(৩) শ্রী গুরুপূর্ণিমা
আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় হয় গুরুপূর্ণিমা উৎসব। মহাভারত রচয়িতা ব্যাসদেবের নামে একে ব্যাসপূর্ণিমাও বলা হয়। সঙ্ঘের কাছে এই দিনটির বিশেষ গুরুত্ব এই যে এদিনের উৎসব উদযাপনে “গুরু”র জন্য স্বয়ংসেবকদের শুদ্ধিকরণ করা হয়।
তবে আরএসএস কোনও বিশেষ ব্যক্তিকে হিন্দু সমাজের গুরু বলে মনে করে না। তাদের বক্তব্য হল, কোনও ব্যক্তি গুরু হতে পারেন না, কারণ মানুষ সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত হয় না (শঙ্করাচার্য বোধ হয় সঙ্ঘের এই মত পছন্দ করবেন না—যদিও তাঁদের কেউ কেউ, কেউ কেউ যেমন কাঞ্চির শঙ্করাচার্য, আজকাল আরএসএস ও ভিএইচপি-র পৃষ্ঠপোষক হয়েছেন)। আরএসএস তাদের গেরুয়া পতাকা বা “ভাগোয়া ধ্বজ”-কে জ্ঞান, ত্যাগ, বীরত্ব ও আত্ম-সংযমের প্রতীক হিসেবে তাদের গুরু বলে মানে (“ভাগোয়া ধ্বজ” শব্দ বন্ধটি প্রথম ব্যবহার করেন শিবাজী ও তাঁর গুরু সন্ত রামদাস)। এই দিনে আরএসএস স্বয়ংসেবকরা এই ঝান্ডাকে সেবা-র প্রতিজ্ঞা করে ও ঝান্ডাকে তারা অর্থ দান করে—সুবিশাল পরিমাণ অর্থ। আর্থিক দিক থেকে এই দিনটি আরএএস-এর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।
আরএসএস-এর আয় বা ব্যয় কত তা জানা অসম্ভব। আরএসএস-এর সমালোচকরা মনে করেন যে, পরিমাণটি বছরে লক্ষ লক্ষ ডলার, বা কোটি কোটি টাকা। গুরু পূর্ণিমার দিন সঙ্ঘের সদস্যরা তাদের প্রতীকী গুরু গেরুয়া ঝান্ডা-র সামনে তাদের বার্ষিক অনুদান জমা করেন। খামে করে টাকা জমা দেওয়া হয়, খামের ওপর দাতার নাম লেখা থাকে। কে কত ‘দান’ করবে সেটা আগে থেকেই নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা থাকে। তাই এদিন কত টাকা উঠবে সেটাও আগে থেকেই মোটামুটি জানা থাকে, ও সেইমত টাকা খরচের হিসাব করা হয়। কেউ যদি তার কোটা-র চেয়ে বেশি টাকা দেন, তবে তিনি উচ্চ প্রশংসিত হন। সঙ্ঘের ভেতরের নেতৃত্ব টাকাওয়ালা স্বার্থান্বেষীদের খুব পছন্দ করেন। অন্যদিকে কোনও শ্রমজীবী বা নিম্নবিত্ত তার প্রতিশ্রুতিমত টাকা দিতে না পারলে তাকে তিরস্কার করা হয়। তাই বলা চলে যে এই সুপরিকল্পিত ব্যাপারটি যেভাবে ঘটে তার মধ্যে গুরুর জন্য ত্যাগ ও নিঃস্বার্থ সেবার কোনও ব্যপার থাকে না। কিন্তু একথাও সত্য যে বহু নিষ্ঠাবান স্বয়ংসেবক সারা বছর টাকা জমিয়ে গুরুদক্ষিণা দিয়ে থাকেন। (ক্রমশ)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১০