উপনিবেশিক আমল থেকে একটি বাক্য খুব প্রচলিত।তা হলো, "মোল্লার দৌঁড় মসজিদ পর্যন্ত"। । এখন কি বলা যাবে মোল্লার দৌঁড় বয়কট পর্যন্ত।অথচ এই দৌঁড় মহাকাশ পর্যন্ত বিরাজমান ছিল।মূল লেখায় প্রবেশ করি।ভিন্ন মত থাকতেই পারে।সেগুলো মাথায় রেখেই আজকের ব্লগ পোস্ট।
আপনি চাইলেই কি ইসরায়েল কে বয়কট করতে পারবেন? না পারবেন না, পারবেনই না।আপনার হাতে ফোনটির গুরুত্বপূর্ণ পার্টস বা ঐ কোম্পানির টপ ইনভেস্টরদের মাঝে ইসরায়েলকেই খোঁজে পাবেন।কম্পিউটার চালান অনেকেই। সব বাদ দিয়ে যদি শুধু প্রফেসর এর কথাও বলি। সেটাতে তৈরি করেছে বা কোন না কোন ভাবে ইসরায়েল জড়িত। ইনটেল কম্পিউটারের জাতীয় প্রসেসর। পারবেন কম্পিউটার থেকে ইনটেল বাদ দিতে? ইনটেল পরিবর্তন করে এএমডি ব্যবহার করতে পারেন, তবে হ্যা সেটিতেও তাদের ইনভেস্ট আছে।এটি পশ্চিমা কোম্পানি আরও নির্দিষ্ট করে বললে আমেরিকান কোম্পানি।সকল পশ্চিমা বলতেই ইসরায়েলের সমর্থক।আর পশ্চিমা মানেই আজকের গুগল,ইউটিউব, মাইক্রোসফট,ফেসবুক, টুইটার সহ প্রায় সকল জায়েন্ট কোম্পানি। আকাশ থেকে পাতালে সব জায়গায় পশ্চিমাদের জয়জয়কার।এই ইসরায়েল একমাত্র দেশ যারা মহাকাশে নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দা উপগ্রহ পাঠিয়েছে। নজরদারিতে আছে অনেক দেশ। শুধু কি পশ্চিমাদের সাহায্যই তাদের এই সাফল্যের কারণ? না, ইসরায়েল কে আলাদা করেছে তাদের ঝুঁকি নেওয়ার মনোবল।শিক্ষা জীবনে বাধ্যতামূলক ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে, তাদের মনে বিজ্ঞান -প্রযুক্তির-উদ্ভাবনের নেশা ধরিয়ে দেয় সরকার।এরা জানে বাঁচতে হলে তাদের লড়াইয়ের বিকল্প নেই।তাই আরব ইসরায়েল যুদ্ধে অস্ত্র আমদানিকে বেচে নিয়ে ছিল।অথচ তখন ইসরায়েলের অবস্থা করুণ ছিল।অর্ধেকের বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করত।কয়েক দশক পর সেই দেশটিই বিশ্বের কাছে বিস্ময়। অথচ এই মুসলিম জাতিই নেতৃত্ব দিয়েছে বিশ্বকে।হ্যাঁ তাদের বয়কট করতে পারবেন, তাহলে আপনাকে সহজ একটি কাজ করতে হবে, টাইম মেশিনে করে মধ্য যুগে চলে যেতে হবে।
বয়কটের চেয়ে এগিয়ে যেতে হবে জ্ঞান বিজ্ঞানে গবেষণায়।ইসরাইল দেশটি মোট জিডিপির ৪% ব্যবহার করে গবেষণায়।ইসরায়েল থেকে ধনী মুসলিম দেশের অভাব নেই। তারাও শীর্ষে আছে, অস্ত্র আমদানিতে।ইরান,তুরস্ককে সমীহ কেন করে জানেন? কোমড়ের জোর আছে।না চিল্লাইয়ে কোমড়ের জোর বাড়াতে হবে। ব্যক্তি জীবনে কাকে সমীহ করেন? যে যোগ্য,ক্ষমতাবান অথবা খুব খারাপ তাকেই।আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক, স্বার্থের খেলাটাও তেমন। এটা বুঝতে আপনার বিশেষজ্ঞ হবার দরকার আছে? নিশ্চয় না।ঠিক এটাই হয়ে আসছে ইসরায়েল -ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে।
কথায় আছে-'নগর জ্বললে দেবালয় এড়ায় না'। আজ ইসরায়েলের কারণে ফিলিস্তিন করুণ দশা।মূলত ইসরায়েলের সাম্রাজ্যবাদী নীতির কারণেই।সাম্রাজ্যবাদী নীতি ভয়ংকরের চেয়েও ভয়ংকর।চীন কী বিশাল আয়তন নিয়ে সন্তুষ্ট? প্রায় প্রত্যেক প্রতিবেশীর সাথে স্বার্থের দ্বন্দ্ব রয়েছে।ভারতের ক্ষেত্রেও তাই।আপনারা নিশ্চয় জানেন সিকিমের স্বাধীনতা হারানোর ইতিহাস।তাই বলি ইসরায়েলের প্রতিবেশীরা আসছে দিনে শান্তিতে থাকতে পারবে না।গলার কাঁটা ফিলিস্তিনদের ধ্বংসের পর এরা অন্যদের দিকে তাকাবে।আরবরা ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার এটিও একটি বড় কারণ।