হিমালয় এক অপরূপ মৌহ নিয়ে সবায়কে নিজের দিকে ডাকে,যদিও আমি ঠিক সেই মৌহের টানে যাই কিনা আজও বুঝে উঠতে পারিনি। পাহাড়ের ব্যাপারে আমার জানা খুবই কম,এসব নিয়ে পড়াশুনা আমার সীমিত। হঠাত ভালো লাগলো আর চলে গেলাম জিনিসটা এরকম ই আমার জন্যে। এ বছরে আবার হিমালয় এ পা ফেলবো ভাবিনি, হঠাত ই প্রেমে পড়া রুদুগাইরার। চটপট প্লান করে ফেলেছিলাম, আর আমার হিমালয় এর সঙ্গী তারেক এবারো আমার সাথে। রুদুগাইরা হলো ভারতের উত্তরাখন্ড এর গাঙ্গোত্রি রেঞ্জের একটি চুড়া, যার উচ্চতা হলো ৫৮১৯ মিটার/ ১৯০৯১ ফিট।
বরাবরের মতো হরিদ্বার পর্যন্ত পৌঁছানোর গল্প এখানে করবোনা। গত ৬ ই অক্টোবর সকাল ৬ টার গাড়িতে করে আমি,তারেক আর কলকাতার সায়ান্তান দা হরিদ্বার থেকে গাঙ্গোত্রি এর উদ্দেশে রউনা হই। সারাদিন কঠিন জার্নি করে রাত ৮ টা নাগাদ আমরা পৌছাই গাঙ্গোত্রি। আগেই এখানে উপস্থিত ছিলো আমাদের আরো টিমমেট সান্তনু দা,নাবিন,সঞ্জয় দা,নান্দান,রাজদেব,সুমন পল আর আমাদের লিডার সুমন দা( ট্রেক অ্যান্ড ফ্লাই হিমালয়া এর প্রতিষ্ঠাতা)। এই এক্সপেডিশন এ আমরা সর্বমোট ১০ জন অংশগ্রহণ করেছি,যার মধ্যে আমরা বাংলাদেশ থেকে ৩ জন আর ভারত থেকে ৭ জন ছিলো। যদিও জয়নাব শান্তু আপু বাক্তিগত কাজের জন্যে আমাদের সাথে প্রথম দিন থেকে যোগ হতে পারেন নি।
৭ ই অক্টোবর আমরা গাঙ্গোত্রি থেকে ট্রেক শুরু করি। সায়ান্তান দা জ্বরের জন্যে গাঙ্গোত্রি তে থেকে যায়। শান্তু আপু এখনো পৌছাইনি তাই উনারা পরের দিন এক সাথে শুরু করবে। গঙ্গার পাড় ধরে শুরু করি আমাদের ট্রেকিং। আজকে আমাদের গন্তব্য ৭ কিলোমিটার দুরের নালা ক্যাম্প। গাঙ্গোত্রির ফকফকা আকাশ আমাদের সাক্ষী আজ।
ঘন এক জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে শুরু আমাদের পথ চলা, এই গহিন বনে একা পথ চলার বারণ রয়েছে যেহেতু যেকোনো সময় ভালুক এর সামনে পরে যেতে পারি।
পুরো পথ টাতেই খুব সচেতন থাকতে হয়েছে কারন ডান পাশেই থাকে খরস্রোতা গঙ্গা, যা প্রায় ২০০-৩০০ ফিট নিচে হবে। অসচেতনার দরুন যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। হাটার রাস্তা টাও খুব একটা প্রশস্ত নয়। প্রায় ২ ঘন্টা যাওয়ার পর একটা কাঠের ব্রিজ পেরিয়ে এক নতুন জগতের দেখা।
অসাধারন সুন্দর পথ ধরে এবার আমাদের পথচলা। এবারের জঙ্গল টার রঙ ই ভিন্ন রকমের, ভোজপত্র গাছে ভরা। এই গাছের বাকল ব্যাবহার করা হতো লেখার কাজে প্রাচীন যুগে। পথ টা অসাধারন, যার সৌন্দর্য হয়তো মুখে প্রকাশ করা খুবই কঠিন। সাথে আছে কিছু নান্দনিক ঝর্না।
নালা ক্যাম্প পৌঁছানোর একটু আগেই একটা বিশ্রী রকমের ল্যান্ড স্লাইড জোন পেরুতে হয়েছে যা ছিলো মারাত্মক কঠিন, ছোট ছোট পাথর গুড়া গুলোর মধ্যে যতটুকু না উঠি তার থেকে বেশি নিচে নেমে যেতে হচ্ছিলো। তার উপর এই ল্যান্ড স্লাইড এর মধ্যেও বেয়ে চলছিলো এক বিশালাকার ঝর্না, যা নিচের গর্তে গিয়ে মিলেছে রুদুগাইরা নালার সাথে। কোনরকমে পেরিয়েছি এই যায়গাটুকু।
বিকেল ৩ টা নাগাদ পৌঁছেছি আমাদের প্রথম ক্যাম্প সাইট নালা ক্যাম্প এ, রুদুগাইরা নালার পাশে ছোট্ট এই ক্যাম্প সাইট টি ও অপরূপ। দুপুরের খাবার খেয়ে গিয়েছিলাম একটু উপরে সেখান থেকে পুরো কাম্পের একটা ছবি তুলেছিলাম।
প্রচন্ড বাতাসের কারনে ঠাণ্ডা দিগুন হয়ে গেছিলো, বাইরে থাকা বড় দায়। কিচেন টেন্ট ই সবার ভরসা। রাতের খাবার তারাতারি খেয়ে তাবুতে ঢুকে শুধু ঘুমাতে হবে আজ। কাল আরও লম্বা একটা দিন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে।
চলবে .......
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১১