পাত্রীর নাম মোছাঃ অরণি তালুকদার। ভদ্র সমাজে আজকাল নামের সামনে মোঃ চললেও মোছাঃ আর চলে না বলে পাত্রী নামের সামন থেকে মোছাঃ তুলে দিয়ে অরণি তালুকদার হয়েছেন। তবে আগামি কয়েকঘন্টার মধ্যে তার নামের পিছনের তালুকদার ও উঠে যাচ্ছে। তালুকদার উঠে গিয়ে তার নামের সাথে যুক্তু হবে রশীদ। তিনি হবেন অরণি রশীদ। কারন তার সাথে আমার বিয়ে। আমি এই গরমের মধ্যে স্যুট,টাই পরে তার পাশে বসে আছি এবং ফটোগ্রাফারের সামনে হাসি দিচ্ছি।
পাত্রী অতি সুন্দরী। অন্তত মেকাপ করা অবস্থায় সুন্দরী ই লাগছে। মেকাপ ছাড়া অবস্থায় কেমন লাগবে সেটা অবশ্য চিন্তার বিষয়। তাকে মেকাপ ছাড়া অবস্থায় দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নি। আমার বাবা রাগী মানুষ। তিনি বিয়ে করতে বলেছেন দেখে করছি। পাত্রী দেখার দরকার দেখি নাই। তালাক দিতে বলে তালাক দিব। ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক তিন তালাক।
বিয়ের সময় সবার সাথে কথা বলার সুযোগ থাকে কিন্তু পাশে বসে থাকা বউ এর সাথে কথা বলার সুযোগ থাকে না। আশেপাশে শ্যালক,শ্যালিকারা গিজগিজ করে। জুতা চুরি করার ধন্দায় থাকে। আফসোস তারা জানে না আমি জুতা ছাড়াই দিব্বি হাঁটতে পারি। আর যে জুতা পরে আসছি সেটা ভাল না। পায়ে ফিট হয় না। ওটা নিয়ে গেলেই খুশি হব।
আমার বন্ধু বান্ধবের মুখে দুস্টূ হাসি। তাদের অঙ্গ ভঙ্গিও দুষ্ট। একেক জন বহু ভাবে আমাকে পরামর্শ দিচ্ছে। একজন পকেটে কিসের যেন প্যাকেট ঢুকিয়ে দিল। বললো স্ট্রব্রেরী ফ্লেভার।স্ট্রব্রেরী ফ্লেবার যেহেতু তাই চকলেট হতে পারে। চকলেটের প্যাকেট আজকাল চারকোণা হয় জানতাম না। মার্কেটে নতুন আসছে বোধহয়।
হঠাত একজন কে দেখে তব্দা খেলাম। তিথি। পৃথিবীর সাড়ে ছয়শো কোটি মানুষের মধ্যে ইনি একমাত্র যিনি আমাকে প্রেম পত্র লিখেছিলেন। আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কোথায় সে রুমে দরজা লাগিয়ে কাঁদবে তা না সে আনন্দে সেলফি তুলে বেড়াচ্ছে। থাপড়ানো দরকার। কপালে টিপ পরছে তাও জায়গা মত পরতে পারে নাই। দুই গালে দুইটা থাপড়ানো দরকার। একটা থাপ্পড় কম হয়ে যায়।
তিথিকে খুশি খুশি লাগছে। আমিও খুশি।হুম। তার চেয়ে সুন্দরী বউ আমার। তার বর হবে আমার চেয়ে খারাপ। ডিপজল টাইপ। মাথায় হবে আবুল হায়াত টাক। এই বিয়ের স্টেজকে সাক্ষি রেখে আমি অভিশাপ দিলাম। বিয়ের বরের অভিশাপ মহা অভিশাপ। তার দেয়া প্রেম পত্র আমি দীর্ঘ পাঁচ বছর রেখে দিয়েছি।আজকেই ছিড়ে ফেলবো। আবার হাসছে? একে তো থাপ্পড় দেয়া অতি জরুরী হয়ে পরছে।
আমি আমার বউ এর দিকে তাকালাম। এখন আমি কোন তিথিকে চিনি না। আমাকে শুধু চিনতে হবে অরণি কে। অরণি রশীদকে। যাকে কিছুক্ষন পর আমি কবুল বলবো। মন চাচ্ছে এখনি কবুল বলতে। চিল্লায় চিল্লায় তিন কবুল বলতে। যাতে তিথি শুনতে পায়। দেখুক কেমন লাগে। শিক্ষা হওয়া দরকার।
কাজি সাহবে বললেন কন্যার দীর্ঘ পরিচয় শেষ করে বললেন-আপনি কি এই বিয়েতে রাজি? রাজি থাকলে বলুন কবুল।
আশ্চর্য ব্যাপার। আমি কবুল বলতে পারছি না। আমার খুব কান্না পাচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে বরদের কাঁদতে নেই এটা আমি ভুলে গেলাম কিভাবে?