এবারের এসএসসি পরীক্ষায় দেশের প্রায় ১৭ লাখ ৮৬ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। ধরতে গেলে এসএসসি পরীক্ষাই হলো জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। কারণ, এর অাগে পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষা থাকলেও তা কেবল পরীক্ষা মাত্র! চাকুরি কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রথমত এসএসসিকেই মূল্যায়ন করা হয়। অার এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সব ফাঁস হয়ে যাচ্ছে অাগের রাতে, কিংবা দুইদিন অাগেই!
২রা ফেব্রুয়ারি বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষা দিয়ে শুরু হয় এবারের পরীক্ষা। প্রথম পরীক্ষায় কারো কাছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের নজির না মিললেও,
০৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা বোর্ডে বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার ৩০ টি বহুনির্বাচনী(MCQ) এবং ৭০ নম্বরের সৃজনশীল অংশ পুরোটাই ফাঁস হয়ে যায় পরীক্ষার অাগের দিন বিকেলেই। রাতারাতি সেই প্রশ্নের উত্তরসহ ছড়িয়ে পরে সর্বত্র। পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীরা বহুনির্বাচনী অংশ মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটেই বৃত্ত ভরাট করে বসে ছিল। তাদের প্রায় সবাই প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে একমত পোষণ করে। পরে বাংলা ২য় প্রত্রের এই প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে শুরু হয় পূর্বের সেই পরিচিত সমালোচনা। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ফের প্রশ্নবিদ্ধ হয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়। এসবের মধ্যেও মাননীয় মন্ত্রী নিরুপায়, নিশ্চুপ। তার ভাষ্যমতে প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
এটা বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নের হুবহু কপি, যা ৪ তারিখ মেসেন্জারে পাওয়া যায়:~
৭ই ফেব্রুয়ারি ইংরেজী ১ম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে নানাজনের নানান মত থাকলেও, সরেজমিনে দেখা যায় এই প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছিল পরীক্ষার ঠিক অাগের রাত্রেই। পরীক্ষার্থীদের অনেকেই এ ব্যপারে মুখ খুলেছে। এই পরীক্ষার দুটো সেট প্রশ্নই অাউট হয়ে যায় এবং তারমধ্যেই একটি প্রশ্ন হুবহু পরীক্ষার প্রশ্নের সাথে মিলে যায়।
এটা ইংরেজী ১ম প্রথম পত্রের প্রশ্নের দুটি সেট এর প্রশ্ন লিখে পাঠানো হয় ৫ তারিখ। পরীক্ষায় খ সেট অাসার কারণে প্রতিটার ২য় প্রশ্নটাই পরীক্ষায় অাসে।
৯ই ফেব্রুয়ারি ইংরেজী ২য় পত্রের পরীক্ষা ছিল। এতে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে যাবার অাগে পরীক্ষার্থীদের মুঠোফোনে সেই প্রশ্ন পড়তে দেখা যায়। সেসব শিক্ষার্থীদের হাসিমুখ নিয়ে কেন্দ্র থেকে বেড়িয়ে অাসার চিত্র দেখে এটা অার বলার প্রয়োজন নেই যে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল কিনা!
এটা ইংরেজী ২য় পত্রের প্রশ্নের মূলকপি, পাঠানো হয় বুধবার রাতে। পরীক্ষা ছিল বৃহস্পতিবার।
এখন পুরো ঢাকা বোর্ডের প্রায় সকল শিক্ষার্থীর পরীক্ষাই হয়ে গেছে ফাঁসনির্ভর। তাদের অনেকেই জানায়, পরীক্ষার প্রতিটা প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তারা প্রতিটা পরীক্ষার প্রশ্নের জন্যই অপেক্ষায় থাকে এবং সারাক্ষণ অনলাইনে থাকে প্রশ্নের অাশায়।
রবিবার গণিত পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানায়, হাতে অারো দুদিন অাছে, তারা এখন পড়ালেখা শুরু করেনি। পরীক্ষার অাগের রাত্রে উত্তরসহ প্রশ্নপত্র অাসলে তা তারা রাতারাতি গিলবে এবং পরের দিন তা হলে গিয়ে তা বমি করে বেড়িয়ে অাসবে।
এখন দেখার অপেক্ষায়, অার কত প্রশ্ন এভাবে ফাঁস হতে থাকবে!!!