আর কতো নিচে নামবো আমরা ?
আমাদের হাত পা বাঁধা সেতো অনেকদিন ।
বাক স্বাধীনতা সে তো কথার কথাতেই.....।
মত প্রকাশ সেতো দুরের ভাবনা।
লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে তো মুখ খোলবার ই উপায় নেই ।
এখনতো মুখ , চোখ , হাতের আঙ্গুল সেটাও বেঁধে ফেলা হলো ।
ভাবনা গুলো ও হয়তো একদিন বেঁধে ফেলা হবে।
এরপর.....।
আমরা কি স্থবির হয়ে যাচ্ছি ।
আমরা কি পাথর হয়ে যাচ্ছি।
আমরা কি মধ্য যুগে চলে যাচ্ছি ?
আরে পশুরও তো মমত্ববোধ আছে তোদের নেই কেন ?
তোদের হাত কি একটু ও কাঁপেনি ।
বিবেক কি একটুও জাগেনি .....আর মানবতা.......।
মনে হয়নি আবরারের জায়গায় নিজেকে ।
এত দম্ভ ! এতোটা.......আবার হাসছিস.....।
জানিস না হয়তো.।
অন্যের মতামত শোনা সেটাই গনতন্ত।
অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করা সেটাই গনতন্ত।
সবার মতামতের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত গ্রহন করাই গনতন্ত্র......।
আমি অভিশাপ দিচ্ছি নিরীহ আবরারের মায়ের পক্ষ থেকে ..
আমি অভিশাপ দিচ্ছি নিরীহ আবরারের বাবার পক্ষ থেকে......
আমি অভিশাপ দিচ্ছি সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে......।
আবরার ফাহাদের খুনিরা ধ্বংস হোক.....
================================================================================
আবরার ফাহাদ। ছবি: সংগৃহীত
বুয়েটে নিহত আবরার ফাহাদের মায়ের আহাজারি। গতকাল সকালে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাড়ি। ছবি: প্রথম আলো
আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিল। বুয়েট ক্যাম্পাস, ঢাকা, ৮ অক্টোবর। ছবি: আবদুস সালাম
আবরার ফাহাদের মরদেহ তাঁর পৈতৃক ভিটা রায়ডাঙ্গায় পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা ও ছোট ভাই। কুষ্টিয়া, ৮ অক্টোবর। ছবি: তৌহিদী হাসান
কুষ্টিয়া শহরে আবরারের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়া, ৮ অক্টোবর। ছবি: তৌহিদী হাসান
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় আবরার ফাহাদের দাফন সম্পন্ন হয়। কুষ্টিয়া, ৮ অক্টোবর। ছবি: তৌহিদী হাসান
@ফেসবুকে আবরার ফাহাদ নিজের পরিচয় দিয়ে লিখে রেখেছিলেন, ‘অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা অসীম মহাকাশের অন্তে।’ সামান্য একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস, দেশের কল্যাণ ভাবনায় একটা ভিন্নমত, তাতেই অসীমের পথে শিক্ষার্থী আবরার।
স্ট্যাটাসে ফাহাদ লেখেন, ‘৪৭-এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোনো সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ছয় মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিল। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মোংলাবন্দর খুলে দেয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ ইন্ডিয়াকে সেই মোংলাবন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।
তিনি আরও লেখেন, কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েক বছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চায় না, সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড় লাখ কিউসেক মিটার পানি দেব।’
ভারতকে গ্যাস দেয়ার সমালোচনা করে বুয়েটের এই শিক্ষার্থী লেখেন, ‘কয়েক বছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তর ভারত কয়লা-পাথর রফতানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দেব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে, সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।’
স্ট্যাটাসের শেষে তিনি কবি কামিনী রায়ের একটি কবিতা জুড়ে দিয়ে বলেন, হয়তো এ সুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’
@গত রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, ওই রাতেই হলটির ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
@গণমাধ্যমের কর্মীরা সকাল থেকেই আসছিলেন আবরারদের বাড়িতে। অনেকে ছবি নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আবরারের মা রোকেয়া খাতুন তখন তাঁদের বলেন, ‘আমার ছবি নিয়ে কী করবেন? পারলে যারা আমার ছেলেকে খুন করেছে, তাদের খুঁজে বের করেন। তাদের ছবি তোলেন। পারবে প্রশাসন আমার বাবুকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিতে?
@কান্নারত অবস্থায় ক্ষোভের সঙ্গে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্ বলেন, ‘এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যে ছেলেটা বিকেল ৫টায় ঢাকায় পৌঁছাল, তাঁকে ৮টার দিকে নির্যাতন করার জন্য ডেকে নিয়ে গেল। ছয় ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালাল, এটা অবশ্যই পরিকল্পিত।
@আবরারের চাচা মিজানুর রহমান বলেন ‘এখন অনেকেই রটাচ্ছে, আবরার শিবিরের কর্মী। কিন্তু এটা বানোয়াট, আমরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। হানিফ সাহেবের বিভিন্ন মিটিংয়েও আমরা যাই।’
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নিরীক্ষক কর্মকর্তা ছিলেন। বর্তমানে এলাকায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নিরীক্ষক। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সে ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থাকে। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের কাছেই তার হোস্টেল।
পরিবারের সদস্যরা জানান, আবরার ফাহাদের কোনো শত্রু ছিল না। তাঁদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক। তাঁদের সন্তানকে কেন এভাবে জীবন দিতে হলো, বুঝে উঠতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।
@বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের দাফন আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ১০টায় পৈতৃক ভিটা রায়ডাঙ্গা গ্রামের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে আবরারের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
@সামগ্রিক বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা বিশ্বে নিজেদের উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছি, সারা বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে দাবি করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শান্তির জন্য সেদিনও একটা পুরস্কার পেলেন, তিনি মাদার অব হিউম্যানিটি পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু আমরা কোন সমাজ, কোন রাষ্ট্রে বাস করছি। একজন ভিন্নমত পোষণ করতেই পারেন। তাঁর বিশ্লেষণের সঙ্গে আমরা একমত না হতেই পারি। তাই বলে একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলব—এমন সামাজিক, রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে যদি আমরা বাস করি, তাহলে প্রশ্ন করতেই পারি নিজেদের সভ্য বলে দাবি করছি কীভাবে? আমরা নিজেদের উন্নত বলে দাবি করছি কীভাবে? আমাদের উন্নতিটা কোথা থেকে হচ্ছে? কীভাবে বলতে পারি, মানবতার কোনো একটা শর্তটা পূরণ করছি।’
সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘যাকে মারল সে যুবক, যারা মারল তারাও যুবক। এই বয়সীদের মনে এমন হিংস্র মনোভাব কীভাবে হতে দিলাম। এর জন্য আমরা সবাই দায়ী। এর জন্য আমাদের সমাজ, সামাজিক সংস্কৃতি, রাজনীতি সবই দায়ী। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। সেভাবেই বিষয়টি দেখা উচিত। যারা এই কাজ করেছে তারা যেন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, যাতে তারা অনুতপ্ত হয়। তাদের দেখে যেন অন্যরা বোঝে ভিন্নমতকে আসলে এভাবে দমন করা যায় না।’
জানাজায় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক অংশ নিয়েছেন। চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে পুরো ঈদগাহ ময়দান ভরে যায়।
তথ্যঃ প্রথম আলো সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক।
০৮ ১০ ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২৩