মার্কেটের দক্ষিণ পাশের গ্লাসে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন দেখলেই বুঝা যায় এখানে শাড়ীর বেশ সমাগম রয়েছে। আমার স্ত্রীর এ মার্কেটে আসার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলেও আমার নেই। গত পরশু জুমাবার এ মার্কেটের একটি শাড়ীর দোকানে গেলাম। সাথে আমার স্ত্রী ও তার বড় ভাবী। আমাদের পছন্দে রাজগুরু ব্রান্ডের একটি কাতান শাড়ী সামনে উপস্থাপন করা হলো। শাড়ীটা সুন্দর, কালারটাও বেশ অভিজাত। নেভী ব্লু।
ফিক্সড প্রাইসের দোকান না হলেও প্রতিটি পণ্যে প্রাইস স্টিকার সাঁটা আছে। আমাদের শাড়ীতে যে স্টীকারটি বিদ্যমান তাতে সুস্পষ্ট লেখা আছে সেটির মূল্য ৮৩০০/- (আট হাজার তিনশত টাকা)। সুপ্রিয় পাঠক মহোদয়গণ ! এই শাড়ীটির মূল্য আপনারা কতই বা কম বলবেন ! শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বিশাল দোকানের আপনি ভদ্র কাস্টমার। আপনার তো বিবেকের কাছে কিছু দায়বদ্ধতা আছে। ঈদের সময়- একটু বেশি দাম তো হবেই। চক্ষুলজ্জা তো আপনি একেবারেই বিসর্জন দেননি। আপনার বলা দামের ওপর ভিত্তি করে দোকানের শিক্ষিত কর্মচারীরা আপনার ব্যক্তিত্ব পরিমাপ করবেন। তদুপরি সাথে আপনার স্ত্রী ছাড়াও আরেক সংবেদনশীল আত্মীয়। আরো বড় কথা হলো শাড়ীটি কিনছেন আপনার শ্রদ্ধেয়া শ্বাশুড়ির জন্য। অনেক কিছুর সমীকরণ এখানে উপস্থিত।
অতএব, বলুন না এর দাম কত বলবেন ? সবাই তাকিয়ে আছে আপনার মুখের দিকে। দোকানদারের অধিকার আছে তিনি তার পণ্যের যে কোন মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। তবে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একচেঁটিয়া মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব হয়না মর্মে আমরা অর্থনীতিতে পড়েছি। এ সবই বোধ হয় ধূসর হয়ে যায় রাজধানীর স্বতন্ত্র বিপণীবিতানগুলোতে। গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে সব দোকানদাররা এক জায়গায় বসে, ক্রেতারা দাম যাঁচাই-বাছাই করতে পারেন। কিন্ত মহানগরীতে তা সম্ভব নয়, একেক দূরত্বে একেকটা মার্কেট, ক্রেতাদের পক্ষে ঘুরে ঘুরে যাঁচাই করা দুরূহ।
যাই হোক, শাড়ীটি মাত্র দুই হাজার টাকায় ক্রয় করেছি। আমার স্ত্রীর পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় তিনি শাড়ীটির আঠারো শ‘ টাকা দাম বললেন। বিক্রেতাগণ অনীহা প্রকাশ করে মুথ ঘুরিয়ে নিলেন। আমরাও উঠে দাঁড়ালাম। দোকান থেকে বের হতে এক ভদ্রলোকের মুখোমুখি হলে তিনি বললেন, স্যার চলে যাচ্ছেন ? আমার জবাব তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, তারই সহকর্মীদের কাছ থেকে তিনি বৃত্তান্ত শুনলেন। অতঃপর বিনয়ের সাথে বললেন, বিসমিল্লাহ করব- একটু বাড়িয়ে শাড়ীটা নিয়ে যান স্যার। আগন্তুক নাকি মালিক। এখান আরো একটা আশ্চর্য ব্যাপার লক্ষণীয়, তখন বাজে বিকাল ৪টা - সারাদিন তারা বিসমিল্লাহ করতে পারেনি- এটা তো মহা বিষ্ময়ের ব্যাপার বৈকি! অতঃপর দুই হাজার টাকায় দোকানীদের মুখে হাসি ফুটিয়ে দোকান ত্যাগ করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১০:০৩