কিছু বলতে চাই। কিছু লিখতে চাই। সময়ই পাচ্ছিনা লেখার মতোন। অার যখন ভাবি যে অামার লেখা কেই বা সময় নষ্ট করে পড়তে যাবে! তখনই বলি থাকুক না কিছু কথা মনের ভেতর! সবাইকে জানিয়েই বা কী হবে! কী বুঝাতে কী বুঝবে কে জানে! হয়তো অাবার কিছুই বুঝলো না, তাহলে তো অামার লেখা সার্থক হতে পারল না! এত ভাবনার মাঝে এটা ভেবেই লিখতে বসেছি যে, অামার লেখাগুলো অামিই বারবার পড়বো। কে পড়লো, কে এখান থেকে কী বুঝলো, কী না বুঝতে পারলো সেটা ভেবে দেখবার ইচ্ছা বা সময় কোনোটিই অামার নেই।
হয়তো অনেকেই এখন ভাবছে অামি খুব দম্ভ নিয়ে লিখি! হয়তো তাই, হয়তোবা না।
লিখতে বসার পর অামি ভাবছি কী নিয়ে লিখবো! এটা সচরাচর হয় না। সবাই কোনো টপিক ঠিক করে লিখতে বসে হয়তো, অামিও তাই। তবে অাজ অার সেটা হলো না। মাথায় একটার পর একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছিল। শেষে বুঝতে পারলাম কিছু লেখা দরকার, তবে কী লেখা দরকার সেটা ঠিক করলাম না।
অাজকের একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। অাজ বাসস্ট্যান্ড এ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা পাগলের কার্যকলাপ দেখছিলাম। সে চিৎকার করে করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট দাবি করছিলো। তবে অাশপাশের কেউ কিন্তু তাকে তার ভুল ধারনাকে ঠিক করে দেবার চেষ্টা করলো না। কারণ তারা জানে, পাগলে কী না বলে! পাগল বলবেই। তাই বলে সেটাকে সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই।
তবে হ্যাঁ, অাজ এখানে যদি অামি অাপনাদের সামনে নিজেকে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো লেখক দাবি করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিই, তাহলে কিন্তু অামি নিঃসন্দেহেই চ্যালেঞ্জটা জিতবো। বিশ্বাস করলেন?
বিশ্বাস না করলে বুঝিয়ে দিই। অামি নিজেকে যা'ই দাবি করিনা কেনো, সেটাতেই অামার জয় নিশ্চিত। কারণ অামি জানি, অাপনারা কেউ এই পোস্টে অামার বিরোধীতা করলে তার কমেন্টখানা অামি অাস্তে করে ডিলিট করে দিলে কেউ কিছু জানবে না। তারমানে শুধু অামার পক্ষের কথাগুলোই থেকে যাবে। অার, বিরোধী বক্তব্য না থাকা মানেই তো অামি জিতে গেলাম!
তবে, এই জয় শুধুই অামার মনকে শান্তনা দেবার জয়। অামার জয়ের কারণ কিন্তু লেখক সমাজে অামার শ্রেষ্ঠত্ব নয়, অামার জয়ের কারণ এই নির্দিষ্ট গন্ডিতে অামার নির্লজ্জ অার পাগলের মতো নিজেকে সবচেয়ে ভালো লেখক দাবি করা, অার অামার পোস্টে কমেন্ট ডিলেট করার ছোট্ট ক্ষমতা। এখন যদি কোনোক্রমে বিরোধী কমেন্টে না দেখে অামাকে কেউ সত্যিই বড় কিছু একটা ভেবে বসে, সে নিতান্তই একজন সহজ সরল বলদ ছাড়া অার কিছুই নয়। এমন একজন খুঁজে পাওয়া'ই হবে অামার পরবর্তীতে কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের অনুপ্রেরণা।
অামাদের সমাজে এমন নাক-কানকাটা অনেক মানুষই রয়েছে। তারা তথাকথিত বড়লোক। তারা অাপনার সামনে দিব্যি নিজেকে সৎ, সত্যবাদী, কর্মঠ, দায়িত্ববান, বিবেকবান দাবি করবে। কিন্তু তারা জানে যে তার চ্যালেঞ্জের বিরোধীতার করবার কেউ সেখানে নেই। সেটাই তার প্লাস পয়েন্ট।