মধ্যপ্রাচ্যের বড় মাস্তান ইসরায়েল। আজকের চুপসে যাওয়া আরবদের বিষফোঁড়া হয়ে আর্বিভাব ঘটতে পারে ইসরায়েলের। এই সমীকরণ সময় বলে দিবে। তবে ইতিহাসের শিক্ষা যদি নিতে পারি,তাহলে সে দিকেই আঙ্গুল রাখা যায়।এখনও সময় শেষ হয়ে যায় নি। ফিলিস্তিনের ঐক্য দরকার।আরব প্রতিবেশীরও।সর্বপুরি মুসলিম বিশ্বের। মোল্লারা যদি প্রচার করত জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তির অর্জনের পথে জিহাদ করতে। তাহলে ভাল হত।শুধু ধর্মীয় শিক্ষায় কেন হবে জীবিকার মাধ্যম? অতীত ইসলামি ব্যক্তিবর্গরা তো এভাবে জীবনপার করেননি। তাদের শিক্ষায় যেমন ধর্ম ছিল অপরিহার্য তেমনি বিজ্ঞানও। এই জন্যই মুসলিমরা বিশ্বে বিজয়ের নিশাল উড়াতে পারছে।যুদ্ধ শুধু মাঠেই হয় না।মগজেও হয়।সেটিই বড় যুদ্ধ।মগজের যুদ্ধই চূড়ান্ত বিজয় এনে দেয়।এখন এ যুদ্ধের জয়ী পশ্চিমারাই। পশ্চিমরা সভ্য হতে শিখেছে মুসলমানদের কাছ থেকেই।তারা গ্রহণ করেছিল সু শিক্ষাকে।আর এখন মুসলমানরা এসব শিক্ষাকে বর্জনের মাধ্যমেই বেহেশতে যাওয়ার চিন্তায় মগ্ন।
বয়কট যখন করতেই চান তাহলে চীনের মত বয়কট করুন।এটা হারাম ওটা হালাল বলার পাশাপাশি বাতলে দিতে হবে হালালের পথ।মানুষের ধর্মই পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকে পড়া।চীন ফেসবুক,গুগল,ইউটিউব এমন প্রায় সকল জনপ্রিয় সেবার বিকল্প করে নিয়েছে। এতে তারা শুধু নতুন প্রযুক্তির সুবিধাই নেয়নি। বরং প্রযুক্তিকে আয়ত্তও করছে। মানুষ মহান হয় অর্জনে,বর্জনে নয়(ইতিবাচক অর্থে)।হ্যাঁ বয়কটে সেই দেশকে কিছুটা, কিছু ক্ষেত্রে চাপে ফেলতে পারবেন কিন্তু এটার কোন দীর্ঘমেয়াদী ভাল ফল ভয়ে আনবে না।বরং নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।যে ভারত আল্গা দেশপ্রেম দেখাতে গিয়ে মোবাইল, টিভি প্রভৃতি জিনিস নষ্ট করে দিল, সেই ভারতই আবার চীনের শীর্ষ ফোন রপ্তানি গন্তব্যস্থল। বছর শেষে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় আবার সেই চীনের সাথেই। ব্যাপারটা অনেক মজার।আরও মজার ব্যাপার হলো সেই চীনা বিভোই আইপিএলের স্পন্সর।মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন।সুতারাং বয়কট কখনও সঠিক বুদ্ধিমান সমাধান না।
আমরা কতটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি? জানি অন্যায় হচ্ছে তবু সাহায্য এগিয়ে আসি না। এভাবে কারও জীবনও চলে যায়। এটাই কি হচ্ছে না ফিলিস্তিনের প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে? মিলিয়ে দেখুন। আর আমরাই ন্যায় বিচারের আশায় ঝাণ্ডা উড়াচ্ছি। একটু গভীরে, গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে আমেরিকা কিন্তু সেই কাজটিই করছে। অভিন্ন স্বার্থের জন্য কোথাও সোচ্চার, কোথাও নিশ্চুপ।খেয়াল করুন মিয়ানমারে -ফিলিস্তিনে কেমন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের পরিবর্তনটা আসতে হবে নিজ থেকে। দেশকে, পৃথিবীকে বদলে দেবার দরকার নেই।নিজে বদলালেই দেশ বদলাবে। তাই কান্নার ইমোজি, হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ঈমানী দায়িত্ব পালনের চেয়ে বড় কাজ বদলানো,এগিয়ে যাওয়া।
এটা ইসরায়েল কিংবা পশ্চিমা বন্দনার পোস্ট না।আমাদের শুভবুদ্ধির উদয়ের পোস্ট।তবে এটা জেনে রাখেন ইসরায়েল পতন হবে কোরআনে বর্ণিত ঘৃণিত এক জাতির নাম।সবচেয়ে বেশি নবী-রাসূল পাঠিয়েছে এই গোত্রে। এদের আল্লাহ্ অনেক দিয়েছে তবু তারা বেইমানি করছে স্বয়ং আল্লাহ্কে।প্রতিদানও তৈরি.. সময়মত তিনি দিবেন। ভাল থাকবেন।ভুল হলে বলবেন শোধরে নিব।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৫০