সর্তকতা/করনীয়: ৫-৬ জনের টিম হলে ভালো হয়। সাথে করে ভালো গ্রিপের জুতা নিয়ে যাবেন। অথবা ফুটবল খেলার এংলেটও নিতে পারেন। যদিওবা জোঁক নেই বললেই চলে, তবু চাইলে জোঁকের হাত থেকে বাঁচতে তামাক পাতার পানি ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাকপ্যাক যথা সম্ভব হালকা রাখবেন। পানির বোতল রাখবেন সাথে। পানি না নিলেও চলবে। ব্যাগ ভারী না করার জন্য খালি বোতল নেওয়াই ভালো। টিম মেম্বার হিসেবে ভালো স্ট্যামিনা আছে এমনদের সিলেক্ট করুন। নাহয় মাঝ পথেই বসে পড়বে। এতে আপনাদের ট্রিপও বিঘ্নিত হতে পারে।
ট্যুর প্ল্যান: প্রথমে ঢাকা টিটি পাড়া থেকে স্টার লাইনে ফেনী চলে যাবেন। ভাড়া নিবে ২৭০ টাকা করে। চাইলে তূর্ণা নিশিতা ট্রেনেও যেতে পারেন। অনেকেই মেইল ট্রেইনের কথা বলে। কিন্তু আমি মেইল ট্রেইন সাজেস্ট করবো না। মেইল ট্রেইন সাধারণত একটু লেট করে। খরচ কিছুটা কমাতে গিয়ে সম্পূর্ণ ট্রিপ উপভোগ করতে না পারাটা আমার কাছে বোকামি ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।
স্টার লাইনের লাস্ট ট্রিপে উঠলে আপনাকে ফেনী নামিয়ে দিবে ভোর ৩টা থেকে ৩:৩০ এর মধ্যে। কাউন্টারে ফজরের নামাজ পড়ে ৫/১০ মিনিট হেঁটে চলে যাবেন মহিপাল। সেখানে হোটেলে সকালের নাস্তা সেরে নিবেন। আমরা বিসমিল্লাহ হোটেলে নাস্তা করেছিলাম। পার পারসন ৩০ টাকা করে খরচ হয়েছিল।
সকালের নাস্তা সেরে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসলেই চট্টগ্রামের লোকাল বাস পাবেন। যেকোন একটাতে উঠে পড়ুন। বাসে করে নয়দুয়ারি বাজার যাবেন। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৪৫ টাকা। বলে রাখি অনেক বাসের হেল্পাররাই নয়দুয়ারি বাজার নাও চিনতে পারে। তাদের বলবেন ছোট দারোগা হাট আর বড় দারোগা হাটের মাঝে নয়দুয়ারি বাজার। একদম ঠিক নিজামপুর বাজারের আগের স্টেশন। আর ভাড়া ৫০-৬০ টাকা চাইতে পারে। বাট ৪০/৪৫ টাকা বলে উঠবেন।
নয়দুয়ারি বাজার নেমে পূর্বদিকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার হাঁটলেই নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার ঝিরিপথ পেয়ে যাবেন। এর মাঝে স্থানীয় অনেকেই আপনাকে গাইড নিতে বলবে। গাইড নেওয়ার জন্য 'গাইড না নিলে বিপদ হবে' এমন টাইপ ভয়ও দেখাতে পারে। বিচলিত হবেন না। আল্লাহর নাম নিয়ে গাইড ছাড়াই আপনার গ্রুপকে নিয়ে সামনে এগুতে থাকেন। ব্যাগ হালকা রাখবেন আগেই বলেছি। আর আগেই বলেছিলাম, ব্যাগ ভারী না করতে খালি বোতল নিতে। ঝিরিপথে দেখতে পাবেন সেখানের পাহাড়ি আদিবাসীরা একটু পর পর তাদের খাবার পানির জন্য ছোট ছোট গর্ত করে পানি রেখেছে। চাইলে সেখান থেকে একটু খাবার পানি নিয়ে নিতে পারেন। প্রথম ঝর্ণা পার হয়ে সামনে গেলে ঝর্ণার পানিও খেতে পারবেন। এই পানি ঢাকার ওয়াসার পানির চাইতে হাজার গুনে ভালো সে গ্যারান্টি দিতে পারি।
যেহেতু গাইড নাই, আপনিও এখানে প্রথমবারের মত এসেছেন, তাহলে ঠিকঠাক পথ চিনবেন কি করে?
