বাংলা বানান সমস্যায় আমাকে উৎসাহ দিয়েছিল এই-(শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়ম ;বাংলা বানান শেখার ২০টি বইয়ের লিস্ট এবং ৪৯ টি গুরুত্বপূর্ণ লিংক !! (একের ভিতর সব) পোস্টটি করতে । সেখানে আপনাদের প্রেরণা,উৎসাহ ও পাঠক প্রিয়তা ভুলার নয় । তাই আবারও বাংলা বানান নিয়ে পোস্ট দিলাম।
প্রত্যেক ভাষারই শব্দ ও বাক্য লিখনের বিশেষ নিয়মরীতি বিদ্যামান। বাংলা ভাষার বিভিন্ন এককগুলো নিয়ে যখন বাক্য লিখিত হবে ,তখন তার অবস্থান কেমন হবে তার একটি নির্দিষ্ট রীতি অস্পষ্টভাবে প্রচলিত আছে । আমরা সেই রীতি গুলোকে সূত্রাকারে উল্লেখ করলাম । কখনো প্রচলিত রীতি থেকে সরে এসে একটু নতুনভাবে লেখার প্রস্তাব রেখেছি। এই প্রস্তাবটির উদ্দেশ্য ব্যতিক্রমহীন সূত্রের দিকে অগ্রসর হওয়া ।
১। সমাজবদ্ধপদগুলো একটি শব্দরুপে বসবে,মাঝে হাইফেন বা ফাঁক হবে না ।
যেমন:সাদাকালো, বাবামা , রাজপুত্র ,বীণাপাণি, হাতাহাতি ,তেলেভাজা ,গাছেপাঁকা ,নদনদী,বনবাদর , পঞ্চপত্র , শ্বেতশুভ্র ,আকাশবাতাস ,রক্তকমল ,হাতকাটা ,বরযাত্রী, নিয়মকানুন, বিবাহবাসর, রাতজাগা, বনলতা, চণ্ডীমণ্ডল, কাগজপত্র, লোকসংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, লোকভাষা ।
২। সমস্ত প্রত্যয় মূলশব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বসবে।
যেমন :দাদাগিরি, পাগলপারা, দোহারা, বাবুয়ানি, বাবুয়ানা, মুদিখানা, ডাক্তারখানা, কলমদানি, ধোঁকাবাজ, ফাঁকিবাজ,
ঘুষখোর, গাঁজাখোর, চলনসই, মানানসই, বাড়িওয়ালা, ফেরিওয়ালা ।
৩। বহুবচনবাচক বিভক্তি বা শব্দগুচ্ছ পূর্ববতী শব্দের সাথে যুক্ত হবে।( যে শব্দটি বহুবচন নির্দেশ করছে তা সঙ্গে যুক্ত হবে)
যেমন: গাছগুলো, জনগণ, প্রাণীকুল, গ্রন্থসমূহ, প্রজাবৃন্দ, গ্রন্থরাজী, পর্বতমালা, রচনাবলী, নক্ষত্রমণ্ডলী, ছাত্রদল ইত্যাদি।
৪। একবচন নির্দেশক টা, টি, টুকু, খানা, খানি, খান, টুকি, গুটি, জন, গাছ,গাছি, গোটা ইত্যাদি মূল শব্দের শেষে যুক্ত অবস্থায় থাকবে।
যেমন: কলমটা, লোকটি , মানুষজন, দড়িগাছা, ঘরখানি, মালাগাছি ইত্যাদি ।
৫।বহুবচন নির্দেশক শব্দ ,কোনো শব্দের সামনে বসলে দুটি শব্দের মাঝে ফাঁকা থাকবে ।
যেমন : সকল ছাত্র, বহু বই ,বহু লোক, সারা বাংলাদেশ ।
বিঃদ্র. সারা শব্দটি কালবাচক অর্থে ব্যবহার হলে যুক্ত হয়ে বসবে ।
যেমন : সারাজীবন , সারাবছর, সারাদিন ।
৬। সামনের 'সর্ব' 'লোক' যুক্ত হয়ে বসে ।
যেমন: সর্বজন, সর্বভুক, সর্বক্ষণ, লোকসাহিত্য, লোকচক্ষু ইত্যাদি।
৭। 'জাত'' ''বাচক'', ''গ্রস্ত'', ''সূচক'', শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে বসে ।
যেমন:মানুষজাত, কণ্ঠজাত, প্রত্যয়জাত, প্রাণীবাচক, গুণবাচক, ব্যাধিগ্রস্ত, রোগগ্রস্ত, ক্ষয়গ্রস্ত, বাতিকগ্রস্ত, সম্মানসূচক, বিস্ময়সূক ।
তেমনি 'রুপে' শব্দটি শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে বসবে। উদাহারণ:আইনসম্মত, বিধিসম্মত, যুক্তিনির্ভর, ধর্মনির্ভর, বিশ্লেষণধর্মী, মননধর্মী, সৌভাগ্যবসত, শ্রদ্ধাবসত, বিজ্ঞানমনস্ক, অন্যমনস্ক
,বলপূর্বক, অনুগ্রহপূর্বক ।
৮। কাল নির্দেশক শব্দগুলো একত্রে বসবে নাকি আলাদাভাবে বসবে ?
