১. সিদ্ধ করা, দুর্ভাগা ব্যাক্তি কে একটি জল ভর্তি পাত্রের মধ্যে রাখা হয় । কল্পনা করতে ছিল প্রথমে ঠান্ডা, তারপর একটি অগ্নি পাত্র নীচে দিয়ে দেওয়া হত যাতে পানি ধীরে ধীরে গরম হয় এবং বন্দী জিবন্ত সিদ্ধ হতে থাকে । এই ভাবে এক সময় সে মারা যেত । শাস্তির এই পদ্ধতিটি প্রায় ৫০০,০০০ বছর বয়সী এবং চর্চা হত প্রাচীন চীনে । নিশ্চিত চীন কিছু পাশবিক শাস্তি আবিস্কার করেছিল এবং এটাও বলা হয় যে, মৃত্যুদন্ডের এই পদ্ধতি যুক্তরাজ্যে বিদ্যমান ছিল ১৫০০ শতক পর্যন্ত । জাপান, ফিজি, পাপুয়া নিউগিনিতেও এই শাস্তির তথ্য রয়েছে । এমনকি মোঘল আমলে ১৬৭৫ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলেও ইসলাম গ্রহণ না করায় শিখ নেতা ভাই দয়ালাকে এভাবে হত্যা করা হয় ।
২. ক্রুশবিদ্ধ করা, এই মৃত্যুদন্ড পদ্ধতি যীশু খ্রীষ্টের অনুসরণ করে । একটি ক্রুশকাঠ এ বন্দি ব্যাক্তিকে পেরেক দিয়ে হাত পা কাঠের বা লোহার ক্রুশে দিয়ে উন্মুক্ত স্থানে ছেড়ে দিত । বেশির ভাগ সময় বন্দী সাধারণত রক্ত ঝড়া থেকে মারা যেত । কোন কারণে যদি সে মারা না যেত তবে ক্ষুধা বা তৃষ্ণা দ্বারা মারা যেত । সে সমস্ত বন্দী ছিল ভাগ্যবান, সে শুধু তীব্র ঠান্ডা বা তাপ দ্বারা মারা যেত । ৩৫-৬০ কেজি ওজনের ক্রুশগুলি আসামীকে বয়ে নিয়ে যেতে হত । শুধূ তাই নয় আরও লজ্জা দেয়ার জন্য নগ্ন করা হত । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নির্দেশ না মানার জন্য ব্যারাকে সৈনিকদের এভাবে একদিন ঝুলিয়ে রাখার শাস্তি দেয়া হত ।
৩. জীবন্ত চামড়া তুলে নেয়া বর্তমান ইরাকের পূর্বসূরী আসেরীয়রা বা মেক্সিকোর এযটকরা এই প্রথায় শাস্তি দিত । মধ্যযুগে ১৩০০-১৪০০ সালের দিকে এই ধরণের রেওয়াজ ছিল । এর মত নিষ্ঠুর পদ্ধতি আমি আর শুনিনি । এটি বন্দীকে জীবন্ত রেখে ত্বকের সমগ্র শরীর থেকে চামড়া অপসারণ করা হত । এটি ছিল একটি প্রকাশ্য মৃত্যুদন্ড প্রদান সার্বজনীন পদ্ধতি । মাঝে মাঝে ব্যাথার তীব্রতা বাড়ানোর জন্য লবণ মাখানো হত । এই ভাবে অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করে বন্দি মারা যেত ।
৪. বিশেষ বিশেষ অঙ্গ কর্তনের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড, এই পদ্ধতিতে দেহের প্রধান অঙ্গগুলি কাটা হত বিশেষ করে পেটের । জাপান, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়ামে এই পদ্ধতি চালু ছিল । এটি ছিল সবচেয়ে গুরুতর শাস্তি । তখনকার দিনে চোর এবং ব্যভিচার ছিল বেশি, তাই এই শাস্তি প্রচলন হয়েছিল । ইংল্যান্ডে disembowelment বেশিরভাগই ছিল রেওয়াজ । এই শাস্তি হল অত্যাবশ্যক অঙ্গ আপনার শরীর থেকে এক এক করে ছুড়ি বা ধারালো কোন অস্ত্র দ্বারা অপসারণ করা হত বন্দী মারা না যাওয়া পর্যন্ত ।
৫. বিশেষ চাকা, এই বিশেষ যন্ত্র ক্যাথরিন এর চাকা নামেও পরিচিত ছিল । এ পদ্ধতিতে বন্দি কে একটি বড় চাকার সাথে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রশস্ত ব্যবধানযুক্ত করে আবদ্ধ করা হত এবং তা ঘুরানোর সাথে সাথে অঙ্গ প্রসারিত হত । চাকা ঘোরানোর সময় একটা হাতুড়ি দিয়ে একজন ব্যক্তির শুধুমাত্র ব্যক্তির হাড় এ নিয়মিত বিরতিতে আঘাত করা হত । এই প্রক্রিয়ায় মৃত্যু সাধারণত খুব দীর্ঘ হত । সাধারণত একজন ব্যক্তির প্রতিটি অঙ্গ নষ্ট করা হত । এটা অবশ্যই একটি দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু ।
