ব্রেকআপের দহন বড় অদ্ভুত রকমের হয়। আজ মনীষের দহনের দিন। হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটাও আজ অপেক্ষা মানছেনা। নিজের স্বাধীনতায় আজ পুড়েই চলেছে সিগারেট।
সিগারেট জ্বালিয়েও আজ আর টানতে ভালো লাগছেনা মনীষের। তুচ্ছ ছাইয়ে আজ কেবল দীপার স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
প্রথম পরিচয়ের দিনটা ছিল বড় অদ্ভুত। ভার্সিটির এক বন্ধুদের সার্কেলে আড্ডা দিতে গিয়েই চোখ পড়েছিল দীপার চোখে। শান্ত স্পষ্ট জোড়া চোখের চাহনিতে ছিল বিশ্বাসের সমস্ত আধার। বয়সে যুবতী হলেও যার ছিল কিশোরীর মত অঙ্গশৈলি। মোহে পড়তে আর সময় লাগেনি। কিন্তু বন্দী আবেগের বহিঃপ্রকাশ নিয়েও এক গভীর দ্বিধাদ্বন্দ্ব।
মনীষ কথা বললে দীপা অধিক মনোযোগী হয়ে সব কথা শুনত। এ অবস্থায় তার চোখে তাকালে ভারসাম্যহীন মনে হতে থাকল মনীষের। কি অদ্ভুত ঐ চোখের ভাষা!
এক পর্যায়ে গল্পে গল্পে দুজন আলাদা হলো সকলের আড্ডা থেকে। কারণ প্রেম তখন হালকা ভাবে মনে উঁকি দিয়েছিল। প্রয়োজন ছিল নিজস্ব এক জগতের। ঠিক মনের টানেই দুজন সময়ের চাহিদাকে পূরণ করলো।
দীপা সিগারেট খায় এটা কোনভাবেই অজানা ছিলনা মনীষের। কিন্তু মনীষ ভাবলো বিশ্বাস দিয়েই নাহয় এর একটা সমাধান হবে।
কিন্তু সমাধানের কথাতো পর, দুজনেই শেয়ার করে সিগারেট খাওয়া শুরু করল। সিগারেটের উষ্ণ ফিল্টারে ঠোঁটের স্পর্শ ভাগাভাগি।
আরও একটি বিষয়, যা খানিকটা হলেও অস্বাভাবিক মনে হলো মনীষের, তা হলো ভার্সিটির ছেলে বন্ধুদের সাথে যখন তখন দীপার অন্তরঙ্গতা, হাগ করা।
মনীষ এ নিয়েও নিজের অভিযোগ চেপে রাখলো কিছুদিন, কিন্তু এই সম্পর্কের ঘটনা তো আর চেপে থাকার মত নির্জীব কিছু নয় কারণ সম্পর্কেরও অদৃশ্য হাত পা থাকে।
মনীষ এলাকার স্থানীয়, খুব স্বাভাবিক মনীষের বাবা জেনে গেলেন প্রেম কাহিনী। তিনি তেমন কিছু বললেন না। ভার্সিটিতে ছেলে মেয়েরা প্রেম করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু তিনি অন্য কিছু করলেন।
দীপা মেসে থাকে। সহজ বাংলায় বলা যায়, দীপার পেছনে খোঁচর লাগালেন তিনি। সমস্যার শুরুও এখানেই।
মনীষকে নিজের কাছে ডেকে নিয়ে তিনি বললেন, কিরে, কি মেয়ে পছন্দ করলি যে কেউ তার নামে ভালো কিছু বলেনা। চার পাঁচজন মানুষের মুখে সেইম বর্ণনা শুনলাম। তুই তো আমাদের ফ্যামিলির কথা জানিস,
আজ বাদে কাল তোদের যদি বিয়েও হয় তখন তো আশেপাশের লোকজনই তোদের নামে কটুক্তি করবে।
মেয়ে সিগারেট খায়, হাজারটা ছেলের সাথে মেলামেশা করে, এসব তো ঘরের বৌয়ের লক্ষণ হলে সমস্যা।
মনীষ বুঝলো বাবা তো ভুল কিছু বলেননি। এরপর মনীষ ভাবলো দীপাকে বুঝিয়ে বললে ও ঠিকই বুঝবে। তখন আর তাকে মেনে নিতে বাবারও বিশেষ সমস্যা থাকবে না।
এখানেই শুরু ভাঙনের। দীপা চিন্তা করে নিজস্ব স্বাধীনতার। পরিবর্তন তার সম্ভব নয়।
মনীষ স্পষ্ট বললো, দেখো যদি মানতে পারো তো ভালো নয়তো.....
দীপা ভ্রু কুঁচকে বলল, নয়তো কি, হু আলাদা করে আর বলার প্রয়োজন নেই। বুঝতেই পারছি সম্পর্কে তোমার আর ইন্টারেস্ট নেই। যাও নিজের সুখকে খুঁজে নাও, আমি কারও জন্য নিজেকে পরিবর্তন করায় বিশ্বাসী নই।
রাগ মনীষেরও কম নয়,আর কিছু না বলেই দ্রুতবেগে চলে গেল দীপার সামনে থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৩৭