বিস্তারিত বিডি নিউজ২৪ থেকে নিচে তুলে ধরা হলো:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়ে ৩৬ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা
চট্টগ্রাম, জুলাই ৩১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্টের সভাপতিসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্বাবিদ্যালয় প্রশাসন।
এর মধ্যে ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি তসলিম উদ্দিন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি প্রবাল কান্তি মজুমদার ও ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি দীপঙ্কর ঘোষকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
শিক্ষকদের কর্তব্য কাজে বাধা দান ও সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে ভাঙচুরের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. শাহ আলম বাদি হয়ে হাটহাজারী থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হাটহাজারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কাশেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এ ঘটনার তদন্ত চলছে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।"
তিনি জানান, মামলার এজাহারে ১১ জন ছাড়া অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- আইন বিভাগের (২০০৭-০৮) শিক্ষার্থী ওবা থোয়াই মারমা, ইতিহাস (২০০৮-০৯) বর্ষের তবারক হোসেন, চারুকলার (২০০৪-০৫) আসাদ মনি হোসাইনি, অর্থনীতির (২০০৬-০৭) শাহরিন ফেরদৌসি, ব্যবস্থাপনার (২০০৭-০৮) আফরিন ফেরদৌসি, গণিত বিভাগের (২০০৩-০৪) নুসরাত জাহান, দর্শনের (২০০৭-০৮) শফিকুল ইসলাম, ইতিহাসের (২০০৮-০৯) সুজন আহমেদ।
আসামিদের বেশিরভাগই ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন ও প্রগতির পরিব্রাজক দল (প্রপদ) এর সদস্য।
নিজেদের রক্তে লিখে বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহার দাবি
চট্টগ্রাম, জুলাই ৩১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- নিজেদের রক্ত দিয়ে দেয়ালে লিখে বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের চতুর্থ দিন শনিবার দুপুরে শতাধিক শিক্ষার্থী সিরিঞ্জ দিয়ে শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনের দেয়ালে লিখে দিয়েছে- 'বর্ধিত বেতন ফি প্রত্যাহার কর, সুজনের বহিস্কারাদেশ বাতিল কর।'
এছাড়া বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জনসহ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট করেছে। প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়। শনিবারও কোন বিভাগে ক্লাশ হয়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দুপুর ২ টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর স্টেশনে এসে সামনের সড়কের দুইপাশ অবরোধ করে রাখে। প্রায় এক ঘন্টা সড়ক অবরোধ শেষে শিক্ষার্থীরা ষোলশহর ২ নম্বর গেট মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এতে নগরীর গুরুত্বপূর্ন চারটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে য়ায়।
ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা শুরু করেন।
রাজনীতিসহ সকল আন্দোলন কর্মসূচির ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা ভেঙ্গে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্য কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে রাখে। তালা ঝুলিয়ে দেয় বাণিজ্য অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও কলা অনুষদ ভবনে। ফলে ক্যাম্পাস কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
দুপুর দেড়টায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশন চত্ত্বরে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
বর্ধিত বেতন ফি প্রত্যাহার, বহিস্কৃত শিক্ষার্থীর বহিস্কারাদেশ বাতিল ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ-এই তিনদফা দাবি তিন দিনের মধ্যে পূরণের জন্য মঙ্গলবার উপাচার্যকে স্বারকলিপি দিয়েছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
দাবি পূরণের তিন দিনের সময়সীমা শনিবার শেষ হয়।
শহরে সড়ক অবরোধ ও রক্ত দিয়ে দেয়ালে লিখন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আন্দোলনকারীদের কোন দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে না। তারাই জানে তারা কি করছে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু কিছু বিভাগে ক্লাশ-পরীক্ষা হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেছেন সহকারী প্রক্টর চন্দন কুমার পোদ্দার।
তিনি বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায়নি। তাদেরকে ক্লাশে ফিরে যেতে বলা হচ্ছে।"
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী প্রবাল মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমাদের রক্ত দিয়ে আমরা দাবির কথা জানিয়েছি। বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।
বর্ধিত বেতন ও খাত বিহীন ফি প্রত্যাহারের দাবিতে গত সোমবার থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি চালিছে যাচ্ছে। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে সোমবার আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে দুবছরের জন্য বহিস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ থেকে রাজনৈতিক ও সকল ধরণের আন্দোলন কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে।
পরবর্তী কর্মসূচীঃ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববার অবরোধের ডাক দিয়েছে বর্ধিত বেতন-ফি বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা।