়ের প্রয়োজন আছে। রিকশা হাওয়ার বেগে চলছে। খুব ভাল লাগছে। থাপ্পড়ের চিন্তা বাদ দিব কি না ভাবছি।
রিকশা মেডিকেলের সামনে থামলো।আমি নেমে হাঁটা দিলাম।
-ভাইজান ট্যাকা?
-ট্যাকা নাই।গরম মাথা আছে। গরম মাথা নিবি?
-ভাইজান গরিবের পেটে লাথি দিবেন?
-অবশ্যই লাথি দিব। তিন লাথি দিব। বড়লোকের পেটে লাথি দেয়া যায় না, গরিবের পেটে যায়। খাবি লাথি?
হতদরিদ্র রিকশাচালক আমার দিকে মায়াবি চোখে তাকিয়ে আছে।কান্নাকান্না ভাব। জগৎ সংসারের নির্মমতায় সে বাকরুদ্ধ।
আমি রোগি দেখে হতাশ।ব্যাপক হতাশ। রোগি বিছানার উপর বসে কমলালেবু খাচ্ছে আর খোশগল্প করার ভঙ্গিতে বসে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। রোগিদের যারা দেখতে আসে তাদের ও কিছু আশা ভরশা থাকে যে গিয়ে দেখবে রোগি সিরিয়াস,আজরাইল পাশে বসে আছে টাইপ সিরিয়াস। ডাক্তার বলেছেন ৭২ ঘণ্টার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তখন রোগির প্রতি সহানুভুতি জাগে। রোগি দেখতে আসা স্বার্থক হয়। কিন্তু রোগি দেখতে এসে যদি দেখা যায় রোগি খোশ মেজাজে আছে তখন মাথার টেম্পার ঠিক থাকে না।
রোগির দন্তপাটি দেখে মেজাজ আরও বিগরে গেল।রোগি থাকবে রোগির মত। রোগিরদের হাসতে দেখলে ভালো লাগে না। আফসোস,রোগিরা আর রোগিদের মত নেই। রোগিরা হয়ে গেছে সুস্থদের মত,আর সুস্থরা হয়ে গেছে রোগিদের মত। বাইরের সুস্থ মানুষরা করছে যত অসুস্থ কাজ। পেপারে আসছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষন।এই হচ্ছে আমরা আর আমাদের সুস্থ মানুষেরা।
-আরে রাশেদ। কি খবর?
রোগি আমাকে বলছে কি খবর?আমি আমার খবর দেয়ার জন্য হাসপাতালে আসছি? দেশটা যাচ্ছে কোথায়?
-জ্বি চাচা ভালো। আপনি ভালো?
রোগি সহ রোগির চারপাশের মানুষজন সব গম্ভির হয়ে গেল। আমি বোধহয় বড় কোন ভুল করে ফেলেছি। তাকে চাচা ডাকা হয়তো ভুল। দুঃসম্পর্কের আত্মিয় হলে এই এক সমস্যা। সম্পর্কে গন্ডগোল লাগে। আবার এটা ভুল নাও হতে পারে। "ভালো আছেন" বলাটার মধ্যেও ভুল থাকতে পারে। ভালো থাকলে তো আর হাসপাতালে থাকতো না। হাসপাতাল হাওয়া বাতাস খাওয়ার জায়গা না।সিরিয়াস জায়গা।হুম।
হাসপাতাল থেকে বের হলাম। এখন দেখা করতে হবে অরণির সাথে। ক্রন্দনকুমারীর অভিমান ভাঙতে হবে। প্রতি সপ্তাহে তিনি আমার উপর অভিমান করেন। আফসোস,প্রেমিকারা আর প্রেমিকাদের মত নেই।
আমার পাশে বসে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষটা নাক টানতেছে।ভালবাসার মানুষগুলো এত সুন্দর হয় কেন?একটু কম সুন্দর হলে এমন কি ক্ষতই হত?
কাঁদলে মানুষ এভাবে নাক টানে না। এভাবে নাক টানে যখন সে চায় তার পাশের মানুষটা জানুক সে কাঁদছে, পাশের মানুষটা তার কান্না থামানোর চেষ্টা করুক।
-অরণি, আজকের আকাশটা অনেক সুন্দর না? একদম মেঘ নেই।মনে হচ্ছে মরুভূমির আকাশ। আমাদের দেশটাও কি তবে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে? আমারাও কি উটে চড়ে যাতায়াত করবো? উটওয়ালা কি মিটারে ভাড়া নিতে রাজি হবে?
