দীর্ঘদিন যুদ্ধ শেষে স্বাধীনতা নিয়ে আজ আমি ও আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু রণ বাড়ি ফিরছি।স্বাধীনতার জন্যই আমরা একদিন হাসিমুখে ঘর ছেড়েছি।অপেক্ষার শেষে আমরা আজ বাঁচার স্বাধীনতা নিয়ে ঘরে ফিরছি।বাড়ির সকলেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।রণ এত বেশী কথা বলে যে আমি তার কথার মাঝে একটা কথাও বলতে পারিনা।মাঝে মাঝে তো চরম বিরক্তির প্রকাশও করি।কিন্তু রণ বলে কথা।তার গাল ভর্তি কথার সমারোহ।
এতকিছু বলার বিশেষ কারণ হলো রণ আজ একটাও কথা বলছেনা।সারাপথ যেতে আমার বড় বিরক্তি লাগছে।রণ কথা বলছেনা,এ কথা আমাদের পরিচিত কেউই বিশ্বাস করবেনা।যাক যে কথা বলবেনা তাকে জোর করে কথা বলানো আমার কাজ নয়।
কয়েকদিন আগের কথা,যখন আমরা মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে অবস্থান করছি,খাবারের দারুণ সংকট যখন তখন আমি আর রণ খাবার একপ্লেটে ভাগ করে খেতাম।খাবারের সমস্যাটা একদিনের ছিলনা এ ছিল রোজকার এক পরিচিত সমস্যা।তবে এ সমস্যা কোন সমাধানহীন সমস্যা ছিলনা।এ সময় অবশ্য আমি সুবিধাবাদীর মত খেতে থাকতাম।রণ বিরতিহীন কথা বলে যেত আর আমি বিরতিহীন খেয়ে যেতাম।খাওয়া শেষে যখন রণ দেখত তখন বলত ধুর আজকের খাবার একটুও ভালো লাগেনি,বাড়ি ফিরে আমার বোনের হাতের যে রান্না করা খাবার খাব তার কাছে এ তো তুচ্ছ।এসব বলেই হাতের বন্দুকটা নাড়াচাড়া করতো রণ। রণ নামের সার্থকতা আছে বটে।আমাদের ক্যাম্পের একজন সাহসী যোদ্ধা ছিল রণ।সবসময় এগিয়ে এগিয়ে দারানো ওর এক বৈশিষ্ট্য।ওর সাহসের কাছে আমি যে এক তুচ্ছ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
এ তো গেল আমাদের ক্যাম্পের সামান্য কথা।
ছোট বেলায় যখন একসাথে স্কুলে পড়তাম তখন একরকম কবি কবি ভাব ছিল রণের।সুন্দরী মেয়ে দেখলেই স্বতঃস্ফুর্ত এক কবি হয়ে যেত রণ।ওর উপমার কাছে শব্দকোষ অতি ক্ষুদ্র হয়ে যেত।তবে কথার মাঝে আমি প্রায়ই বিরক্ত করে বলতাম একটু পানি খেয়ে নে রে রণ।দু চারটি আরো ভালো উপমা আসবে ভেতর থেকে।
যে রণের কথা থামাতে আমি এতকিছু করতাম,সে রণ আজ নিজে থেকেই চুপচাপ।
যুদ্ধের একদম শেষ পর্যায়ে এসে রণের বুকের বা দিকে বিরুদ্ধ পক্ষের একটা গুলি এসে লাগলো আর সে থেকেই রণ হয়ে গেল শান্ত।
আমি আজ সেই রণের লাশ কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরছি।তুই বড় ভারী হয়ে গেছিস রণ এতটা ভারী তুই কখনো ছিলি না।কাঁধটা বড় ব্যাথা করছে রে রণ......
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১৯