বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল নাম বাদ দিলে পুরো বাংলা সাহিত্য অপূর্ণতায় ভরে যাবে। একই সময়ের ফ্রেমে কিছু সময় কাটিয়েছেন দুইজন। যখন রবি ঠাকুর ফুলেল সৌরভে গুণমুগ্ধ করেছিলেন বিশ্ব ,ঠিক তখনই নজরুলের অমরত্ব লাভের আগমন ।রবীন্দ্রনাথ যখন বিশ্ব মঞ্চে বাংলা ভাষাকে তুলে ধরলেন ,তখন নজরুল ত্রিশালের দরিরামপুরে । এই দুই জন নক্ষত্র নিয়ে আজকের লেখা । না,কোন প্রবন্ধ,গল্প,সমালোচনা নয় । শুধুমাত্র পাঠক জেনে উপভোগ করবে সেরকম মজার মজার ঘটনার প্রবাহ নিয়েই লিখবো।
আমরা রবীন্দ্র-নজরুল কে দা’কুমড়ো সম্পর্ক নিয়ে গুজব ছড়াতে অভ্যস্ত । এই লেখা পড়লে গুরু -শিষ্যের ব্যাপারে আপনার ইতিবাচক ধারণা হবে।
নজরুল-রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল প্রীতির ,অনুরাগ,গুণাগ্রাহিতার এবং সেই সাথে অভিমান ও অভিযোগের ।রবীন্দ্রনাথের কাছে নজরুল ছিলেন বাধ্যগত কিশোর । আর নজরুলের কাছে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন গুরু । এক কথায় সম্পর্কটা গুরু শিষ্যের । রবীন্দ্র চোখে নজরুল বিস্ময় বালক ।
১। রবীন্দ্র সংগীত ও নজরুল
নজরুলের রবীন্দ্র প্রেম প্রথম প্রকাশ পায় ,এক স্কুল শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে। সে দিন তিনি গেয়েছিলেন হে ক্ষণিকের অথিতি গান ( কথা ও সুর রবীন্দ্রনাথ ,কণ্ঠ ইন্দ্রালী সেন ) নজরুলের সহকর্মী(হাবিলদার) একবার বলেছিলেন ‘নজরুলের কাছে রবীন্দ্রনাথের প্রায় সকল বই ছিল’ । কলকতার ৩২ নং কলেজ স্ট্রিট, করাচির সেনানিবাস কিংবা কুমিল্লা, সব সময় নিত্যসঙ্গী ছিল রবীন্দ্রনাথের বই । বাংলাপিডিয়াতে এখানে উল্লেখ আছে
‘‘করাচি সেনানিবাসে থেকেও তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্যপত্রিকা, যেমন: প্রবাসী, ভারতবর্ষ, ভারতী, মানসী, মর্ম্মবাণী, সবুজপত্র, সওগাত ও বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। তাছাড়া তাঁর কাছে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, এমনকি ফারসি কবি হাফিজেরও কিছু গ্রন্থ ছিল। প্রকৃতপক্ষে নজরুলের আনুষ্ঠানিক সাহিত্যচর্চার শুরু করাচির সেনানিবাসে থাকাবস্থায়ই।’’
নজরুল সবেচেয়ে বেশি বই রাখতেন রবীন্দ্রনাথের । রবীন্দ্রনাথের বইয়ের মধ্যে গানের বই ছিল তুমুল প্রিয় ।গানের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ ,নজরুলের প্রতি চমৎকার মন্তব্য রেখেছিলেন । সেটিও বলবো ক্রমে ক্রমে। অবশ্যই সাথে থাকবেন।
রবীন্দ্র প্রেমী নজরুলের পরিচয় পাওয়া যায় নজরুল বন্ধু মুজাফর আহম্মেদের লেখায় । তিনি লিখেছেন -
‘‘সে মূলত গান গাইতো রবীন্দ্রনাথের । এত বেশি রবীন্দ্র সংগীত কিভাবে নজরুল মুখস্ত করেছিলেন তা ভেবে আশ্চর্য হয়ে যেতাম।সমস্ত কোরআন মুখস্ত করলে হাফিজ বলা হয় । আর আমরা বলতাম কাজী নজরুল ইসলাম রবীন্দ্র সংগীতের হাফিজ।’’
নজরুল হল যুগশ্রেষ্ঠ সুরকার । তৎকালীন সময়ে এমন সুরকার দ্বিতীয় আরেক জন ছিলেন না । সুনাম আছে গান শেখানোর ক্ষেত্রেও নজরুল সিদ্ধহস্ত ছিলেন।
‘কে আমারে যেন এনেছে ডাকিয়া, এসেছি ভুলে।
তবু একবার চাও মুখপানে নয়ন তুলে।’’- তথ্যসূত্র গানটিকে কবিতা হিসাবেও আবৃতি করা হয়েছে। শুনতে ক্লিক করুন। উল্লেখ্য গানটি উমা সেন কে শিখিয়েছিলেন । উমা সেন কে আরেকটি গান শিখিয়েছিলেন আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি।
