হোক সে সামাজিক কিংবা পেশাগত জীবন , যেকোনো প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্নাতক পর্যায়ে সবচেয়ে মানসম্মত শিক্ষা কোনটি?
এই প্রশ্নের উত্তর চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যাবে- ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা ডাক্তারি ।
আর ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর সংখ্যা ৫টি(পাবলিক) এবং এর পাশাপাশি ৩ টি (সরকারী) ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গুলোর মধ্যে রয়েছে –
১। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
২। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং
৩। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইতিহাসে নবীনতম প্রতিষ্ঠান ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০১৩-২০১৪ সেশন থেকে । শুরু থেকে এখানে চলে আসছে নানা অব্যবস্থাপনা ও ব্যপক অনিয়ম। প্রতিষ্ঠানটির জোড়াতালি দেওয়া শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে বিপদজনক ও মারাত্বক আতংকের নাম “ইয়ার ড্রপ” পদ্ধতি। এই অদ্ভুততম পদ্ধতি বাংলাদেশের অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রচলিত নেই। বিরল এই “ইয়ার ড্রপ” পদ্ধতির নিয়ম হচ্ছে –
কোন শিক্ষার্থী যদি ৬ মাসের যেকোনো পর্বের ফাইনাল পরীক্ষায় ২.২০ জিপিএ পেতে অসমর্থ হয়, তবে তাকে পরবর্তি সেশনের শিক্ষার্থীদের সাথে পুনরায় নতুন করে সেমিস্টার শুরু করতে হবে অর্থাৎ কেউ ৬ মাসের সেমিস্টারে ২.২০ জিপিএ এর কম পেলে তার শিক্ষা কার্যক্রম একবছর পিছিয়ে যাবে। উল্লেখ্য ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজি অনুষদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উক্ত অনুষদেও এই “নিয়ম” চালু নেই। আর এই চুড়ান্ত অনিয়মের বলি হিসেবে শিক্ষা জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ভর্তি পরীক্ষার চুড়ান্ত যুদ্ধে জয়ী হয়ে আসা একদল মেধাবী শিক্ষার্থী। উল্লেখ্য ২০১৩-২০১৪ সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৪ জনের কপালেই ইতিমধ্যে জুটেছে এই খরাঁ। বিপর্যস্ত হয়েছে তাদের শিক্ষাজীবন । “ইয়ার ড্রপ” নামক এই অপপ্রথার সবচেয়ে বড় শিকার ২০১৪-২০১৫ সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা। এই সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ১১১ জন প্রথম পর্ব ১ম বর্ষ পরীক্ষায় অবতীর্ন হয়ে ২৭ জন শিক্ষার্থী ঝরে পরে ! কারণ সেই অদ্ভুততম ইয়ার ড্রপ পদ্ধতি যেখানে এক পর্বের ফলাফল বিবেচনা করে ১ বছরের শিক্ষা কার্যক্রম পিছিয়ে দেওয়া হয়। এমনিতেই সেশনজট সহ নান সমস্যায় জরজরিত ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের চলমান শিক্ষা ব্যবস্থায় চার বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্স শেষ করতে ৫ বছরের মত লেগে যাওয়ার কথা, তার উপর এই “ইয়ার ড্রপ” যোগ করেছে মরার উপর খাড়া ঘা । শুধুমাত্র একটি সেমিস্টারে ২.২০ জিপিএ এর কম পেলে দেশের প্রথম সারির মেধাবীদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে একটি বছর যা তাদের শিক্ষাগত তথা মানষিক এবং পেশাগত জীবন বিপর্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট। এই “ইয়ার ড্রপের” প্রশ্নে ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রশাসন বরাবরই নিশ্চুপ এবং নির্লিপ্ত। যদি এভাবেই চলতে থাকে তবে এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের কিংবা প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ কী?
এখনই সময় বিষয়টি নিয়ে ভাবার। তাই এই ব্যাপারে সমমনা ব্লগার ভাই দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি । আমরা সংখ্যায় কম । মাত্র ৩০০ জনের মতো তিন ব্যাচ মিলিয়ে । একটি শক্ত জনমত তৈরির জন্য অনলাইন এক্তিভিস্ট দের সাহায্য জরুরি । মাঠের আন্দোলনে আমরা নেমেছি । সামুর একজন নতুন ব্লগের হিসেবে অনুরোধ, আমাদের অসহায়তা বিবেচনা করে , আপনারাও সাহায্য করবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৯