এটা নিয়ে ভিন্ন জনের বিভিন্ন মত আছে ।দুটিই প্রচলিত ।
উদাহারণ: ছেলেবেলা, বিকালবেলা, আধুনিককাল। ব্যতিক্রম কিছু নিয়ম আছে খানিকক্ষণ হয়, তবে খানিককাল হয় না৷
দিন শব্দের পূর্ববর্তী বিশেষণ (এ, সে বিশেষণ দুটি ছাড়া) একসঙ্গে বসবে না৷ যেমন: এত দিন, কত দিন, তত দিন, যত দিন, অনেক দিন, কিছু দিন, বহু দিন৷ কিন্তু এদিন, সেদিন৷
এ ছাড়া অন্যান্য শব্দের ক্ষেত্রে এত, কত, তত, যত, অনেক, কিছু, বহু পৃথকভাবে বসবে৷ যেমন: এত বই, কত নৌকা, তত কষ্ট, যত আনন্দ, অনেক বছর, অনেক সময়, কিছু পদক্ষেপ, বহু প্রচেষ্টা ইত্যাদি৷ এ অংশের তথ্যসূত্র
৯। সব,সকল,প্রকার,ধরন আগের শব্দের সঙ্গে শেষে যুক্ত থাকবে ।
উদাহারণ : এসব, সেসব ,যেসব, ভাইসকল , নানাপ্রকার , নানাধরন। একটি কথা বলে রাখা ভালো আমরা ‘ধরণ’ ও ধারণা বাানানটি প্রায়শই ভুল করি । সহজ বিষয় হলো হলো যদি বানানে ‘অ’ উচ্চারণ হয় তাহলে ‘ন’ ব্যবহার হবে । আর যদি ‘আ’ উচ্চারণ হয় তাহলে ‘ণ’ ব্যবহার হবে । যেমন ’কারন’ এটি ভুল বানান । সঠিক হলো কারণ,খেয়াল করুন এখানে ‘আ’ উচ্চারণ হয়েছে । আবার ‘করুণ’ হবে না হবে ’করুন’ । করুন বানানে কি উচ্চারণ হয়েছে ? আপনিই বলুন । আজ থেকে এই বানানে সমস্যা থাকার কথা না। শুভকামনা করছি ।
১০। প্রচলিত নামপদের মাঝে কোনো অংশ আলাাদা হবে না ।
উদাহারণ : রবীন্দ্রনাথ, অমরনাথ, দীনবন্ধু, সুনীতিকুমার, ঠাকুরদাস, বিমলকুমার।
১১। ক্রিয়াপদের শেষে ‘না’, ‘নাই’, আলাদা বসবে । শব্দের আগে উপসর্গ যুক্ত হলে ‘নি’ একসাথে বসবে ,।
এটা আমি জানতাম না । আজ জানলাম তাই শেয়ার করছি।
যেমন : করিনি, হয় না ।
বি,দ্র: "না" শব্দের পূর্বে উপসর্গ হিসেবে যুক্ত হলে বা ব্যবহৃত হলে সে নিয়ম মানবে না।
যেমন : নাবালক, নাছোড়বান্দা, নারাজ, নাজানি।
১২। অনুসর্গগুলো আলাদা আলাাদ বসেব।
থেকে, হইতে, ছাড়া, চেয়ে, সাথে, সঙ্গে ইত্যাদি ।
১৩। ধ্বন্যাত্বক ও অনুকার অব্যয় একসঙ্গে বসে।
যেমন: খাঁখাঁ,তরতর,ঘেউঘেউ,কলকল ।
১৪। দ্বিরুক্ত অনুচর শব্দের শেষে হাইফেন বসবে না ।
যেমন: বইখাতা, কাপড়চোপড়, চিঠিপত্র, ভালোমন্দ, ফলমূল ইত্যাদি ।
১৫। একই বাক্যে বহুবচন নির্দেশক থাকবে না ।
যেমন : ‘সকল ছাত্ররা’ হতে পারে না ,’সকল ছাত্র’ হবে ।
১৬। প্রমুখ,ইত্যাদি,প্রভৃতি শব্দের শেষে বহুবচন হবে না । কেননা এই শব্দগুলো বহুবচন নির্দেশ করে ।
সাধারণা ভুল : প্রমুখগণ, প্রমুখেরা । প্রমুখ,প্রভৃতি হবে শুধু।
১৭। শব্দের শেষে ‘এ; ‘রা’, ‘এতে’, ‘কে’, ’এরা’, ‘য়’, ‘দের’, ‘গুলা’, ‘গুলি’, ’গুলো’, বিভক্তি মূলশব্দের শেষে যুক্ত হয়ে বসবে। বি.দ্র- এইসকল শব্দের শেষে হাইফেন(-) হবে না ।
