আমি স্বপ্ন দেখেছি পাংগারচুলার,এভারেস্টের স্বপ্ন দেখিনি ৷ ১ টি বছর ধরে মনের মধ্যে স্বপ্ন বুনেছি,অপেক্ষা করেছি ৷ ৫ বন্ধু মিলে একসাথে যাবো,কিন্তু অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে আমরা কেবল দুজন ই রওনা দিয়েছি ৷
যাওয়ার দুদিন আগ পর্যন্ত টাকা ম্যানেজ হয়নি, সেই মুহুর্তে তানজীল এর ৮০০০ টাকা আমাদের দুজনের জন্যে বুস্ট হিসেবে কাজ করেছিলো ৷ ছিলো আরো সাথে আনজুম,আজিম ভাই আর তন্ময় এর সাহায্য ৷
আমার সফর নিয়ে আমার থেকেও বেশী কল্পনা করে রেখেছিলো তন্ময় ৷
এবারে আর হাজার কিলো দূরের হরিদওয়ার যাওয়ার কল্প কাহিনী লেখবোনা ৷ উত্তরাখন্ডে প্রবেশ টা হয়েছিলো আমার খারাপ ভাবে ৷ প্লাটফর্মে পরে গিয়ে হাত,মাজা ও পা বেশ ভালো ভাবেই কেটেছে ৷ এই লুলা ভাবেই শুরু করতে হয়েছে জীবনের সবচেয়ে প্রতিক্ষিত ট্রেক ৷
সফরসঙ্গী আমার আর তারিক ভাইয়ের জুটি খারাপ না,যদিও গত লাদাখ ট্রিপে খাবার নিয়ে একটু মন কষাকষি হয়েছিলো ৷ কিন্তু সেই তারিক ভাই আর আমিই এবার শুধু শসা আর বিস্কুট খেয়েও পুরো এক-দুটো দিন কাটিয়ে দিয়েছি ৷ সময়ে-অসময়ে কেবল আমরা দুজনই, একে অপরের ৷
হরিদওয়ার পৌছেছি সকাল ৯ টায় ৷ ততক্ষনে আমাদের ছেড়ে TTH টিম চলে গেছে জোসিমাঠ এর উদ্দেশ্যে ৷ আবারো একটি ধাক্কা, বাস স্ট্যান্ড ঘুরে বের করি আজ আর জোসিমাঠের কোনো বাস নেই ৷ রুদ্রপ্রয়াগ এর বাসে চড়ে যাই সাথে সাথে ৷ গঙ্গার পাশ ধরে বাস এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় ঘন্টা খানেক পরে পৌছেছি রিশিকেশ শহরে ৷ এডভেঞ্চার একটিভিটিজ এর জন্যে বিখ্যাত শহর রিশিকেশ ৷ উপর থেকে দেখা যাচ্ছে নিচে গঙ্গা তে শ'খানেক রাফটিং বোট রেডি,কিন্তু নদীতে কোনো স্রোত নেই ৷
দুপুর নাগাদ আমরা পৌছাই দেবপ্রয়াগ এ ৷ এখানে দুটো নদী এসে মিলেছে, আলাকনন্দা ও ময়ুর ৷
বাস শ্রীনগর পেরিয়ে রুদ্রপ্রয়াগ পৌছেছে প্রায় শেষ বিকেলে ৷
জোসিমাঠ এখনো ১১০ কিলো দূরে ৷ আবার আরেক বাসে চড়ে বসলাম ৷ ১ ঘন্টা পর সেই বাস আমাদের নামিয়ে দিলো কার্নপ্রয়াগে ৷
এদিকে বিয়ের হিরিক লেগেছে, সব গাড়ি রিজার্ভ ৷ রাত নেমেছে ছোট শহরটিতে, জোসিমাঠ এখনো অনেক দূরে ৷ কাল থেকে আবার আমাদের ট্রেকিং শুরু করতে হবে ৷
হঠাত একটা গাড়ি পেলাম, ১০ জনের গাড়ীতে ১৪ জন বসে কোনোমতে আসলাম চামোলি তে ৷ রাত ৯ টা বেজেছে , গন্তব্যে এখনো পৌছানো হয়নি ৷ আর কোনো উপায় না পেয়ে জ্বীপ একটা ১৮০০ রুপী তে রিজার্ভ করে রওনা হলাম জোসিমাঠ এর উদ্দেশ্যে ৷ কিন্তু সে আবার যাবেনা আমাদের রিসোর্ট পর্যন্ত ৷ সে ভয় পায় এতো রাতে অলির রাস্তা নাকি খারাপ! চার পায়ের জানোয়ারের ভয় তার ৷
কিছুদূর যাওযার পর আমরাই ভয় পেয়ে যাই, দূরে সব বিশালাকার পাহাড় গুলোতে আলো ভাসছে ৷ ভালো করে নিচে তাকিয়ে দেখলাম নিচে জলবিদ্যুত কেন্দ্র ৷ কেমন যেনো ভিদঘুটে লাগছিলো পাহাড় গুলো কে ৷ রাত ১১ টায় পৌছেছি আমরা জোসিমাঠ শহরে ৷ এখান থেকে আমাদের রিসোর্ট আরো ৭ কিলো উপরে ৷ এবার আমাদের জিও টিম আমাদের গাড়ি করে রিসিভ করে অলি রিসোর্ট পর্যন্ত নিয়ে গেছে ৷
এখানে এসে এক অন্যরকম আবহাওয়া! সারাদিন তপ্ত রোদে কাটিয়ে এখানে এসেই দেখি তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি ৷ শরীর থরথর করে কাপছে শীতে ৷ সারাদিন কোনো খাবার জোটেনি ৷ কিন্তু এখন আমাদের জন্যে খাবারের অভাব নেই ৷
মাংস,ভাত,ডাল,আলু গোভী,রুটি! ! পেট পুরে খেয়ে নিয়ে আজকের মতো ঘুমানোর পালা ৷
কাল থেকে শুরু হবে পাংগারচুলার দিকে হাটা ৷
চলবে.....
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৩১