অাপনি তার বিরোধীতা করতেও পারবেন না। অাপনাকে ভাবতে হবে সে পাগল বলেই নিজেকে কিছু একটা দাবি করতে পারছে। এই সামান্য ভাবনা ছাড়া অাপনার অার কিছুই করার থাকবেনা। কারণ সেখানে সে তার কম ক্ষমতা নিয়ে নিজেকে কিছু একটা দাবি করতে পারেনি।
যারা একইসাথে বিত্তবান এবং বড় মনের অধিকারী, কারা কখনোই এমনটি করবে না। কারণ তার বিবেক একটা প্রবাদ জানে, "অাপনারে বড় বলে ডট ডট ডট, লোকে যারে বড় বলে ডট ডট ডট"।
যারা অনেক ছোটকাল থেকে মাটি কাম্ড়ে অনেক কষ্ট করে অনেক বেশি টাকার মালিক হয়, তারা দুই ধরনের হয়। কিছু কিছু মানুষ ভাবে, তারা যেভাবে কষ্ট করেছে, তাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে সেভাবে কষ্ট না করে। তার মতো কষ্ট যাতে অার কেউ না করে।
অার এক ধরনের লোক ঠিক বিপরীত। তাদের সেই ছোটবেলার মাটি কামড়ানোর অভ্যাসটা থেকে যায়। তারা সমাজের রক্তচোষা ভয়ংকর প্রাণি হয়ে উঠে। তারা চুষে নিতে চায় সমাজের সব সম্পদ। তারা এতই নির্লজ্জ হয় যে, তাদেরকে দুটো টাকার লোভ দেখিয়ে অাপনি নিজের পায়খানাও সাফ করিয়ে নিতে পারবেন। তারা সামান্য টাকাও ছাড়তে রাজি হবেনা। অর্থই তাদের কাছে বিধাতা। বিধাতাকে পাবার অাশায় তারা যেকোনো পর্যায়ে নামতে প্রস্তুত।
মজার ব্যাপার হলো অামাদের সমাজের নেতৃত্ব অাবার তারাই দিচ্ছে। তারাই অাজ দেশের বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস অাদালতের দায়িত্বে অাছে। তারা দেশ চালাচ্ছে। তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তৈরি করার দায়িত্ব নিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করাকে তারা তাদের ব্যবসার একটি বিশেষ অংশ হিসেবে ধরে নিয়েছে। তাদের দেখে তরুণ সমাজ অন্তত ব্যবসা হিসেবে স্কুল/কলেজ খোলা ছাড়া অার কিছু শিখতে পারবে বলে মনে করছি না। যখন কেউ দেখবে কাপড়ের ব্যবসার চেয়ে শিক্ষাদান ব্যবসা রমরমা, তখন কি অার কেউ অন্য কোনো ব্যবসাকে নিজের ভবিষ্যতের জন্য বেছে নিবে!
"বাণিজ্যিকভাবে শিক্ষাদান", অর্থাৎ শিক্ষা অার ব্যবসার সম্মিলিত যে রুপ জাতি দেখবে, তাতে তো নিশ্চয়ই "দশে মিলে করি কাজ, পরীক্ষার অাগের রাতে প্রশ্নফাঁস" প্রকল্পের বাস্তব প্রতিফলন দেখাটাই স্বাভাবিক
অাচ্ছা, একটি বিষয় কখনো লক্ষ্য করেছেন কি? সাধারনত একজন শিক্ষক অামাদের কতটুকু সময় পরীক্ষার নম্বর পেতে ব্যয় করে? অার কতটুকু সময় তিনি সৎ, নিষ্ঠাবান, চিন্তাশীল, বিবেকবান হওয়ার প্রতি উৎসাহ দিতে ব্যয় করেন?
অামি মোটেও কোনো শিক্ষকের ত্রুটি হিসেবে এটা বলছি না। অামি বলছি অামাদের সমাজ ব্যবস্থার কথা। যে ছাত্রটি পরীক্ষার অাগের রাতে প্রশ্ন পেয়ে, হলে নকল করে পরীক্ষা শেষে একগাদা নম্বরের মালিক হয়, তার কদর অার দশটা সৎ ছাত্রের চেয়ে ঢের বেশি। কারণ সে একটা মজামূল্যবান কাগজের দলিলের মালিক, নাম তার "সার্টিফিকেট"!
