পুলিশের হাতে বন্দুক দেখলেই জানতে ইচ্ছা করে -"আচ্ছা বন্দুকে কি গুলি আছে?" কেনো যেন মনে হয় বন্দুকে গুলি নেই। গুলিহীন বন্দুক দিয়ে অযথা ভয় দেখানো। ভাব দেখানো যে বন্দুক ভর্তি গুলি। সামান্য এদিক ওদিক হলেই ঠুস ঠুস। খেল খতম। দশ-বারোটা গুলি কোন ব্যাপার ই না। সপ্তাহে দু চারদিন এমন অনেক গুলি করা হয়। কিন্তু আসলে বন্দুক ফাঁকা। ফাঁকা বন্দুক দিয়ে দমিয়ে রাখা।
আমার সামনে এক পুলিশ ভাই বসে কান খোঁচাচ্ছে। কান খুঁচিয়ে তিনি ব্যাপক মজা পাচ্ছেন।আমি তাকিয়ে দেখছি আর ভাবছি তার বন্দুকে গুলি আছে কি না। আমিও ব্যাপক মজা পাচ্ছি।
-ঘটনা কি?ঘুরঘুর করছেন কেন?
-ঘুরঘুর করলে সমস্যা কি? আপনার কান খোঁচানোয় তো বাগরা দিতেছি না।
-কথা কম। বেশি কথা পুলিশের পছন্দ না।
-আপনাদের এটাই সমস্যা। আপনারা ধরেই নিয়েছেন সবকিছু আপনাদের পছন্দমত হবে। পছন্দ না হলেই ঢলা। পাকিস্তানি ডলা।
পুলিশ সাহেব বন্দুক শক্ত করে ধরলেন। পুলিশ সাধারন পাবলিকের বেশি কথা পছন্দ করে না। আমার কথাও তার পছন্দ হচ্ছে না এটা বোঝাই যাচ্ছে।
-সমস্যা কি আপনার?
-আমার সমস্যা বিরাট। আপনার বন্দুকে কয়টা গুলি আছে এটা জানা প্রয়োজন।
বন্দুক হাত বদল করলেন। অবস্থা ভাল না। কেটে পরাই ভাল। পুলিশ ক্ষেপানো আমাদের কাজ না। আমরা সাধারন মানুষ। আমরা ক্ষেপাবো সাধারন মানুষ। পুলিশ সাধারন মানুষ না। বন্দুকে গুলি না থাকলেও সেই বন্দুক দিয়ে মাথায় বাড়ি দিলে সমস্যা। নিতুর সাথে আমার দেখা করতে হবে। তার সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। চেহারা ভুলে যাওয়ার মত অবস্থা। নিজের প্রেমিকার চেহারা ভুলে যাওয়া ঠিক না। চিন্তা করছি এবার একটা ছবি নিয়ে নিব। মানিব্যাগে করে ছবি নিয়ে ঘুরবো। চেহারা ভুলে গেলে যাতে চট করে দেখে নিতে পারি।
-আমাদের কতদিন পর দেখা হল জানো?
-তিন চার মাস হবে হয়তো।
-এক বছর সাত মাস।
-কত দিন?
-তের দিন।
-মিনিট,ঘণ্টা,সেকেন্ড?
-রাশেদ শোন, তুমি আমার সাথে ফাজলামো করিও না। একটা মানুষের সাথে তোমার দেড় বছর পর দেখা। মানুষটা তোমার প্রেমিকা। তুমি তার সাথে এমন সময় ফাজলামো করতে পারো না।
- আচ্ছা।
- কি করতেছো ইদানিং।
- গবেষনা করতেছি। অতি সিরিয়াস টাইপ গবেষনা।বিষয় হচ্ছে ঢাকা শহরের পুলিশদের বন্দুকে গুলির সংখ্যা। আমার ধারনা এই গবেষনা থেকে হুলস্থুল কিছু একটা বের হয়ে আসবে।
- তুমি যে একজন মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষ এটা কি তুমি জানো?
- হুম জানি।
-তুমি কালকে আমার সাথে যাবা। আমার একজন পরিচিত সাইক্রিয়াটিস্ট আছে। ফাজলামি হিসেবে নিও না। আই মিন ইট।
- কালকে ব্যস্ত আছি। নাম চেঞ্জ করে ফেলতেছি। রাশেদ নামটা আর ভালো লাগতেছে না। এক নাম আর কতদিন?
-কি নাম রাখবা?
-চিন্তা করছি কোন নাম ই রাখবো না। মানুষ আমাকে এই,ওই বলে ডাকবে। তুমি ডাকবে "ওগো" বলে। "ওগো" হচ্ছো ভালোবাসার ডাক।
-আমি কখনই তোমাকে "ওগো" বলে ডাকবো না।
-আচ্ছা।
-নিতু?
-হুম। বলো।
-তোমার একটা ছবি দিবে?তোমার চেহারা আমি ভুলে যাচ্ছি।
-তুমি ভুলে যাও। ক্ষতি নেই। সবাই চিনে গেলে সমস্যা। আমি আসি রাশেদ। ভালো থেকো।
-আচ্ছা।
নিতু চলে যাচ্ছে। নিতুর চলে যাওয়া ভালো লাগছে না। কেনো যেন নিজেকে ওই পুলিশটার মত মনে হচ্ছে। পার্থক্য একটাই। তার বন্দুকে গুলি নেই কিন্তু ভাবটা এমন বন্দুক গুলিতে ভরা। আমার মনে প্রেম অনেক কিন্তু ভাবটা এমন কিছু নেই। আমি চাইলেই নিতুকে ডাকতে পারি। আমি জানি ডাকলেই সে চলে আসবে,আমার পাশে বসবে। কিন্তু ডাকতে কেনো জানি ইচ্ছা করে না। একা থাকাটা রোগের মত। একা থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেলে অন্য কাউকে বিরক্ত লাগে। মনে হয় পৃথিবীতে একা থাকাই ভালো।আচ্ছা, যারা একা নয় বলে দাবি করে। তারা কি একা নয়?তারাও একা। শুধু তারা একা না থাকার অভিনয় করে। কারন একা থাকতে তারা ভয় পায়।