উদাহারণ: লেখকগণের হবে ,লেখকগণ এর হবে না ।
ব্যতিক্রম: অ-কারান্ত ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে ‘এর/এরা’ এবং অন্য স্বরধ্বনি থাকলে ‘র/রা’ হবে।
যেমন ছাত্রীরা,হাতের ।
ই-স্বরধ্বনির পর ‘এ’/’এর’ যুক্ত হলে সেথানে ‘য়ের/’যে’ বসবে ।
যেমন: বইয়ের ,দইয়ের সানায়ে হবে। বই এর হয় না ।
১৮। ওয়ালা/আলো/ওয়ালি/ওয়া/য়ান প্রত্যয়যুক্তই হবে ।
যেমন: বাড়িওয়ালা, পালোয়ান, দারোয়ান ।
১৯। শব্দের শেষে বা মাঝে কখনই ‘অ’ ‘আ’ ‘এ; বসে না ।
২০। প্রবন্ধের নামে ‘‘ ’’ এবং গ্রন্থের নামে ‘ ’ ব্যবহার হয় ।
২১। কোথায়/কখন ‘শতক’ ‘দশক’ হবে তা নিয়ে ঝামেলায় থাকি । এই ভুলটা অনেক করি।
একটু দেখুন ( এই অংশের তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা লিংকের প্রতি।
প্রথম দশক বা দশের দশক ১ থেকে ১০।
দ্বিতীয় বা বিশের দশক ১১ থেকে ২০।
তৃতীয় বা ত্রিশের দশক ২১ থেকে ৩০।
চতুর্থ বা চাল্লিশের দশক ৩১ থেকে ৪০।
পঞ্চম বা পঞ্চাশের দশক ৪১ থেকে ৫০।
ষষ্ট বা ষাটের দশক ৫১ থেক ৬০।
সপ্তম বা সত্তরের দশক ৬১ থেকে ৭০।
অষ্টম বা আশির দশক ৭১ থেকে ৮০।
নবম বা নব্বইয়ের দশক ৮১ থেকে ৯০।
যেমন: ২০২১ সালকে আমরা বলি বিংশ শতাব্দির বিশ দশক । যা ভুল । সঠিক হলো ‘ একবিংশ শতাব্দির ত্রিশের দশক। এই ভুলটা কমে যাবে, সেই প্রত্যাশা ।
২২। প্রথম পুরুষের সম্মানীয় সর্বনামের প্রয়োগ নিয়ে ।
আমরা সম্মান প্রদর্শন হিসাবে তার,তারা,তাদের শব্দে চন্দ্রবিন্দু(ঁ) ব্যবহার করি । সেটা ঠিক আছে। তবে কিছু শব্দও ভেসে আছে বাংলা ভাষায় । যেমন : তিনা,তিনাদের,তিনারা । এসব শব্দ ব্যাকরণ সম্মত নয় । কথ্য ভাষায় চলে বড়জোর । লেখ্য ভাষায় বর্জনীয় ।
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা : নারায়ণ হালদার রচিত বাংলা বানানের নিয়ম কানুন বইয়ের আলোকে।
বাংলায় বাঁচুন , বাংলাকে অবহেলা থেকে বিরত থাকুন। রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলার চর্চা বৃদ্ধি পাক সেই কামনা করছি।
কোনো পোস্ট উৎসর্গ করাটা ব্লগীয় মিথস্ক্রিয়তার বড় অংশ । অমিও সেটা উপভোগ করি ।আজকের পোস্ট উৎসর্গ করছি ঠাকুরমাহমুদ ভাইকে।আপনার সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বিষয় ভালো লেগেছে। দারুণ ব্লগিং করছেন। তা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হোক সেই কামনা করছি।
নোট: একটি বিষয় ভাবছি । ব্লগে যতদিন আছি ,যদি সৃষ্টিশীল কোনো কিছু নিয়ে লিখতে থাকতাম ,কিছু শিখতে পারতাম । কিন্তু সেই সৃজনশীলতা ও সাহস নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৫৪