somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু রাত, ভোর হোক

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসা থেকে না বের হওয়া একটা রোগ। ফিরোজ ইদানীং এই রোগে আক্রান্ত বলে ধারনা । কারন,গত দুইসপ্তাহ যাবত ফিরোজের সাদা চামড়া আকাশের সাদা রোদ মাখেনি । মেসের ছারপকাময় তোশকে এপাশ ওপাশ করা আর মাঝে মধ্যে রোদেলার দু একটা নিয়ম মাফিক ফোনকল রিসিভ করা ছাড়া, অন্যকিছুতে ফিরোজের আগ্রহ নেই ।বাহিরে যেতে ইচ্ছা হয় না। উলটো মেজাজ খিটখিটে হয় । ফিরোজের খিটখিটে মেজাজকে চরমমাত্রা দিতেই কিনা,সকাল সকাল রুমে মেস বুয়ার আগমন । ফিরোজ হাল্কাচালের কথাবার্তা দিয়ে মেজাজ সামলানর চেষ্টা করল ।
বুয়া: মাংস শেষ, মশলাও।
- মশলা একটা বাহুল্যতা। মাংস বিলাসিতা। প্রানী হত্যা, আজ থেকে আমি ভেজিটেরিয়ান
বুয়া: শাক তরকারিও নাই।
- জগু দা বলেছে, গাছেরও প্রান আছে। শাকও খাবো না।
বুয়া: চাউলও তো নাই, চাউলেরও কি প্রাণ আছে ?
- ইয়ে, অনশনে আছি। দেশের সার্বিক অবনতির প্রতিবাদে।
বুয়া: তাও নিচে নাইমা এগুলা কিনবেন না! ও মোর খোদা!

মেসে আরও লোকজন থাকে । সবাই চাকুরীজীবী । ভোরের আলো ফোটার কিছু পরেই কোট প্যান্ট পড়ে যে যার কাজে বেরিয়ে যায়।ফিরোজ কিছুদিন ধরে মেসের একমাত্র বেকার মেম্বার ।তার ঘুম ভাঙ্গে নটা দশটায়। ঘুম ভাঙ্গা মাত্র সে ‘মেস বুয়ার’ একমাত্র অভিযোগ বাক্স হয়ে যায় ।
ফিরোজ মানিব্যাগটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো । মানিব্যাগে যে টাকা আছে ওটা দিয়ে বাজার করা সম্ভম না, তাছাড়া বাজারের দায়িত্ব শুধু ফিরোজের না।
ফিরোজ চোখ পিটপিট করে রোদ মাখায় চোখে। শহরটা রোদে ঝাঁ ঝাঁ করছে ।
আজ থেকে প্রায় একমাস আগের, সেদিনের সেই সকালটাতেও শহরের আকাশে রোদের চাষাবাদ হয়েছিল বেশ ।হোটেলগুলোতে মুরগির স্যুপ বলে একটা জিনিশ পাওয়া যায় , পরোটা দিয়ে খেতে আরাম দায়ক । ফিরোজ পরোটা ছিঁড়ে মুখে দিচ্ছিলো, সেই মুহূর্তে অফিসের কেরানি জ্বালাল মিয়ার ফোন ।
- ফিরোজ , খবর শুনছ ?
- না শুনিনি । কেন ? কি ব্যাপার বলুনতো ভাই ?
- আজ সকালে অফিসরুম খুলে দেখলাম বড়োসাব নোটিস টাঙিয়েছে ।
অজানা আশঙ্কা নিয়ে ফিরোজ চাপা কণ্ঠে বলল, কিসের ? ছাঁটাই ?
- হুম ।
তিন মিনিট ছত্রিশ সেকেন্ডের সেই ফোনালাপে ফিরোজের জন্য একটি দুঃসংবাদের পাশাপাশি জ্বলিল মিয়াঁর অনেক সান্ত্বনার দাওয়াই ছিলো । অফিসের আরও কিছু সহকর্মীর চাকরি হারানোর ফিরিস্তি ছিলো । ছিলো নতুন চাকরি খুঁজে দেবার অনর্থক আশ্বাস । নতুন চাকরির জন্য কিছুদিন ফিরোজের দৌড়ঝাঁপ ও ছিল লক্ষ করার মতো । কিন্তু চাকরি আর হয় নি । শহরের কোম্পানিগুলো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থী চায় , কিন্তু ছাটাই খাওয়া অভিজ্ঞতা , রেলস্টেশনের শূকরের মতো,... এ শহরে অচ্ছুত ।
অথচ ফিরোজের একটা চাকরি খুব দরকার ছিলো এ সময়টাতেই। রোদেলা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে আছে বাড়িতে। ভালবাসার মানুষের পেট ফুরে আরও একটা ভালোবাসা উকি মারার অপেক্ষায় । অথচ এই ভালোবাসাগুলোকে নিরাপত্তা দিতে যেটা দরকার, সেই চাকরিটাই নেই ফিরোজের । ঢাকা শহরে একটা দুই কামরার ভাড়া বাসা , রোদেলার আলুথালু শরীর, পূর্ণিমার বারান্দায় তিনজনকে ভাসিয়ে দেয়া জোছনা...... কতো স্বপ্ন!। ফিরোজের সবগুলো স্বপ্নের গায়ে নির্মম পেরেকের মতো বিধে গেছে একটা ছাটাইয়ের নোটিস ।

