আজ সকালটা শুরু হয়েছে দীর্ঘশ্বাস দিয়ে । টিভি কম দেখা হয় । কেন যেন, আজ ব্রেকফাস্ট করতে করতে টিভি চালু করলাম ।দেখছি একটি বেসরকারী টেলিভিশন সকালের অনুষ্ঠানে তিনি কথা বলছেন। সকালের এই অনুষ্ঠান একই সাথে খুব সুখবরের এবং দীর্ঘ - শ্বাসের ছিল । কার্টুনিস্ট মোর্শেদ মিশু, খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন । তিনি দেশের হয়ে কাজ করেন । অথচ সেই দেশই তাঁর চিত্রকর্ম তুলে ধরতে পারেনি । 'The Global Happiness Challenge' সিরিজের কার্টুন গুলো সারা বিশ্বেই আলোড়ন সৃষ্টি করে। কার্টুনগুলো প্রথমেই বিশ্ব মিডিয়াতে আসে। অথচ আমাদের দেশের মিডিয়া চীন-ভারত যুদ্ধ লেগে যাচ্ছে ,ইরান-যুক্তরাষ্ট্রে-উ.কোরিয়ার বাকযুদ্ধ,ট্রাম্প বায়ু নির্গমন করছে,নুসরাত ফারিয়ার শরীরচর্চা থেকে শুরু করে আংটি বদল ,এমনকি রুবেলের মন নেই সেই খবরও রাখে। বিশ্বাস করুন । একটি সুখববের জন্য আমি তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করি। সেটা যদি বাংলাদেশের হয় তাহলে সেই আনন্দটা অপরিমেয়। প্রথমে 'গ্লোবাল হেপিনেস চ্যালেঞ্জ' সিরিজের আলোড়িত কার্টুন দেখবো ,তারপর জীবন সর্ম্পকে জানবো । এ বিষয়ে নিজের মনোভাব প্রকাশ করছি দ্বায় থেকেই । মনে হচ্ছে বলা প্রয়োজন,প্রচারের প্রয়োজন।
The Global Happiness Challenge
“আমি শুধুই আঁকতে জানি, কষ্টগুলো ঢাকতে জানি।”-ক্রেডিট-ছড়াকার অনিক খান সম্পূরক তথ্য ছড়াকার অনিক খান’কে নিয়ে ২০১২ সালে রিফাত হোসেন নামে ব্লগারের সামহোয়্যারইনব্লগে একটি পোস্ট আছে। । প্রায় ৪ হাজার বার পঠিত ।
১।একটু ভাবুন তো ছবিটি কে নিয়ে । এক স্বর্গীয় সুখে বাবা তাঁর মেয়েকে নিয়ে উল্লাস করছে ।যুদ্ধবাজ পৃথিবীতে এই বাবার এই স্বপ্ন দেখতে মানা ।
২।
কথা তো এটাই ছিল। প্রশান্তির চোখে শিশুটি দুধ পান করবে ,দুর্দিনের চিন্তায় বিভোর শিশুটি । গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় না ?
৩। খেলতে খেলতে বাবার বুকে ঘুমিয়ে যাবে , আর বাবা ঘুম ভাঙ্গে যাবার ভয়ে ,এক চুলও নড়বে না । হ্যাঁ ঘুমিয়েছে । মৃর্ত্যু ঘুম।
৪। আহারে জীবন-শৈশব ।
৫।আচ্ছা দেশপ্রেম পরিমাপের কোন যন্ত্র নেই ? আর হ্যাঁ সেই হিসাবটা অবশ্যই দিবেন ,কতটুকু অত্যাচারিত হলে দু'পা হীন অবস্থায় হুইল চেয়ারে বসে লড়ায়ে এগিয়ে যায়?(বি.দ্র-যতদূর মনে পড়ছে ছবিটি ফিলিস্তিনের -ইসরাইল সীমান্তে)
৬। এখানে শুধু এটাই বলবো ,আমি ছবিটি খুব বেশিক্ষণ দেখতে পারছি না । ভাবতে পারছি না।
৭। সবুজ নীলের খেলায়, রঙের ভেলায়, কবে পাখি উড়বে এই আকাশে কে জানে ।
৮। এখানে দুইটি পৃথিবী। হাসতেই পারতো আব্বুর এমন সুড়সুড়িতে । কি বলেছিল মেয়েটি মৃত্যুর ঠিক আগে ?
