আরএসএস-এর ছয়টি উৎসব
হিন্দু মন্দির ও পুরোহিতদের না চটিয়েও তাদের বাদ দিয়ে চলার এক চতুর প্রচেষ্টা
ছয়টি “পবিত্র” দিনকে সঙ্ঘ পরিবার হিন্দু গৌরবের প্রতীক হিসেবে উদযাপন করে। এই ছ’টি দিন উদযাপন করার মধ্য দিয়ে তাদের সংগঠনগুলির কাজকর্মে বাড়তি উৎসাহ আসে। উৎসবের দিনগুলিতে যত বেশি সম্ভব স্বয়ংসেবক (নিয়মিত ও অনিয়মিত) জড়ো করে প্রতিটি শাখা তাদের শক্তি জাহির করে। সপ্তাহান্তে সভায় সারা শহরে বা জেলায় মোট উপস্থিতির হিসেব নেওয়া হয়। উৎসবের দিন নিয়মমাফিক শারীরিক কসরতের পর একজন বক্তা—
সাধারণত শহর বা জেলার কোনও সিনিয়র নেতা—
এই উৎসবের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য একটি ভাষণ দেন।
ভাষণটি হয় লম্বা, একতরফা, ভুল ও অনেক ক্ষেত্রেই বিকৃত তথ্যে ভরা। আলাপ আলোচনা বা প্রশ্নের কোনও অবকাশ দেওয়া হয় না। এমনকি হর্ষধ্বনি করা বা হাততালি দেওয়াও বারণ। সদস্য নন এমন কেউ উপস্থিত থাকলে তাকেও বলে দেওয়া হয় হাততালি না দিতে। সঙ্ঘের সমস্ত সভায় একই নিয়ম—তা সে উৎসবের দিন হোক, বা বার্ষিক প্যারেড, কিংবা সরসঙ্ঘচালকের প্রকাশ্য সভা। “প্রকাশ্য” সভাতেও শ্রোতা কারা হবেন, সেটা আগে থেকে স্থির করা থাকে। সেখানেও আগে থেকে বলে দেওয়া হয় কোনওরকম আবেগ প্রদর্শন না করতে। সামরিক ধরনের শৃঙ্খলা মেনে চলা হয়, “স্বেচ্ছাসেবকদের” বলা হয় জমায়েতের ওপর কড়া নজর রাখতে, ন্যূনতম বিশৃঙ্খলা দেখা দিলেই সতর্ক করতে। তাই আরএসএস নেতারা যখন বলেন যে তাদের মধ্যে কোনও সামরিক ধরনের শৃঙ্খলার প্রচলন নেই, এসব তথ্য তার বিপরীত সাক্ষ্য দেয়।
(১) বর্ষ প্রতিপদ (চৈত্র শুক্লা প্রতিপদ)
এই দিনে যুধিষ্ঠির বর্ষ, বিক্রম সংবত, শালীবাহন বর্ষ ইত্যাদি শুরু হয়। বলা হয়, এই দিনে শ্রীরাম সিংহাসনে আরোহন করেন। যুদ্ধে শকদের পরাজিত করে বিক্রমাদিত্যও এই দিনে শালীবাহন উৎসব পালন করেন। এই দিনটি আবার আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা ডঃ কে বি হেডগেওয়ারের জন্মদিনও বটে।
ডঃ কে বি হেডগেওয়ারের জন্মদিন বলেই বোধ হয়ত এই দিনটি বিশেষ ভাবে উদযাপিত করা হয়। সমস্ত জমায়েতেই সঙ্ঘ নেতারা এই দিনটির গুরুত্ব ও পবিত্রতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। স্বয়ংসেবকদের জমায়েতে ডঃ কেশব হেডগেওয়ারের জীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাঁর কাজকর্মের কথা বেশ বাড়িয়ে দেখানো হয়। তাঁকে সাধারণত “ডক্টরজী” বলে উল্লেখ করা হয়। সঙ্ঘের কর্মীদের মনে এক দেবতুল্য মানুষ ও দেশপ্রেমিক বীর হিসেবে— প্রায় এক অবতার হিসেবে—তাঁর পরিচিতি গড়ে তোলা হয়। সব সময়ে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে ডঃ হেডগেওয়ারের জন্মদিনটি হল শ্রীরামের সিংহাসনে আরোহনের দিন, বিক্রমাদিত্যের শকদের পরাজিত করার দিন—মনে রাখতে হবে যে “হিন্দু ভারতবর্ষে” বিদেশি আক্রমণকারীদের মধ্যে শকরা অন্যতম।
“কেশব তুমহে প্রণাম
যজ্ঞ ঘৃতসমিধ তুমহারি
প্রেরণা উদ্বোধকারী”
[কেশব, তোমাকে প্রণাম, যজ্ঞের আগুনের ঘি আর কাঠ হিসেবে তুমি আমাদের মধ্যে প্রেরণা সঞ্চার করেছ]
এটি একটা সংস্কৃতগন্ধী হিন্দি গান, “ডক্টরজী”-র দেবতুল্যতাকে স্মরণ করতে এদিন এ গানটি প্রতিটি শাখায় গাওয়া হয়।... (ক্রমশ)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:২৬