ফিরোজ হাঁটছে । তার প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগছে । রোদেলার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলা যেত । কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা করা যাবেনা মোটেই । রোদেলা জানে ফিরোজ এখন অফিসে । চাকরি খোয়ানোর ব্যাপারটা কোনোভাবেই রোদেলাকে বুঝতে দেয়া যাবেনা । কোনোভাবেই না ।

দৃশ্য- ২

- স্যার চ্যাগাবেন!
- স্যার!!
ফিরোজ পার্কের দেয়ালে হেলান দিয়ে ঠিক কতক্ষণ ঘুমিয়েছে বোঝার উপায় নেই । ঘুম ভাঙলো সামনের চা হাতে দাঁড়ানো ছেলেটার কথায় । তাকে চা খাবার কথা বলা হচ্ছে। ফিরোজ উঠে বসলো ।ঠিকঠাকভাবে না শোয়ায়, ঘাড়ের বামদিকে প্রচণ্ড ব্যাথা করছে।
- চা খাবো ।
- সিগারেট লইতেন ন ?- দাও একটা ।
- কুনডা দিমু ?- দাও একটা ।
সিগারেটের আগুন দু আঙ্গুলে চেপে বিল দিতে গিয়েই, ফিরোজ টের পেলো, পিছনের পকেটে তার মানিব্যাগটা নেই । তারমানে ঘুমানোর সময় আলগোছে কেউ মেরে দিয়েছে । ফিরোজ দ্রুতহাতে মোবাইল টা খুঁজল । মোবাইলটা আছে । ফিরোজ চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ।
- সার টেকা নাই ?
- নাহ ।
- নু প্রব্লেম ।আমি সইন্ধা পুরজন্ত লেকে থাহি । কুনু একসুময় দিলেই অইব ।
ফিরোজ কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি দিয়ে চা ওয়ালা ছেলেটার চলে যাওয়া দেখল । ক্রমাগত বিরূপ পরিস্থিতিতে তার চোখ ঝাপসা হতে চলেছে । এটা করতে দেয়া যাবেনা মোটেই । অনাগত সন্তানের বাবা হিসেবে তার শক্ত হওয়াটা জরুরি ।
- হ্যালো ফিরোজ!
- হু
- তুমি কি এখনো অফিসে ?
- হু
- ছেলে হলে কি নাম রাখবে ঠিক করেছ ?
- নাহ
- উফ! তুমি অফিস শেষ করেই নীলক্ষেত থেকে একটা বই কিনবে । ওখানে সুন্দর নামের উপর বই পাওয়া যায় । মেয়ের নাম আমি ঠিক করে ফেলেছি । রাতে ফোন করে জানাব ।
- আচ্ছা ঠিক আছে ।

......লেকে বাতাস বইছে । রোদ মাখানো বাতাসে দুলছে গাছের পাতা । এরমাঝে দাড়িয়ে সদ্য পিতা হতে যাওয়া একজন যুবক কাঁদছে কি কাঁদছে না, তা দেখার কেউ নেই । না দেখাই ভালো । প্রথম দেখায় বোঝা যাবেনা এই ক্রন্দন দৃশ্যের ভেতর কতো গল্প লুকিয়ে আছে । কিছু গল্প লুকিয়েই থাকে আমাদের অনেক দেখার ভিড়ে.........।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৫৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×