এছাড়াও প্রতিভা সোম কে ‘পথ দিয়ে কে যায়কণ্ঠ সংযুক্তা তালুকদার বাগচী; ফজিলাতুন্নেসার সহোদরা কে হে ক্ষণিকের অথিতি গানটি শিখিয়েছিলেন । বিশেষ করে প্রথম জীবনে নজরুল ইসলাম রবীন্দ্রনাথের গান সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব ও উর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন।
রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া নিয়ে ,রবীন্দ্রনাথ যে মন্তব্য করেছিলেন জানাবো । মনে আছে তো ? আসুন জেনে নিই।
‘‘রবীন্দ্রনাথের গান সঠিক সুরে গাওয়া হয়নি এই মর্মে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রসঙ্গীত অনুমোদন বোর্ড গোরা (১৯৩৮) ছবিটি সম্পর্কে আপত্তি জানিয়েছিল। ফলে ছবি মুক্তির ব্যপারে সৃষ্টি হয়েছিল জটিলতা।… নজরুল কিছুমাত্র চিন্তা না করে ছবির ফিল্ম এবং প্রজেক্টর নিয়ে সোজা বিশ্বভারতীতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করেন। সব শুনে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘কী-কাণ্ড বল তো? তুমি শিখিয়েছ আমার গান আর ওরা কোন্ আক্কেলে তার দোষ ধরে। তোমার চেয়েও আমার গান কি তারা বেশি বুঝবে? আমার গানে মর্যাদা কি ওরা বেশি দিতে পারবে?’
নজরুল তখন রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে একটি খসড়া অনুমোদনপত্রে সই করিয়ে নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের এই মন্তব্যে প্রমাণ হয় রবীন্দ্র সংগীত লালন করেছিলেন নজরুল। এটা একটা বৃহৎ স্বীকৃতিও । এই গানটির সংগীত পরিচালক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম । শুধু এই গানই নয় ,গোরা মুভিতে সংগীত পরিচালক হিসাবে কাজ করেছিলেন নজরুল। মুভি ও গান এক সাথে। পার্ট-১পার্ট-২ । এখানেও একটি গান পাবেন। যা নজরুল নিজে পরিচালনা করেছে।
একেই বলে রতনে রতন চেনে।
২। নজরুল প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য
রবীন্দ্রনাথ নজরুল এতটাই খুশি করেছিলেন যে ,খুশি নজরুল আহত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আস্তে আস্তে সেটাও জানবো।
একদিন সতেন্দ্রনাথ বলেন:
''ভাবের সংস্কৃতি সমন্বয়ের সাধনায় ,এক নতুন অবদান সৃষ্টির জন্য ,তাঁর কবিতা রবীন্দ্রনাথ কে রীতিমত বিস্মিত করেছে ''
''তুমি যে বিখ্যাত হবে ,তাতে কোন সন্দেহ নেই''--রবীন্দ্রনাথ ( মাসিক বসুমতি,কার্তিক ১৩৫২)
নজরুলের ধূমকেতুর শুভকামনায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন -
'' আয় চলে আয়, রে ধূমকেতু,
আঁধারে বাঁধ্ অগ্নিসেতু,
দুর্দিনের এই দুর্গশিরে
উড়িয়ে দে তোর বিজয়-কেতন।
অলক্ষণের তিলক-রেখা
রাতের ভালে হোক-না লেখা--
জাগিয়ে দে রে চমক মেরে
আছে যারা অর্ধচেতন
।
নজরুল লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ কে উদ্দেশ্য করে -
‘রবি শিখা ছড়িয়ে পড়ে দিক হতে আজ দিগন্তরে
সে কর শুধু পশলো না মা অন্ধ কারার বন্দ ঘরে।
‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা প্রকাশ পাওয়ার পর ,নজরুলের ব্যাপারে ব্রিটিশরা নড়েচড়ে বসে। কবিতার কিছু অংশ পড়া যাক।
আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।
দেব–শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি,
ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?