ভয় নেই। ঝিরিপথের পানির প্রবাহ ই আপনাকে পথ চিনিয়ে দিবে। হাঁটার সময় খুব তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজন নেই। ধীরে সুস্থে হাঁটুন। আর হাঁটা শুরু করার আগে অবশ্যই আপনার সাথে করে আনা ভালো গ্রিপের জুতো বা এংলেটটি পরে নিন। ঝিরিপথ কিন্তু অনেক পিচ্ছিল, সতর্কতার সাথে হাঁটুন। হাঁটতে হাঁটতে নাপিত্তাছড়ার ৩ টা ঝর্ণাই দেখে ফেলবেন। মাঝপথে একটা জায়গায় এসে দেখবেন ২ দিকে পথ গেছে। কোনদিকে যাবেন বুঝতে না পারলে, প্রথমে যেকোন একদিকে যান। পরে সেদিকের ঝর্ণাটি দেখা শেষ করে এসে আবার অন্যদিকে যান। তাও বুঝতে না পারলে শেষ এ একটা ভিডিও লিংক দিলাম যাওয়ার আগে ভিডিওটি দেখে নিবেন। আশাকরি অনেক কনফিউশন দূর হয়ে যাবে।
৩ টি ঝর্ণাই দেখা শেষ হয়ে গেলে আবার একই পথে নয়দুয়ারি বাজার ব্যাক করুন। সেখান থেকে ১০ টাকা দিয়ে লেগুনায় করে চলে যান বড় তাকিয়া। বড় তাকিয়া নেমে রাস্তা পার হয়ে একটু সামনে হেঁটে গেলেই পূর্বদিকে চলে গেছে খৈইয়াছড়ার পথ। সেই পথ ধরে একটু সামনে গেলে দেখবেন সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে। রিজার্ভ নিবে ১০০ টাকা করে। আপনারা যেহেতু ৫ জন, জনপ্রতি খরচ হবে ২০ টাকা। সিএনজি থেকে নেমে চাইলে বাঁশ কিনতে পারেন, না কিনলেও তেমন সমস্যা হবে বলে আমার মনে হয় না। তবু আপনি যেহেতু প্রথমবারের মত যাচ্ছেন, ১০ টাকা দিয়ে একটা বাঁশ নিয়ে নিন। তারপর সামনে হাঁটা শুরু করুন। কিছুদূর গেলে হোটেল ঝর্ণাধারা নামে একটা হোটেল পাবেন। সেটাতে আপনার ব্যাগ রেখে, দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে নিন। মুরগীর মাংস, ভাত, ডাল নিবে ৭৫-৮৫ টাকা। সাথে ফ্রিতে সেখানে ব্যাগ রাখতে পারবেন। খাওয়া দাওয়া সেরে চাইলে ১০-১৫ মিনিট রেস্টও নিতে পারেন। কিন্তু খুব বেশি না। মনে রাখবেন সন্ধ্যা নামার আগে আগেই আপনাকে আবার এখানে আসতে হবে। আর কারো মনে প্রশ্ন থাকতে পারে এখানে ব্যাগ রাখা কতটা নিরাপদ? আমি ২ বার গিয়েছিলাম। ২ বারই এখানে ব্যাগ রেখে গিয়েছিলাম। আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা হয় নি।
আবারো কোন গাইড না নিয়ে ঝিরিপথ আর পানির প্রবাহের সাহায্য নিয়েই হাঁটতে থাকুন। এইবার আশেপাশে ভালোই মানুষ পাবেন। নাপিত্তাছড়ার চাইতে খৈইয়াছড়াতে মানুষ একটু বেশি আসে। ভীড়ও বেশি হয়। খৈইয়াছড়ায় পৌছানোর পর উপরে উঠার ইচ্ছা থাকলে প্রথম ঝর্ণাতে ভিজবেন না। আর সেখানে অপেক্ষাও করবেন না। সময় নষ্ট না করে উপরে উঠতে থাকুন। আবেগের বর্শবর্তী হয়ে উপরে উঠবেন না। নিজের শরীরের কন্ট্রোল নিজে বুঝে তারপর উপরে উঠুন। যতদূর পারবেন উঠুন। পুরোটা উঠতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কিন্তু যদি সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে পারেন, সেটি হবে আপনার জীবনের সেরা সময়গুলোর একটি!!!
এইবার ধীরে সুস্থে নিচে নেমে নিচের সবচেয়ে বড় ঝর্ণাটিতে ভিজতে পারেন। সেটাও আপনাকে অন্য রকম এক অনুভূতি দিবে। সন্ধ্যার আগেই আবার ঝর্ণাধারা হোটেলে ব্যাক করুন। সেখানে ড্রেস চেঞ্জ করে, ফ্রেস হয়ে হাঁটতে হাঁটতে আবার চলে আসুন সিএনজি স্টেশনে। সেখান থেকে আবার পার পারসন ২০ টাকা করে আসুন বড় তাকিয়া। বড় তাকিয়া থেকে ৪০ টাকা দিয়ে বাসে করে চলে আসুন ফেনী।
ফেনীতে রাতের খাবারটা সেরে নিন। মহিপালের বিসমিল্লাহ হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করলে খরচ হবে জনপ্রতি ৮০ টাকা। মনে করে রাতের খাবারের আগে গিয়ে স্টার লাইনের লাস্ট ট্রিপের টিকেট কেটে ফেলবেন। তারপর ফেনীতে একটু ঘুরাঘুরি করে লাস্ট ট্রিপে চলে আসুন ঢাকায়।
টোটাল খরচ:
আসা+যাওয়া- ২৭০*২= ৫৪০
সকালের নাস্তা- ৩০
ফেনী টু নয়দুয়ারি- ৪৫
নয়দুয়ারি টু বড় তাকিয়া- ১০
সিএনজি আসা যাওয়া- ২০+২০= ৪০
বাঁশ- ১০
দুপুরের খাওয়া= ৮০
বড় তাকিয়া টু ফেনী- ৪০
রাতের খাবার- ৮০
বিশেষ বিশেষ সতর্কতা: আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না। সৌন্দর্য দেখার অধিকার আপনার আছে, নষ্ট করার অধিকার নাই। আপনার ফেলে আসা চিপস বা চানাচুরের প্যাকেট যথাস্থানে ফেলার জন্য সেখানে কোন সিটি কর্পোরেশন নেই। যথাস্থানে ফেলার কাজটি আপনাকেই করতে হবে। তা করতে না পারলে প্লিজ সেখানে ঘুরতে বা দেখতে যাবেন না।
ধন্যবাদ
ভিডিও দেখুন
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৭ ভোর ৫:১৪