- রাশেদ চুপ করো প্লিজ। আমাকে একটু চুপচাপ কাঁদতে দাও।
- এত কাঁদার কিছু নাই। তোমার বিবাহ হচ্ছে এটা খুব ই স্বাভাবিক। বয়স হয়েছে বিবাহ তো হবেই। পাত্র তো ভাল। চেহারা যদিও সামাণ্য বাঁদরের মত।তবে ক্ষতি নাই। বাঁদর থেকেই একদিন মানুষ হবে দেখিও। ডারউইন সাহেবের ত্বত্ত বলে কথা। সহজ কথা না।
- তুমি মনে হয় খুব খুশি হয়েছো? আর টাকা পয়সা বেশি থাকলেই ভাল পাত্র হয়?
- না। তবে বাবা মা রা সবসময় ভাল পাত্র খুঁজে আনে।আর আমরা শালা প্রেমিকরাই শুধু তাদের কাছে খারাপ পাত্র।
- আমি ওই ছেলেকে বিয়ে করবো না। তুমি কিছু একটা করো
- শক্ত মাইর দিতে পারলে অবশ্য কাজ হতে পারে। দেখি কি করা যায়। তুমি টেনশন করিও না। বেশি সমস্যা দেখলে তোমাকে নিয়ে পালায় সুন্দরবন যাব। ক্ষুধা লাগলে গাছের পাতা খাব। লবন,মরিচ দিয়ে খাব।
- তুমি সত্যি আমাকে নিয়ে পালাবে?
-" হ্যাঁ সত্যি।তিন সত্যি। লাল জামাটা পড়বা,কপালে টিপ পরবা"
-শাড়ি পরবো?
-না।শাড়ি পরিও না। ট্রেনের পিছনে দৌড়ানো লাগতে পারে। শাড়ি পরলে সমস্যা। শাড়ি ব্যাগে নিও। ওখানে গিয়ে পরবা
-আচ্ছা। কোনদিন পালাবো আমরা?
-আজকে কয় তারিখ?
-২০ তারিখ।
-২৩ তারিখ পালাবো। ২৩ তারিখ পূর্ণিমা।
আমি অরণিকে নিয়ে পালাবো না। আমি চাই তার বাবা মার পছন্দের ছেলের সাথে তার বিয়ে হোক।বিয়ের পর তারা প্যারিসে হানিমুনে যাক। তারা যে বাসায় থাকবে সেখানে খুব সকালে মিষ্টি রোদ পরুক, তাদের বাথরুমে দুইটা কল থাক।একটা কল দিয়ে গরম পানি বের হবে আর একটা দিয়ে ঠাণ্ডা পানি বের হবে। খুব নিশিথে তার বর যখন ঘুমিয়ে যাবে তখন সে চোখ ভিঁজিয়ে একটা ছেলের কথা চিন্তা করে অভিমান করুক যে তাকে খুব খুব মিথ্যা বলতো।
-রাশেদ
-হু
- দুপুরে খেয়েছো?
-হু
-মিথ্যা বলছো কেন?
-কিভাবে বুঝলা?
-তুমি যখন মিথ্যা বলো তখন তোমার চোখ কাঁপে
-ও আচ্ছা
-চলো তোমাকে খাওয়াই। আমি নিজ হাতে তোমাকে তুলে খাওয়াবো।
টেবিলের দু প্রান্তে আমরা দুজন মাঝখানে তেহারি,কোল্ড ড্রিংক্স,টিশ্যুপেপার। টিশ্যুপেপারে আমার অরণির চোখের জল। টিশ্যু পেপার হারিয়ে যাবে, চোখের জল শুকিয়ে যাবে।কিন্তু অরণী, তোমার আমার হৃদয় ঘটিত যে গল্পটা কখনো শেষ হবে না। তুমি স্বামী সোহাগিনী হবে।তোমার বাচ্চা কে তুমি শেখাবে দু এর ঘরের নামতা। দেখনা দুই থেকে কত সহজেই না বিশ হয়ে যায়। শুধু আমরাই দুই থেকে এক হয়ে গেলাম প্রিয়তমা। রাস্তা ঘাটে দেখা হলে হয়তো চিনবাই না। বা দেখা হলে খুব অভিমানি স্বরে বলবা-“দূরে যেতে বলেছিলাম উড়ে চলে গেলে কেন?” তখন আমি কি উত্তর দিব? খুব মন খারাপের রাতে আমি যদি তোমায় প্রশ্ন করি-“প্রিয়তমা,ভাল আছো তো?” তুমি কি উত্তর তুমি দিবে?
অনেক অনেক অনেক বছর পরে কি তোমার আমার কথা মনে পরবে? আমার কথা মনে পরলে কি তুমি মন খারাপ করে বসে থাকবে? আমার জন্য মন খারাপ হলে তুমি খুব সুন্দর করে সেজো। তোমার নীল শাড়ীটা পরে কপালে টিপ,হাতে চুড়ি।
ভালবাসার “ভাল” ভাল নেই। “বাসা” TO-LET ঝুলিয়ে একা পরে আছে।প্রিয়তমা,এই কি তবে কথা ছিল? এই কি হওয়ার কথা ছিল?প্রিয়তমা,তুমি ভাল আছো তো?