--আনন্দময়ীর আগমনে কবিতাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আবৃতি শুনতে চাইলে এখানে ।আবৃত্তি -ফয়সাল।
পাঠক আপনি জানেন ,‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটি অন্যতম জনপ্রিয় । আমার মতে ‘বিদ্রোহ’ কবিতাটির পর এটিই সবচেয় উত্তেজক কবিতা । এই কবিতা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যেন ঘি ঢেলে দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে ব্রিটিশ সরকার সহজভাবে নেয় নি।
এই কবিতা প্রকাশের পর সাম্যের কবির ৫ বছরের কারাদণ্ড হয় । কারাগারে চলে পাশবিক নির্যাতন । কিন্তু বাঙালির প্রাণের কবি দমে যায়নি। প্রতিবাদ করেছেন না খেয়ে । ৩৮ দিন অনশন করেছিলেন । চিত্তরঞ্জন দাসের মত মানুষ বারবার চেষ্টা করেন অনশন ভাঙ্গতে। কিন্তু পারেন নি । শুধু তিনিই নয় তৎকালীন লেখক,পাঠক সমাজ,বৃদ্ধিজীবিসহ সবাই । নজরুলের এই পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণ করছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তখন নজরুল প্রেসিডেন্সি জেলে ছিলেন । সেখানে নজরুলের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেন ।
'Give up Sticke,Our literature claims you'
বাংলা যদি বলি “অনশন ধর্মঘট পরিত্যাগ করো, আমাদের সাহিত্য তোমাকে দাবি করে।”
অনুধাবন করা যায় রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্ককেমন ছিল?
কিন্তু সে চিঠি প্রেসিডেন্সি কারা কর্তৃপক্ষ নজরুল ইসলাম কে দেয় নি ইচ্ছাকৃত ভাবে। কারা কর্তৃপক্ষ লিখে পাঠান ‘এড্রেস নট ফাউন্ড’
অবশেষে বিরজা সুন্দীর (কবির শ্বাশুড়ি) লেবুজল পান করিয়ে অনশন ভাঙ্গেন। বিরজা সুন্দরী কবিকে মানসিকভাবে অনেক কষ্ট দিয়েছেন। বিরজা সুন্দরী কে নিয়ে অন্য দিন লিখবো । পড়ার আমন্ত্রণ রাখবেন তো ?
‘বসন্ত’ ঋতুনাট্য টি রবীন্দ্রনাথ ,নজরুল কে উৎসর্গ করেছিলেন । এই বইয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেন প্রথম পালাগান। যাক মূল প্রসঙ্গে থাকি। উৎসর্গের সময়টায় কাজী নজরুল ইসলাম জেলে ছিলেন । প্রকৃতির কবি রবীন্দ্রনাথ খুব দুঃখ প্রকাশ করেন যে তিনি যদি নিজ হাতে কাজী নজরুল ইসলামকে দিতে পারতেন তাহলে খুশি হতেন। যখন নজরুল ইসলাম শুনলেন রবি ঠাকুর তাঁকে বই উৎসর্গ করেছে। সেটি শুনে তিনি আনন্দে আত্মহারা। সে কি আনন্দ । যার বই সাথে নিয়ে ঘুরছেন নগরে নগরে । যার গান গাওয়াকে গর্বের মনে করেন সেই মানুষ তাঁকে বই উৎসর্গ করেছে? লাফ দিয়ে কারাগারের লোহার গারদের উপর পড়লেন ।এটিই ছিল নজরুল জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন মূহুর্ত (ব্যক্তিগত মতামত) ।বই বাহক ছিলেন পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় ।নজরুল তাঁকে(পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়) জড়িয়ে নাচতে শুরু করলেন । তিনি থাম ছিলেন না। এক পর্যায়ে বইটি ছিঁটকে পড়ে গেল। বইটি তুলে নিয়ে চুমো খেতে লাগলেন কখনও কপালে,বুকে চেপে আর্শীবাদ করতে থাকেন। নজরুল এ বিষয়ে বলেছিলেন -
