অভিশাপ্ত রাত
রাজিবুল হাসান দুরন্ত
আমি লিমা। আমার জন্ম এক গরিব পরিবারে। আমার জন্মস্থান নোয়াখালি। আমি ওখানেই বড় হই।
আমার বাবা ঠিক মত কাজ করে না তাই আমাদের সংসারে সবসময় অভাব লেগেই থাকে। তাই সংসারের অভাব দূর করার জন্য মা একটি কাজ বেছে নেয়। তিনি কিছু ব্যাসেলর ছেলেদের রান্না করে খাওয়ানো শুরু করে।
আমার বয়স তখন ১২ বছর। আমি তখনও কিশোরী। তবে আমরা পাঁচ ভাই বোন থাকার কারনে বাবা মায়ের সংসারের ঘানি টানতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। এই বার বছর বয়সেই যাদের রান্না করে খাওয়াতেন তাদের একজনের কাছে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেন। আমি তখন ভাল মন্দ বুজতে শিখিনি।
বিয়ের পরে জানতে পারলাম আমি মায়ের কপাল নিয়ে জন্মেছি। বাবার মত আমার বরও ঠিক মত কাজ করে না। একদিন কাজ করলে তিনদিন বসে থাকে। দূর হলনা আমার অভাবের কপাল।
আমার বর আমাকে নিয়ে ঢাকা চলে আসে। তার এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে তার কাছে চলে আসে। সেই লোক আমাদের খুব সস্থা একটি রুম ভাড়া করে দেয়। চার পাশে টিনের বেড়া এবং উপরেও টিনের ছাওনি। রুম ভাড়া মাত্র ১২০০ টাকা। মাত্র ১২০০ টাকা আমার বর ঠিকমত সোধ করতে পারে না প্রতি মাসে। আমার রুমে একটি পাটি, দুটি খাতা, দুটি বালিশ আর কিছু হাড়ি পাতিল ছাড়া কিছুই নেই। ফ্লোরে বিছানা কারে থাকতাম আমার বরকে নিয়ে।
সেখানে কিছুদিন থাকার পর আমার পরিচয় হয় এক ছেলের সাথে। ও একটি প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে। তার নাম সাকিন। ধীরে ধীরে ছেলেটিকে ভালোলাতে শুরু হয় আমার। ও... একটি কথা বলতে ভুলে গেছি, আমার বর প্রতি রাতে বাসায় ফিরত না। সাকিনের প্রতি আমার দুর্বলতা সাকিন বুঝে ফেলে। সেও আসতে থাকে আমার কাছাকাছি। আমাকে ভালোবাসার কথা বলে। আমি তেমন কিছু বলতাম না। কারন স্বামীর সম্পর্ক আমাকে পিছু টানত। আর সাকিনের সাথে আমার ভালোবাসা হতে পারে না। আমি বিবাহিত। কিন্তু তারপরও তার কাছে যেতাম তার মুখ থেকে ভালোবাসার মিষ্টি কথা শোনার জন্য। কারন, আমি কোন দিক থেকেই সুখি ছিলাম না। আমার বরের মুখ থেকে কোনদিন আমি ভালোবাসার কোন মিষ্টি কথা শুনিনি। রাতে ঘুমাতে গেলে তার গায়ে হাত পর্যন্ত রাখা যেত না। তাতে তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
ভালোবাসা কি জিনিস তা আমি সাকিনের কাছ থেকে শিখি। তারপরও সাকিনের প্রতি আমার কোন বাসনার ইচ্ছা জাগেনি। শুধু একটা ব্যাপার আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। আর সেটা হল আমার বৈবাহিক জীবন। ভাবতাম বিয়েটা না হলে সাকিনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যেত।
সাকিনের সাথে আশে পাশের মহিলা পুরুষদেরও ভাল সম্পর্ক ছিল। মিশুক ছেলে ছিল সাকিন। সবার সাথে মিশত। একদিন বাসায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। বিরিয়ানি পাকানো হল। নাচ হলো গান হলো। আমিও নাচছিলাম সেদিন। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত দুটো বাজলো। ঐদিন আমার বর বাসায় ছিল না এবং তার পরের দিনও বাসায় ফিরবে না বলে গেছে। আমি ঘুম প্রিয় মানুষ। অনুষ্ঠান শেষে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পরলাম। পরদিন সাকিন আমাকে বলল রাত তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত সে নাকি আমার ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু কিছুতেই আমার ঘুম ভাঙ্গেনি। আমার একটু খারাপ লাগল, কেন সে রাতে আমার ঘুম ভাঙ্গাতে যাবে। তার সাথে সেরকম কোন সম্পর্কে আমি জরাইনি। তাকে আমার ভালোলাগতো তাই কথা বলতাম। কিন্তু আমি নিজের অজান্তেই তখন বলে ফেললাম যে আজ রাতে দেখা করব।
আমি চলে আসলাম ওর কাছ থেকে। ভাবতে লাগলাম একি বললাম আমি সাকিনকে। ও রাতে আসলে কি বলব ওকে। চলে যেতে বললে তখন তো ও বলবে, তুমিই তো আমাকে আসতে বলেছ তাহলে এখন কেন চলে যেতে বলছ। আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।
ভাবতে ভাবতে কখন যে রাত হয়ে গেল টেরই পেলাম না। রাত ঠিক ১১ টা বাজে। তখন আমার টিনের দরজায় টোকার আওয়াজ পেলাম। আমি ভয়ে আতকে উঠলাম। শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলাম দরজা খুলব কি-না। আবার টোকার শব্দ হলো। তখন উঠে বাতি জ্বালালাম। দরজা খুলে দেখলাম সাকিন দরজার সামনে দারিয়ে আছে। আমি ওকে চলে যেতে বলার আগেই ও আমার রুমের ভিতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।
খুব জোরে কথা বলতেও পারলাম না আমি কারন পাশের রুমে লোক। টিনের বেড়া, শ্বাস করলেও পাশের রুমের লোক শুনতে পায়।
আমি হাত জোর করে ওকে চলে যেতে বললাম। ও আমার কোন কথাই শুনল না। বাতি নিভিয়ে হিংস্র বাঘের মত ঝাপিয়ে পারল আমার উপর। জরিয়ে ধরে আমাকে পাগলের মত চুমু খেতে শুরু করলো। ওর আদর আমার কাছে বিষের মত লাগতে শুরু করল। কারন, আমি কখনই এরকমটা আশা করিনি সাকিনের থেকে। এটার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। অনেক কষ্ট করেও নিজেকে বাঁচাতে পারলাম না সাকিনের হাত থেকে।
আমার সব কিছু শেষ করে দিল সাকিন। চরিত্রে মেখে দিল কলঙ্কের দাগ। এটা ছিল আমার জীবনের অভিশাপ্ত রাত। এ রাতের যন্ত্রনা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। কারো কাছে শেয়ার করতে পারছিনা এ যন্ত্রণা। যতদিন বেচেঁ থাকব এ কলঙ্কের ভার আমার একারই বইতে হবে।
তারপর থেকে আমি আর সাকিনের সাথে কথা বলিনি। সেও আমার সাথে আর কথা বলেনি। কিছুদিন পর আমরা পালিয়ে আসি সেখান থেকে বসা ভাড়া না দিতে পেরে।
(এক রাস হতাশা ভরা বুক আমার)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১১