৬. বিদ্ধ, এ পদ্ধতিতে উলঙ্গ করে বন্দির হাত-পা বেঁধে তার পায়ু পথে সুচালো একটি দন্ড ঢুকিয়ে তাকে তার উপর বসিয়ে দন্ডটি খাঁড়া করে দেওয়া হতো । বন্দী তার নিজের শরীরের ভারে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নেমে যেত । অনেক সময় খুঁটিটির মাথা সুচালো না করে ভোঁতা রাখা হত যাতে হৃৎপিন্ড বা অন্যান্য প্রধান অঙ্গ বিদ্ধ হয়ে তাড়াতাড়ি মারা না যায় । এতে অপরাধী প্রচন্ড কষ্টে মারা যেত । এ পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে অনেক সময় লাগত এমনকি এক থেকে দু’দিন সময়ও লাগত ।
৭. মাথা পিষ্ট মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার এই পদ্ধতিটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উদ্ভাবিত, সুদূর কোনো দেশের পদ্ধতি নয় । এ পদ্ধতিতে বিশাল আকৃতির হাতি তার পা দিয়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাথা থেঁতলে দিতো, যাতে সে ধীরে ধীরে পায়ের চাপ বাড়ায়, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ কষ্ট ভোগ করে মারা যায় ।
৮. পুড়িয়ে হত্যা, বন্দী ব্যক্তি সাধারণত মুত্যু পর্যন্ত অবর্ননীয় যন্ত্রণা ভোগ করত যতক্ষণ না ঘাড় এবং মুখ আগুণ লেগে মারা না যেত । পুড়িয়ে হত্যা করার পদ্ধতি শুরু হয় মূলত জোয়ান অব আর্ককে পুড়িয়ে মারার পর থেকে । সে সময় তার বয়স ছিলো মাত্র ১৯ বছর । ১৪৩১ সালের ৩০ মে তাকে হত্যা করা হয় । জোয়ান অব আর্ক ছিলেন পূর্ব ফ্রন্সের একজন সামান্য কৃষকের ঘরে জন্মানো ব্যাক্তি যিনি ফরাসী সেনাবাহিনীর জন্য বিরল যুদ্ধজয় এনে দিয়েছিলেন । তার নেতৃত্বেই ফ্রান্স তাদের বেহাত হয়ে যাওয়া ভূমি পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয় । তিনি সপ্তম চার্লসের ক্ষমতারোহনের পেছনেও পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছিলেন । অথচ দেশের জন্য এত গৌরব বয়ে আনা সত্ত্বেও তাকে বার্ন্ডুনডিয়ানরা আটক করে ইংরেজদের কাছে বিক্রি করে দেয় । সেখানে একটি খৃষ্টান আদালতের রায়ে তাকে পুড়িয়ে মারা হয় । তার মৃত্যুর ২৪ বছর পর সপ্তম চার্লসের উদ্যোগে পোপ তৃতীয় ক্যালিক্সটাস তার পুনতদন্তে জোয়ানকে নির্দোষ সাব্যস্ত করেন এবং তাকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয় ।
৯. করাতে কেটে মৃত্যুদন্ড, এই পদ্ধতিটি চালু ছিলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ এশিয়াতেও । এক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যাক্তিকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে উল্টো করে দুই পা দুই দিকে ফাঁক করে বেঁধে রাখা হতো । এরপর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির যৌনাঙ্গ বরাবর করাত রেখে দেহকে মাঝ বরাবর কেটে ফেলা হতো । আর উল্টো করে ঝোলানোর কারণে ব্যাক্তিটির মস্তিষ্ক যথেষ্ট পরিমাণ রক্ত পেতো, যাতে তিনি শরীরের মাঝ বরাবর কেটে ফেলার ব্যাথা সম্পূর্ণটাই অনুভব করতে পারে । মধ্যযুগের অমানবিক মৃত্যুদন্ডের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:০৮