তাঁর এই আর্শীবাদ মালা পেয়ে আমি সর্বজ্বালা -যন্ত্রণা,অনশন-ক্লেশ ভুলে যায়। উক্ত প্রসঙ্গে কবিতার লাইন স্বরণ করা যাক।
‘‘ সে সুন্দর বহ্ণিদগ্ধ মোর বুকে তাই দিয়েছিলে বসন্তের পুষ্ঠিত মালিকা’’
রবীন্দ্রনাথ নজরুল প্রসঙ্গে একবার বলেছিলেন -
‘‘ আমি যদি আজ তরুণ হতাম , তাহলে আমার কলমেও ঐ সুর বাঁজত’’
তবে কি রবীন্দ্রনাথ নজরুল চেতনাকে মিস করেছিলেন সাহিত্য সাধনায় কোন এক সময় ? তিনিও কি চেয়েছিলেন বাঁশের বাশি বাঁজাতে? তাহলে কি বার্ধক্যের কাছে তিনি হার মেনে ছিলেন ? তিনি তো নিজের গণ্ডির বাইরে গিয়েও শেষ সময়ে ছবি আঁকা শুরু করেছিলেন । যেখানে পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্ধি উপমহাদেশ সেখানে তিনি শুধু প্রকৃতি,জীবনবোধ,সমাজ সংস্কার এসব বিষয় নিয়ে লিখে গেলেন ?
আমার মূল্যায়ন হলো --দুইজন দুই মেরুর কবি। তবে তাঁরা দুইজনই সেরাদের সেরা । একজন বাংলা সাহিত্যের দেহ(রবীন্দ্রনাথ) ,আরেকজন বাংলা সাহিত্যের মন (নজরুল) মূলত দুই কবির পারিপারিক ও সামাজিক জীবনই তাদের সাহিত্য সাধনার গতিপথ ঠিক করে দেয় । এই জন্যই রবীন্দ্রনাথ হয়তো ব্রিট্রিশদের বিরোদ্ধে খুব বেশি উচ্চ বাচ্য করেন নি। তবে তিনি যে একদম করেন নি সেটা ভুল। তবে এটা সত্য এবং মানতে হবে যে নজরুলের মত কেউ করেন নি । এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতে পারে। তবে সেটার মানে এই নয় যে নজরুল ভাল,রবীন্দ্রনাথ খারাপ। প্রত্যেকের নিজস্ব সত্তা আছে। এঁদো মাটির মানুষ থেকে শুরু করে রাজাদেরও । কবি-সাহিত্যিকদেরও তাই। সেই সত্তাকে লালন করেই তাঁরা সমৃদ্ধ করেন সাহিত্য। রেখে যান অমরত্বের অমোচনীয় ছাপ। সেটা নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। আর অবশ্যই তাঁরা সম্মানের পাত্র।
আমরা যারা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল কে বিতর্ক চর্চা করতে পছন্দ করি তাঁরা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন । রবীন্দ্র-নজরুল সম্পর্কটা ঠিক কেমন
ছিল। আমরা কেন এই পবিত্র সম্পর্কটাকে দূষিত করবো ? আসুন এসব থেকে বিরত থেকে বরং নিবিড়ভাবে রবীন্দ্র-নজরুল চর্চা করি।
১৯২৫ সালে নজরুল ‘লাঙ্গল’ পত্রিকা প্রকাশ করেন । নজরুল সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ বন্ধ হবার পরে নজরুল সম্পাদনা করেন ‘লাঙ্গল’। এবারও রবীন্দ্রনাথ শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন নজরুলকে। প্রথম প্রকাশ পায় ২৫ ডিসেম্বর, ১৯২৫।
“জাগো জাগো বলরাম
ধর তব মরুভাঙ্গা হল
বল দাও, ফল দাও
স্তব্ধ করো ব্যর্থ কোলাহল”।
রবীন্দ্র-নজরুলের প্রথম কখন দেখা হয়েছিল ?