৯।ছবিটি 'কিশোর আন্দোলনের। শত বির্তক থাকলেও ,কিশোর আন্দোলন বিশ্ব ইতিহাসে লজ্জাজনক । এ লজ্জা আমার ,এই লজ্জা বাংলাদেশের । একটি কার্টুন দিয়েই পুরো বার্তা যেন দিয়ে দিলেন । খুব শক্তিমান । গভীর।
১০। এই ছবিটির গল্প শোানর আমন্ত্রন জানিয়ে রাখলাম । এ ব্যাপারে আর কিছু বললাম না । অনেকের জানারও কথা।
১১। জানেন ,যখন খেতে গিয়ে মুখ মাখিয়ে ফেলা শিশুকে দেখলেই ,এই ছবিটি ভেসে উঠে। ভুলা যায় না।
কার্টুনিস্ট মোর্শেদ মিশু'র ব্যক্তিগত কিছু তথ্য:
পূর্ণনাম আব্দুল্লাহ্ আল মোর্শেদ । তিনি ঢাকার মিরপুরে ১৯৯৩ সালের ২৯ শে জুলাই জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯ বছর বয়সে তিনি পেশাদারি কার্টুন আকাঁআকিঁ শুরু করেন । ব্যঙ্গধর্মী মাসিক 'উন্মাদ' এর সহকারী সম্পাদক হিসাবে কাজ করছেন। ডেইলি বাংলাদেশ টুডের কার্টুনিস্ট বিভাগের সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করছেন । যারা পত্র পত্রিকা ফলো করেন তারা হরহামেশায় তাঁর কার্টুন দেখতে পান । জীবনে অনেক লক্ষ্য ,পরিকল্পনা করে যখন দেখলেন ব্যর্থ হচ্ছেন ,হচ্ছে না । তখন মনোযোগ দিলেন শখে। বাকিটা ইতিহাস । আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি । কার্টনিস্ট মোর্শেদ মিশুর ভাই ছিল বড় উৎসাহের জায়গা। বড় ভাই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হলেও কার্টুন আকঁতে পছন্দ করত। তাঁর কাছ থেকেই হাতেখড়ি মোর্শেদ মিশুর। ২০১৯ সালে Forbes কর্তৃক এশিয়ার সেরা ৩০ এ জায়গা করে নিয়েছেন। "Global Happiness Challenge'' গ্লোবাল হেপিনেস সিরেজের এই পর্যন্ত ১১টি ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এতক্ষণ তাই দেখেছেন । আরও ১৯ টি শিল্পকর্মের অপেক্ষায় আছি। বি.দ্র সর্ব প্রথম ছবিটি গ্লোবাল হেপিনেস চ্যালেঞ্জ সিরিজের না । The Global GOD FORBID Challenge সিরিজের । এই সিরিজের একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে ।
শেষ কথা : পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।ভালো কাজগুলো সামনে আসুক । সবাই আলোচনা করুক । অবশ্যই ভালো থাকুন । আজকের এই লেখাটি উৎসর্গ করব একজন নিরেট পাঠক । যিনি অনেক যাবত সামুতে আছেন । কিন্তু লেখেন না । কল্পনার চোখে উনাকে দেখি সৎ,নিষ্ঠাবান, সহজ-সরল একজন মানুষ হিসাবে । তিনি আর কেউ নন অন্তরন্তর ভাই । হ্যাঁ আপনি অন্তরেই আছেন। আপনাকে উৎসর্গ করলাম । এটা একটা আমার পক্ষ থেকে ছোট সম্মান । আপনি দীর্ঘআয়ু লাভ করুন ।
সোর্স লিংক : ১- Morshed Mishu
২-Forbes
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২০ রাত ১:২৮