ল্যাম্প পোস্টেরা জেগে আছে । নিস্তব্ধ রাস্তায় পরিচিত শব্দ বলতে প্যাডেল রিকশার টুং টাং । ছুটে চলা রিকশার ছায়ায় ছায়ায় কাটাকুটি চলে ।
আমরা চুপচাপ বসে ছায়ার কাটাকুটি দেখি ।
সংসদ ভবনের সামনের জায়গাটা যেন মানুষের হাটবাজার । হৈ- হট্টগোল, চটপটি ফুচকা-ওয়ালাদের ঝাল বিষয়ক দৌড়াত্ব্যে একদম লাটে উঠে যায় সান্ধকালীন রোমাঞ্চ । তাছাড়া এখানে মিনেরেল ওয়াটারের নামে আজেবাজে পানি বিক্রি হচ্ছে । ভেজালে ছেয়ে গেছে নগর ।
ভেজালপূর্ণ নগরের ফুটপাথ ধরে হাটতে হাঁটতে কেমন ক্লান্ত লাগছে ।
--আচ্ছা ধরো, ফুটপাথ চলবে ।
----মানে ?
---এস্কেলেটর যেভাবে চলে, সেভাবে ফুটপাথ চলছে ।কেউ বাসে উঠছে না, ফুটপাথে দাড়িয়েই পৌঁছে যাচ্ছে স্কুল- বিশ্ববিদ্যালয়- কলেজে ।
---কি বলও! ফুচকার দোকানগুলো বসবে কোথায় / ঐ যে, যে মামা থেকে চুলের ক্লিপ কিনি উনি বসবেন কোথায় !
---বড় সমস্যা ! ফুটপাথ চলবে না তাহলে । এভাবেই থেমে থাকুক । বরং আমরাই হেটে যাই ।
নাগরিক রাস্তায় নাগরিক প্রেমকে লোকে ‘ডেট’ বলে ।সে হিসেবে এটা আমাদের শেষ ডেট । আজ বাদে কাল ভোরে আমার নাগরিকতমা শহর ছেড়ে চলে যাবে । ওদের কালো সাদা মতন গাড়িটা ড্রাইভার সহ চলে আসবে ওকে নিতে । একেবারে তল্পি-তল্পা সহ শহর ছাড়ার প্লান ।
ট্রাজিডিক সব গল্প সিনেমায় প্রেমিক-প্রেমিকার শেষ বিদায়ে ‘দা লাস্ট কিস’ বেপারটা থাকে । আমিও একটা দেব কিনা ভাবতে ভাবতে নাগরিক তমার চোখের দিকে তাকালাম । সেই অদ্ভুত ঠাণ্ডা চোখ৷বিকেল দুপুরে কত কবিতা জন্মেছিল এই চোখে সে হিসেব কেউ জানেনা । কবিতাদের বার্থ সার্টিফিকেটের এর প্রচলন করা দরকার । অমুক কবিতা অমুক অমুকের চোখ দেখে জন্ম নিয়েছে এমন তথ্য লেখা থাকবে সেখানে ।
খুব ইচ্ছা ছিল একটা নাগরিক প্রেম করার । একটা প্রেমিকা, শহরের প্যাঁ পু, বাঁকা হাসি দিয়ে রিকশাওয়ালার পেছনে তাকানো, বাসে সিট না পাওয়া যাত্রীদের বাঁকা ইশারা......এসবের চাক্ষুষ টার্গেট হতে চেয়েছিলাম । ইচ্ছে পূরণ হয়েছে ।তবে মনটাও কেমন ভারি হচ্ছে ভীষন ।
অথচ বেপারটা তেমন কিছুনা ।পকেটে নাগরিক প্রেম নিয়ে ঘুরছিলাম এতদিন।এখন খালি পকেটে ঘুরতে হবে।এইতো !
- শোনও, তুমি কিন্তু চিঠি লিখবে,হু বলে দিলাম ।
- আমি স্বভাব চিঠি লেখক ।
- দেখি, লেখো তো এখুনি ।
প্রিয় নাগরিক তমা,
এমন বিদায়ে হাতটা তুমি ধরতেই পারতে । আমি হয়ত এতটা নোংরা নই!
ইতি
তোমার একান্ত প্রেমিক নাগরিক ।
আমার চিঠি লেখা হয়নি । তবে মেয়েটার কাছথেকে একটা চিঠি এসেছিল । চিঠিতে অপরিণত সম্পর্কটা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলার যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।
নগরটা সেদিন অসম্ভব ফাকা ফাকা লাগছিল । আকাশটা ছিলো খটখটে শুকনো ।অথচ দুফোটা বৃস্টির খুব দরকার ছিলো সেদিন ।
চিঠির প্রত্যুত্তরে আমি অনেকগুলি চিঠি ভেবেছি, লেখেছি..... মাথার ভেতরে ।
স্বভাব চিঠি লেখকরা হয়তো বড্ড বেখেয়ালি হয় । তাদের সিরিয়াস টাইপের চিঠি গুলো বেখেয়ালেই হারিয়ে যায় । রয়ে যায় মহাকালের এটাচমেন্টে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০১