রবীন্দ্রনাথ একদিন খুব আগ্রহভরে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় কে নজরুল ইসলাম কে শান্তি নিকেতনে নিয়ে আসতে বললেন।
যথারীতি তিনি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আসতে গেলেন। প্রথম দেখায় রবীন্দ্রনাথ নজরুলের দিকে এক দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকলেন । কিছুক্ষণ পর রবীন্দ্রনাথ শুধু একটি কথা বললেন 'বসো' ,তারপর বসার পরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন।(সূত্র -আবদুল আজিজ আমান ১৩৮৭) উল্লেখ প্রথম দর্শন নিয়ে মতবেদ রয়েছে।তবে তিনি খুব জোর দিয়ে বলেন এটাই ছিল রবীন্দ্র-নজরুলের প্রথম সাক্ষাত।
অপর একটি সূত্র অনুসারে ,তাঁদের প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসের কোন এক তারিখে(দুঃখিত নির্দিষ্ট তারিখ জানা যায় নি ) সাক্ষাতের স্থান ছিল শান্তিনিকেতন । তখন গজল সম্রাটের সাথে ছিলেন ডক্টর মোহাম্মদ শহিদুলল্লাহ্(সূত্র- রবীন্দ্র জীবনী-প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়) এই মন্তব্যের রেফারেন্স হিসাবে লেখা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত সচিব সুধাকান্ত রায় চৌধুরির অনুজ নিশিকান্ত রায় চৌধুরির । তিনি একাধিক বার এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
দার্জিলিংয়ে সাক্ষাৎ:
১৯৩১ সালের জুন মাসে দার্জিলিংয়ে ভ্রমণকালে কাজী নজরুল ইসলাম শুনলেন সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ঘুরতে এসেছেন। শোনামাত্রই নিজে মুখপাত্র হয়ে লেখিকা জাহানারা চৌধুরী, নাট্যকার মন্ময় নাথ, ও শিল্পী অখিল নিয়োগীকে (স্বপনবুড়ো) নিয়ে কবিগুরুর সাথে দেখা করতে আসেন। নজরুল তার এই সাক্ষাতের কথা ১৩৩৮ সালের ‘স্বদেশ’ পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যায় প্রবন্ধাকারে প্রকাশ করেন। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে পেয়ে খুবই খুশী—বহুক্ষণ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়”। আড্ডার এক পর্যায়ে কবিগুরু-পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসে দরজার পাশে এসে দাঁড়ালেন। বললেন, “বাবা-মশায়ের খাবার দেরি হয়ে যাচ্ছে”। সবাই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন তখন ১২টা গড়িয়ে দুপুর। কবিগুরু তখনো অভুক্ত। তাদের দুজনের মধ্যে হৃদ্যতা কতটুকু গভীর ছিল তা সহজেই বোঝা যায়।(এই অংশের তথ্যসূত্র ক্লিক করুন ।
আরও একটি ঘটনা বলি। সেটা ১৯২১ সালের ৮ মে ,বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়েছিল। ধারণা করা হয় সেখানে প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল। বলা হয় এই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল পাশাপাশি কেদারায় বসে ছিলেন।রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন নজরুল কে ,তাঁর পাশে বসার জন্য। যেহেতু তিনি পাশে বসার জন্য বলেন ,সেহেতু এই কথার মাধ্যমে আমরা অনুধাবন করতে পারি,তারও আগে দুই মহারথির সাক্ষাত হয় । অথ্যার্ৎ ৮ মে ,১৯২১ সালেরও আগে।
কাজী নজরুল ইসলামের দুর্লভ ভিডিওটি দেখতে ও ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন দয়া করে।
তথ্যসূত্র: অজ্ঞাত নজরুলের সন্ধানে,প্রথম আলো,২৪বিডিনিউজ২৪.কম,আটর্সবিডিনিউজ২৪.কম,বিবিসি বাংলা , উইকিপিডিয়া,বাংলাপিডিয়া, বাকি তথ্যসূত্র লেখায় উল্লেখ করেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২০ রাত ১১:৩৯