অাসলে প্রতিটা অাদর্শ শিক্ষকরাই চান তার ছাত্র একজন সৎ মানুষ হোক, মেধা বুদ্ধিতে এগিয়ে যাক। কিন্তু সমাজ বর্তমান ব্যবস্থার কারণেই তারা শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর পেতে উৎসাহিত করে চলেছেন। তবে, যারা শিক্ষাদানকে ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে মনে করে এই পেশার সাথে যুক্ত হয়েছে, তাদের ব্যাপারটা ভিন্ন। তারা নিজের পকেট বোঝাই করতে পারলেই পৃথিবী জয় করার অানন্দ পায়। শিক্ষা মন্ত্রনালয় কিছুদিন অাগে এ নিয়ে একটি কথা বলেছিল- "শিক্ষকরাই আসল প্রশ্নফাঁসকারী"।
অামি তার সাথে পুরোপুরি একমত নই। কিছু শিক্ষক নামধারী ব্যবসায়ীরা এধরনের কর্মকান্ডের জন্য দায়ী। যে শিক্ষক মন থেকে একটা ছাত্রের ভালো চাইবে, সে কখনোই তার ছাত্রকে এধরনের কাজ করতে সাহায্য করবেনা। কিন্তু একজন ব্যবসায়ীর জন্য এটা কিছুই নয়। তারা তাদের ব্যবসার বিস্তার ঘটানোর জন্য যেকোনো কিছু করতে পারেন। তাদের কাছে শিক্ষকতা তো টাকা উপার্জনের একটা পেশা মাত্র। শিক্ষাদান যে একটা শিল্প, সাধনার ব্যাপার, সেটি হয়তো তারা জানেনও না।
অামাদের সমাজ ততদিন উন্নতি করতে পারবে না, যতদিন এমন শিক্ষক নামধারী ব্যবসায়ীগুলোর হাতে শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে।অামরা ততদিন পিছিয়ে থাকবো, যতদিন সমাজে অর্থলোভী পিশাচগুলো বেঁচে থাকবে। অামরা ততদিন বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবো না যতদিন না পর্যন্ত অামাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি না হবে।
প্রযুক্তিগত উন্নতির দৌড়ে অনেকদূর এসেছি বলে অনেকে দাবি করতে পারে অামরা সফল, অামরা উন্নতি করেছি। কিন্তু, পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর সাথে অামাদের তুলনা করে দেখুন! তাদের উন্নতি কতটুকু, অার অামাদের উন্নতি সেই তুলনায় কত! প্রতিবছর অামরা দূর্নীতিতে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের পরিচিতি জানান দিই। দুর্নীতি, ঘুষ, গুম, ধর্ষন, হত্যা নিত্যদিনের প্রধান খবর। কেনই বা এসব হবে না? যখন একজন হত্যাকারী কিছু টাকার বিনিময় সাজা থেকে রেহায় পেয়ে যায়, যখন ধর্ষন করার পর ধর্ষনকারী নিজের বাপ/দলের পরিচয় দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে কারাগার থেকে, যখন ঘুষ খাওয়ার পর সেই সাজা থেকে রেহায় পেতেও ঘুষ দিতে হয়, তখন এগুলো তো ঘটবেই!
তারচেয়ে বড় কথা হলো অাজকাল কারো চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট । কী দারুন, তাই নাহ?
অাসলে অামাদের প্রতিটা ক্ষেত্রেই অসৎ মনোভাব ঢুকে গেছে। সবই যেন রক্তে মিশে গেছে অামাদের। এক শ্রেণির পাগলরা অর্থের লোভে যাচ্ছেতাই তাই করে যাবে, অার সবাই সেটা চেয়ে চেয়ে দেখবে- এটাই যেন নিয়মই হয়ে গেছে। সবই চলছে এই নিয়মানুসারে।
অার কতদিন দেশ চালাবে টাকাওয়ালা সন্ত্রাসীরা? অার কতদিন শিক্ষা ব্যাবস্থা চালাবে ব্যবসায়ীরা? অার কতদিন চাকরির ইন্টারভিউ নিবে রাজনীতিবিদরা? অার কতদিন অামরা বাঙালি হিসেবে পৃথিবীর বুকে নতুন নতুন রম্যকাহিনী রচনা করে যাবো?
অাদৌ কি অামরা এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠে সুন্দর সমাজ, তথা সুন্দর দেশ দেখতে পাবো???